পেঁয়াজ চাষির ভরসা শাহীনের এয়ার ফ্লো মেশিন
Published: 10th, May 2025 GMT
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার রুপিয়াট গ্রামের শাহীন মণ্ডল তৈরি করেছেন এয়ার ফ্লো মেশিন। মেশিনটি পেঁয়াজ চাষিদের ভরসা হয়ে উঠছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মেশিনটি দিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ৮-৯ মাস ভালো থাকে।
জানা গেছে, শাহীন (৪২) পেশায় ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী। পাংশা উপজেলার মৈশালা এলাকায় শাহীন মেশিনারি অ্যান্ড ওয়ার্কশপ নামে তাঁর একটি দোকান আছে। ২০২২ সালে তিনি মেশিনটি তৈরি করেন। গত তিন বছরে প্রায় তিনশটি মেশিন বিক্রি করেছেন। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ১৬ ইঞ্চি গোলাকার ৭০ ইঞ্চি লম্বা পাইপের মধ্যে এক হর্সের একটি ফ্যান বসানো রয়েছে। ফ্যানের বাতাস নিচে গিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সুইচের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিনটির মোটর তিন ঘণ্টা চলে আবার তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এর দাম ১৬ হাজার টাকা। এয়ার ফ্লো মেশিন বসানোর জন্য ১২ বর্গফুটের একটি ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের ভেতর ১০ ইঞ্চি উঁচু বাঁশের মাচা তৈরি করে পাতা হয়। ঘরের মাঝখানে বসানো হয় মেশিন। পেঁয়াজের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে বাতাস দেওয়া হয়। ফলে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না, পচেও না।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচলিত মাচা পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ছয় মাস রাখলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এ মেশিন ব্যবহার করলে ৮-৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকে।
পাংশা পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান জানান, যারা ব্যবহার করেছে গত বছর, এমন চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সবাই জানিয়েছে মেশিনটি কার্যকরী। এজন্য তিনি তিনটি মেশিন কিনেছেন।
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম জানান, তিনি এবার সাড়ে ৫০০ মণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩০০ মণ পেঁয়াজ এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে ঘরে সংরক্ষণ করছেন। মেশিনটির সুবিধা হলো নিজে নিজেই কাজ করা যায়। শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। তিনি এর সুফল পাচ্ছেন।
কৃষক কোরবান আলী জানান, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে তিনি একটি মেশিন কিনেছিলেন। সেখানে যত পেঁয়াজ রেখেছিলেন তা ভালো ছিল। এজন্য এ বছর আরও দুটি মেশিন কিনেছেন।
শাহীন মণ্ডল জানান, তিন বছর আগে তিনি মেশিনটি তৈরি করেন। গ্রামের কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হিমশিম খান। এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা থেকেই যন্ত্রটি তৈরি করেন। প্রথম বছর তিনি ১০টি মেশিন বিক্রি করেন, দ্বিতীয় বছর ৪০টি। এ বছর আড়াইশটি বিক্রি হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি এ মেশিনটি তৈরি করেন। ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মেশিনটি ব্যবহার করলে ৮-৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের নির্দেশনায় একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেসব কৃষক আড়াইশ থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করে, তাদের প্রণোদনা হিসেবে এ মেশিন দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, তারা চাষিদের এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এ মেশিন চাষিদের বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।