Risingbd:
2025-11-06@23:53:27 GMT

কালো জাতের আখ চাষে সফল মাসুদ

Published: 9th, May 2025 GMT

কালো জাতের আখ চাষে সফল মাসুদ

দেড় বিঘা জমিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আখ গাছ। আকারে লম্বা এই আখের বাইরের অংশ দেখতে কালো ও খয়েরি। দেশীয় আখের মতো হলেও এর কাণ্ড নরম। হাত দিয়েই উঠানো যায় ছোবড়া। খেতে মিষ্টি ও রস বেশি হওয়ায় লাভও বেশি। তবে, এই আখ চিনি বা গুড় উৎপাদনের জন্য নয় বরং চিবিয়ে খাওয়ার জন্য।

ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ করেছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ ভূঁইয়া। উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে প্রথমবারের মতো এই জাতের আখ চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। সামুদ ভূঁইয়াকে দেখে এখন আশপাশের কৃষকরাও কালো জাতের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ।  

মাসুদ ভূঁইয়া জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে কালো জাতের আখ চাষে আগ্রহী হন তিনি। টাঙ্গাইল থেকে আখের এই জাতটি সংগ্রহ করেন। দেড় বিঘা জমিতে কালো জাতের আখ চাষে এখন পর্যন্ত লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। প্রথম বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার আখ বিক্রির আশা করছেন মাসুদ ভূঁইয়া। তবে দ্বিতীয় বছর লাভের হার বাড়বে। কারণ প্রথম বছর সব কিছু নতুন করতে হয়েছে।

আরো পড়ুন:

এক কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ

‘স্মার্টবয়-২’ তরমুজ চাষে সফল দুই বন্ধু

তিনি বলেন, “এই জাতের আখ ১২ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। একবার বীজ রোপণ করলে তিন-চার বছর আর নতুন করে বীজ রোপণ করতে হয় না। কেটে ফেলা গোড়া থেকে নতুন করে চারা গজায় এবং আখ হয়। ফিলিপাইনের কালো-খয়েরি রঙের আখ চাষের পর অনেকেই বীজ কেনার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”

রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক নেহার উদ্দিন শেখ বলেন, “গত বছর মাসুদ ভূঁইয়া দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। আমি মনে করেছিলাম, খুব বেশি সুবিধাজনক হবে না। আখ খেয়ে দেখেছি তা খুব নরম এবং মিষ্টি।” 

নিজের আখ ক্ষেতে মাসুদ ভূঁইয়া 

তিনি বলেন, “এলাকার ছোট বড় সবােই মাসুদ ভূঁইয়ার ক্ষেত থেকে খুচরা দরে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কাছের এবং দূরের পাইকাররা তার কাছে গিয়ে পুরো ক্ষেত কিনে নেওয়ার জন্য দরদাম করছেন।”        

একই গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “মাসুদ ভূঁইয়া কালো জাতের আখ চাষ করেছেন। আখ চাষ ও এর উৎপাদন গ্রামের অনেকে কৃষকের ভালো লেগেছে। তারা এই জাতের আখ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। আমি মাসুদ ভূঁইয়ার কাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করে আখ চাষ শুরু করেছি।”

মোক্তারপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান রুবেল বলেন, “মাসুদ ভুঁইয়া কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ শুরু করেছেন।” 

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.

আক্তারুজ্জামান বলেন, “ব্ল্যাক সুগার কেইন ফিলিপাইনের চিবিয়ে খাওয়া আখের একটি জাত। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এই জাতের আখ চাষ হচ্ছে। এটি খুব নরম, মিষ্টি ও রসালো।” 

তিনি বলেন, “কালীগঞ্জে কৃষক মাসুদ ভূঁইয়া টাঙ্গাইল থেকে ফিলিপাইনের আখের কাটিং সংগ্রহ করেছেন। যেহেতু এটি মিষ্টি নরম ও রসালো তাই এতে মাজরা পোকার একটা সমস্যা থাকে। মাসুদ ভূঁইয়া আমাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। তার কাছ থেকে কাটিং নিয়ে আশেপাশের অন্য  কৃষকরাও এই ফিলিপাইনের আখ চাষ করছেন।” 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “উপজেলায় এবারই প্রথম ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে এই আখ চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং কৃষক মাসুদ ভূঁইয়াকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই আখ চাষে কৃষকরা কম খরচে লাভবান হতে পারবেন। এজন্য কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত ফসল ফ ল প ইন র চ ষ কর র জন য কর ছ ন করছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।

এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।

নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।

এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়

১. গোসল করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)

জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)

এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)

খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।

৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)

৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়

১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা

নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)

অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।

২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)

জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।

৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা

মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।

৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা

খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)

৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা

জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।

জুমার দিনের তাৎপর্য

জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।

এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।

অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।

অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।

আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ