পাতে খাবার তুলে দিতে না পেরে মাকে কত দিন কাঁদতে দেখেছি, তাঁর কারণেই আজ আমি চিকিৎসক
Published: 10th, May 2025 GMT
মাকে নিয়ে একবার সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম। পড়ন্ত বিকেল। সৈকতে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বিশাল জলরাশির ওপারে সূর্য ডুবছে। অপলক দৃষ্টিতে সূর্যাস্তের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন মা। সেই সময়, সেই দিনটা আমার কাছে আজও অমলিন। কি যে ভালো লাগছিল সেই মুহূর্ত, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
আমার মা সালেহা বেগমের বয়স এখন ৭০। মাকে নানাবাড়িতে সবাই আদর করে ডাকে ‘সালু’। নানা ফজলুর রহমান প্রধানের চার মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে তিনি সবার ছোট, সবার আদরের।
আমার দাদার বাবা হাজি জব্বার আলী ছিলেন কুমিল্লার দাউদকান্দির ঐতিহ্যবাহী এক মুসলিম পরিবারের সদস্য। নামডাকওয়ালা জব্বার আলীর ছোট নাতি আমার বাবা আবদুল গণি। তাই মায়ের সঙ্গে বাবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে নানাবাড়ির কেউই দ্বিমত করেননি। বিয়েটা হয়েছিল বেশ ধুমধাম করে।
বাবা ছিলেন সেই সময়ের এন্ট্রাস (মেট্রিক) পাস। তবে বোহেমিয়ান প্রকৃতির। আজ এখানে, তো কাল অন্য কোথাও। ধনী পরিবারে বিয়ে করে বাবা নাকি জগৎ-সংসার নিয়ে বিরাট বিপত্তিতে পড়েছিলেন। প্রায় সময় মাকে নানাবাড়ির লোকজন নাইয়র নিয়ে আটকে রাখতেন। এর কারণ, বাবার ছন্নছাড়া এলোমেলো জীবন। মাকে আনতে গিয়ে বাবা যখন বিফল হতেন, তখন নাকি নানাবাড়ির আশপাশে হাওর-বিলে নৌকা থামিয়ে রাতবিরাতে কাওয়ালি ও ভাটিয়ালি গাইতেন। মায়ের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। এরপর মা আবার বাবার কষ্টের সঙ্গী হয়ে ফিরতেন।
একসময় সংসার বড় হতে থাকে। কিন্তু বাবার জীবনে স্থিতি আসে না। পারিবারের আর্থিক সংকট দেখা দেয়।
বাবা একবার খাগড়াছড়ি গিয়ে জমি কিনে সেখানে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাদা ও নানাবাড়ির লোকজনের আপত্তিতে যেতে পারেননি। এরপর কুমিল্লার সহায়-সম্পদ বিক্রি করে দেন। পরিবার–পরিজন নিয়ে চলে যান সুনামগঞ্জ। সেটা ১৯৮১ সাল।
নতুন জায়গা। বাবা অনেক জমি কিনেছিলেন তখন। কিন্তু অনেকেই বাবার সঙ্গে প্রতারণা করল। কেউ জমি দখল করল, কেউ টাকা নিয়ে মেরে দিল, আবার কেউ কেউ সুনামগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার ভয় দেখাল। মায়ের সাজানো-গোছানো সোনার সংসার বাবার কারণে তছনছ হয়ে গেল। পরিবারে নেমে এল সীমাহীন কষ্ট।
আট ভাই, এক বোন নিয়ে আমাদের বিশাল পরিবার। চরম সংকট চলছে। এর মধ্যে নানাবাড়ি থেকে চিঠির পর চিঠি আসছে, আবার কুমিল্লায় ফেরার তাগাদা। কিন্তু মা আর রাজি হন না।
মাকে নানাবাড়িতে কখনোই অভাব-অনটন আর কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। সুনামগঞ্জে আসার পর প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। সংসার চালানো মায়ের জন্য বিরাট কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই মাকে সংসার নিয়ে সংগ্রাম আর কষ্ট করতে দেখেছি।
আরও পড়ুনশহরে ফ্ল্যাট আমি ঠিকই নিয়েছি, কিন্তু মা আর কোনো দিন এলেন না৪ ঘণ্টা আগেমা সালেহা বেগমের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লেখক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?
কান দিয়ে পানি পড়া বা পুঁজ পড়া খুবই কমন একটা সমস্যা বা রোগ। কানে ইনফেকশন, ঠান্ডা লাগা, টনসিলের সমস্যা থেকে কান দিয়ে পানি পড়তে পারে। এ ছাড়া টনসিলে প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে এবং ওই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে কান দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হতে পারে। যেকোনো কারণে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হলে কানের পর্দার ওপর চাপ ফেলে পর্দা ছিদ্র করে ফেলে। ফলে কান দিয়ে পানি পড়ে।
ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান, সহকারী অধ্যাপক, ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘কান পাকা রোগীর জন্য আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে যে, কোনোভাবেই কানের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। তুলার একটি বল বানিয়ে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে, তারপর আবার তেল ফেলে দিতে হবে। এরপর তুলার বলটা কানের ছিদ্র বরাবর রাখলে পানি পড়া বন্ধ হবে। কান শুকনো রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাইরে থেকে কানে পানি না যায়, সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। তারপর নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।’’
এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে, কানে যে ছিদ্রটা হয়েছে সেটার ধরণটা কেমন। সেই ধরণ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র একজন বিশষজ্ঞের কাছ থেকে নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পুঁজ পড়াসহ কান পাকার অন্যান্য লক্ষণ থাকলে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এ ছাড়া কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, বয়সভেদে নাকের ড্রপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়েও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন:
টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টা করে ঘুমালে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান বলেন, ‘‘কানের পানি বা পুঁজের মধ্যে যদি বেশি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে প্রয়োজনের সার্জারিও করা লাগতে পারে।’’
ঢাকা/লিপি