খুলনা নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মাদকের বিস্তার ঘটেছে। বারবার বলার পরও পুলিশ প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অভিযান চালাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি, মাদকের বিস্তার রোধ ও মাদকমুক্ত খুলনা বিনির্মাণে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন) বলেন, খুলনা মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের শিকার, যার প্রধান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্যমতে, আসক্তদের ৭০ শতাংশই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাদের বয়স ১৪ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, নগরে প্রতিনিয়ত অভিনব কৌশলে মাদকের কেনাবেচা চলছে এবং আড়ালে থাকা শক্তিশালী চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক নামক ব্যাধি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। শিল্প ও বন্দর নগর খুলনা আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে হামলা, মামলা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। মাদকাসক্তির ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, জখম, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বাড়ছে।

মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম (মনা) বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময় পুলিশ প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন, খুলনার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনো বিশেষ অভিযান চালানো হয়নি।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশের কাছে এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কোন ওয়ার্ডে কারা মাদক ব্যবসা করে, তাদের তালিকা আছে। আমাদের মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো না কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তা না হলে বারবার অভিযোগ করার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।’

বিফ্রিংয়ে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার বিকেলে ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিত্রালী বাজার থেকে মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা; রোববার ৯, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বৈকালী বাজার থেকে শোভাযাত্রা; সোমবার নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার বিএনপি কার্যালয় থেকে ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শোভাযাত্রা এবং মঙ্গলবার ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা দৌলতপুর রেলিগেট এলাকা থেকে শুরু হবে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি থানার প্রতিটি ওয়ার্ডে এই কর্মসূচি পালনের পর থানা ও কেএমপি ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা মনে করি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেই হোক, এমনকি যদি আমাদের দলেরও কেউ হয়, আমরা কোনো ছাড় দেব না।’

ব্রিফিংয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ, সদর থানা বিএনপির সভাপতি কে এম হুমায়ুন কবীর, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, খালিশপুর থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ইমাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো.

জুলফিকার আলী হায়দার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) খোন্দকার হোসেন আহম্মদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর ব এনপ র স ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ