খুলনায় মাদকের বিস্তার রোধে বিএনপির ৪ দিনের কর্মসূচি, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
Published: 9th, May 2025 GMT
খুলনা নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মাদকের বিস্তার ঘটেছে। বারবার বলার পরও পুলিশ প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অভিযান চালাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি, মাদকের বিস্তার রোধ ও মাদকমুক্ত খুলনা বিনির্মাণে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
লিখিত বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন) বলেন, খুলনা মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের শিকার, যার প্রধান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্যমতে, আসক্তদের ৭০ শতাংশই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাদের বয়স ১৪ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, নগরে প্রতিনিয়ত অভিনব কৌশলে মাদকের কেনাবেচা চলছে এবং আড়ালে থাকা শক্তিশালী চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক নামক ব্যাধি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। শিল্প ও বন্দর নগর খুলনা আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে হামলা, মামলা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। মাদকাসক্তির ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, জখম, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বাড়ছে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম (মনা) বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময় পুলিশ প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন, খুলনার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনো বিশেষ অভিযান চালানো হয়নি।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশের কাছে এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কোন ওয়ার্ডে কারা মাদক ব্যবসা করে, তাদের তালিকা আছে। আমাদের মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো না কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তা না হলে বারবার অভিযোগ করার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।’
বিফ্রিংয়ে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার বিকেলে ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিত্রালী বাজার থেকে মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা; রোববার ৯, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বৈকালী বাজার থেকে শোভাযাত্রা; সোমবার নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার বিএনপি কার্যালয় থেকে ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শোভাযাত্রা এবং মঙ্গলবার ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা দৌলতপুর রেলিগেট এলাকা থেকে শুরু হবে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি থানার প্রতিটি ওয়ার্ডে এই কর্মসূচি পালনের পর থানা ও কেএমপি ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা মনে করি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেই হোক, এমনকি যদি আমাদের দলেরও কেউ হয়, আমরা কোনো ছাড় দেব না।’
ব্রিফিংয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ, সদর থানা বিএনপির সভাপতি কে এম হুমায়ুন কবীর, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, খালিশপুর থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ইমাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর ব এনপ র স ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু
বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যখাতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য পুরস্কৃত করেছে দেশের শীর্ষ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।
প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় ২৭ দেশের ৩৯ জনকে ‘টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। সেই তালিকায় রয়েছেন লাল তীর সীডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বীজ, সবজি ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছেন মিন্টু। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি ‘লাল তীর সীডস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিকভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন (আইএসটিএ স্বীকৃত) বীজ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশে একমাত্র। মিন্টুর উদ্যোগে দেশে হাইব্রিড ও উন্নত বীজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয় এবং সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আসে।
উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু মোটাতাজাকরণে সীমেন প্রযুক্তির প্রচলনও তারই হাত ধরে শুরু হয়।
পুরস্কার প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি সবসময় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে অবদান রাখতে চাই। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৩৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২১–২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে আয়োজিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাতিক সংলাপে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন খাদ্য, পুষ্টি ও জলবায়ুভিত্তিক সংকটের সম্মুখীন। এই ৩৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি সাহসী পরিবর্তনকারী, যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।’
এ বছর মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও মানবতাবাদীরা। যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।