মাকে নিয়ে একবার সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম। পড়ন্ত বিকেল। সৈকতে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বিশাল জলরাশির ওপারে সূর্য ডুবছে। অপলক দৃষ্টিতে সূর্যাস্তের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন মা। সেই সময়, সেই দিনটা আমার কাছে আজও অমলিন। কি যে ভালো লাগছিল সেই মুহূর্ত, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

আমার মা সালেহা বেগমের বয়স এখন ৭০। মাকে নানাবাড়িতে সবাই আদর করে ডাকে ‘সালু’। নানা ফজলুর রহমান প্রধানের চার মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে তিনি সবার ছোট, সবার আদরের।

আমার দাদার বাবা হাজি জব্বার আলী ছিলেন কুমিল্লার দাউদকান্দির ঐতিহ্যবাহী এক মুসলিম পরিবারের সদস্য। নামডাকওয়ালা জব্বার আলীর ছোট নাতি আমার বাবা আবদুল গণি। তাই মায়ের সঙ্গে বাবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে নানাবাড়ির কেউই দ্বিমত করেননি। বিয়েটা হয়েছিল বেশ ধুমধাম করে।

বাবা ছিলেন সেই সময়ের এন্ট্রাস (মেট্রিক) পাস। তবে বোহেমিয়ান প্রকৃতির। আজ এখানে, তো কাল অন্য কোথাও। ধনী পরিবারে বিয়ে করে বাবা নাকি জগৎ-সংসার নিয়ে বিরাট বিপত্তিতে পড়েছিলেন। প্রায় সময় মাকে নানাবাড়ির লোকজন নাইয়র নিয়ে আটকে রাখতেন। এর কারণ, বাবার ছন্নছাড়া এলোমেলো জীবন। মাকে আনতে গিয়ে বাবা যখন বিফল হতেন, তখন নাকি নানাবাড়ির আশপাশে হাওর-বিলে নৌকা থামিয়ে রাতবিরাতে কাওয়ালি ও ভাটিয়ালি গাইতেন। মায়ের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। এরপর মা আবার বাবার কষ্টের সঙ্গী হয়ে ফিরতেন।

একসময় সংসার বড় হতে থাকে। কিন্তু বাবার জীবনে স্থিতি আসে না। পারিবারের আর্থিক সংকট দেখা দেয়।

বাবা একবার খাগড়াছড়ি গিয়ে জমি কিনে সেখানে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাদা ও নানাবাড়ির লোকজনের আপত্তিতে যেতে পারেননি। এরপর কুমিল্লার সহায়-সম্পদ বিক্রি করে দেন। পরিবার–পরিজন নিয়ে চলে যান সুনামগঞ্জ। সেটা ১৯৮১ সাল।

নতুন জায়গা। বাবা অনেক জমি কিনেছিলেন তখন। কিন্তু অনেকেই বাবার সঙ্গে প্রতারণা করল। কেউ জমি দখল করল, কেউ টাকা নিয়ে মেরে দিল, আবার কেউ কেউ সুনামগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার ভয় দেখাল। মায়ের সাজানো-গোছানো সোনার সংসার বাবার কারণে তছনছ হয়ে গেল। পরিবারে নেমে এল সীমাহীন কষ্ট।

আট ভাই, এক বোন নিয়ে আমাদের বিশাল পরিবার। চরম সংকট চলছে। এর মধ্যে নানাবাড়ি থেকে চিঠির পর চিঠি আসছে, আবার কুমিল্লায় ফেরার তাগাদা। কিন্তু মা আর রাজি হন না।

মাকে নানাবাড়িতে কখনোই অভাব-অনটন আর কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। সুনামগঞ্জে আসার পর প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। সংসার চালানো মায়ের জন্য বিরাট কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই মাকে সংসার নিয়ে সংগ্রাম আর কষ্ট করতে দেখেছি।

আরও পড়ুনশহরে ফ্ল্যাট আমি ঠিকই নিয়েছি, কিন্তু মা আর কোনো দিন এলেন না৪ ঘণ্টা আগেমা সালেহা বেগমের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লেখক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন

পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা রতন ঢালী (২৯) নামে এক যুবক। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তিনি এবং ফয়সাল হোসেন (২২) নামে অপর এক বাংলাদেশি নিহত হন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রতনের বাবা জানান, দেড় বছর ধরে ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলে নিহত হয়েছে এ খবর জানে না তার মা।

গোপালগঞ্জের মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের আনোয়ার ঢালী এবং সেলিনা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন রতন। বর্তমানে তার বাবা-মা এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন। এর আগে তারা ঢাকায় থাকতেন।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে নিহত ৫ নারীর দাফন সম্পন্ন

মনিরামপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

রতন ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কাজ করতেন, তার বাবা আনোয়ার ঢালী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালাতেন। আনোয়ার ঢালী স্ত্রীকে নিয়ে মকুসুদপুর চলে আসলেও ছেলে রতন  আসেননি। সবশেষ ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল ফোনে কথা হয় রতনের সঙ্গে তার বাবার।

সে সময় রতন তার বাবাকে জানান, তিনি ভারতে আছেন। সেখান থেকে দুবাই যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর আর তাদের যোগাযোগ হয়নি।

মেডিকেল সেন্টারে কাজ করা ফয়সাল হোসেনকে নিয়ে রতন গত বছরের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান এবং তারা টিটিপিতে যোগ দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে রতন ও ফয়সাল নিহত হন। 

রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী বলেন, “রতন শেষবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল। সে বলেছিল, ভারতে আছে, শিগগিরই দুবাই যাবে। এরপর রতনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। কয়েকদিন আগে পুলিশ বাসায় এসে রতনের নিহত হওয়ার খবর জানায়। সে কীভাবে পাকিস্তান গেল আর কীভাবে টিটিপিতে যোগ দিল তা জানা নেই।” 

মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন রতনের বাবা-মা

তিনি জানান, রতন যে কাজ করেছে এ কারণে তাদের কোনো শোক নেই। যারা রতনকে এমন কাজে জড়িয়েছেন তাদের বিচারের দাবি করেন আনোয়ার ঢালী।

রতনের মা সেলিনা বেগম বলেন, “২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল শেষবার রতনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, মা আমি দুবাই যাচ্ছি, এখন দিল্লিতে আছি। আমি জানতে চাই, দুবাই যেতে এত টাকা কিভাবে পেলি। তখন রতন বলে, যেখানে কাজ করছি তারাই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এরপর আর কথা হয়নি।”

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ফয়সাল হোসেনের ঠিকানা এখনো জানা যায়নি। 

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়া থেকে প্রথমবার পণ্যবাহী ট্রেন পৌঁছেছে ইরানের বন্দরে
  • ৩৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারল দ. আফ্রিকা
  • ‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
  • লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • গণভোট সংবিধানে নেই: আমীর খসরু
  • গভীর রাতে গাড়িতে দুর্বৃত্তদের আগুন, সিসিটিভিতে ধরা পড়ল পুরো ঘটনা
  • ডি ককের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে উড়িয়ে সিরিজ সমতায় দ. আফ্রিকা
  • পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন
  • গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি
  • পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসক কার্যালয়ে আসা শুরু করেছেন, গ্রাহকের চাপ নেই