দেড় বিঘা জমিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আখ গাছ। আকারে লম্বা এই আখের বাইরের অংশ দেখতে কালো ও খয়েরি। দেশীয় আখের মতো হলেও এর কাণ্ড নরম। হাত দিয়েই উঠানো যায় ছোবড়া। খেতে মিষ্টি ও রস বেশি হওয়ায় লাভও বেশি। তবে, এই আখ চিনি বা গুড় উৎপাদনের জন্য নয় বরং চিবিয়ে খাওয়ার জন্য।
ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ করেছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ ভূঁইয়া। উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে প্রথমবারের মতো এই জাতের আখ চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। সামুদ ভূঁইয়াকে দেখে এখন আশপাশের কৃষকরাও কালো জাতের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ।
মাসুদ ভূঁইয়া জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে কালো জাতের আখ চাষে আগ্রহী হন তিনি। টাঙ্গাইল থেকে আখের এই জাতটি সংগ্রহ করেন। দেড় বিঘা জমিতে কালো জাতের আখ চাষে এখন পর্যন্ত লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। প্রথম বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার আখ বিক্রির আশা করছেন মাসুদ ভূঁইয়া। তবে দ্বিতীয় বছর লাভের হার বাড়বে। কারণ প্রথম বছর সব কিছু নতুন করতে হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এক কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ
‘স্মার্টবয়-২’ তরমুজ চাষে সফল দুই বন্ধু
তিনি বলেন, “এই জাতের আখ ১২ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। একবার বীজ রোপণ করলে তিন-চার বছর আর নতুন করে বীজ রোপণ করতে হয় না। কেটে ফেলা গোড়া থেকে নতুন করে চারা গজায় এবং আখ হয়। ফিলিপাইনের কালো-খয়েরি রঙের আখ চাষের পর অনেকেই বীজ কেনার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”
রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক নেহার উদ্দিন শেখ বলেন, “গত বছর মাসুদ ভূঁইয়া দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। আমি মনে করেছিলাম, খুব বেশি সুবিধাজনক হবে না। আখ খেয়ে দেখেছি তা খুব নরম এবং মিষ্টি।”
নিজের আখ ক্ষেতে মাসুদ ভূঁইয়া
তিনি বলেন, “এলাকার ছোট বড় সবােই মাসুদ ভূঁইয়ার ক্ষেত থেকে খুচরা দরে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কাছের এবং দূরের পাইকাররা তার কাছে গিয়ে পুরো ক্ষেত কিনে নেওয়ার জন্য দরদাম করছেন।”
একই গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “মাসুদ ভূঁইয়া কালো জাতের আখ চাষ করেছেন। আখ চাষ ও এর উৎপাদন গ্রামের অনেকে কৃষকের ভালো লেগেছে। তারা এই জাতের আখ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। আমি মাসুদ ভূঁইয়ার কাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করে আখ চাষ শুরু করেছি।”
মোক্তারপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান রুবেল বলেন, “মাসুদ ভুঁইয়া কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ শুরু করেছেন।”
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.
তিনি বলেন, “কালীগঞ্জে কৃষক মাসুদ ভূঁইয়া টাঙ্গাইল থেকে ফিলিপাইনের আখের কাটিং সংগ্রহ করেছেন। যেহেতু এটি মিষ্টি নরম ও রসালো তাই এতে মাজরা পোকার একটা সমস্যা থাকে। মাসুদ ভূঁইয়া আমাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। তার কাছ থেকে কাটিং নিয়ে আশেপাশের অন্য কৃষকরাও এই ফিলিপাইনের আখ চাষ করছেন।”
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “উপজেলায় এবারই প্রথম ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে এই আখ চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং কৃষক মাসুদ ভূঁইয়াকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই আখ চাষে কৃষকরা কম খরচে লাভবান হতে পারবেন। এজন্য কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত ফসল ফ ল প ইন র চ ষ কর র জন য কর ছ ন করছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪