রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার রুপিয়াট গ্রামের শাহীন মণ্ডল তৈরি করেছেন এয়ার ফ্লো মেশিন। মেশিনটি পেঁয়াজ চাষিদের ভরসা হয়ে উঠছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মেশিনটি দিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ৮-৯ মাস ভালো থাকে।
জানা গেছে, শাহীন (৪২) পেশায় ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী। পাংশা উপজেলার মৈশালা এলাকায় শাহীন মেশিনারি অ্যান্ড ওয়ার্কশপ নামে তাঁর একটি দোকান আছে। ২০২২ সালে তিনি মেশিনটি তৈরি করেন। গত তিন বছরে প্রায় তিনশটি মেশিন বিক্রি করেছেন। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ১৬ ইঞ্চি গোলাকার ৭০ ইঞ্চি লম্বা পাইপের মধ্যে এক হর্সের একটি ফ্যান বসানো রয়েছে। ফ্যানের বাতাস নিচে গিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সুইচের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিনটির মোটর তিন ঘণ্টা চলে আবার তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এর দাম ১৬ হাজার টাকা। এয়ার ফ্লো মেশিন বসানোর জন্য ১২ বর্গফুটের একটি ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের ভেতর ১০ ইঞ্চি উঁচু বাঁশের মাচা তৈরি করে পাতা হয়। ঘরের মাঝখানে বসানো হয় মেশিন। পেঁয়াজের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে বাতাস দেওয়া হয়। ফলে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না, পচেও না। 
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচলিত মাচা পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ছয় মাস রাখলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এ মেশিন ব্যবহার করলে ৮-৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকে।  
পাংশা পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান জানান, যারা ব্যবহার করেছে গত বছর, এমন চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সবাই জানিয়েছে মেশিনটি কার্যকরী। এজন্য তিনি তিনটি মেশিন কিনেছেন। 
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম জানান, তিনি এবার সাড়ে ৫০০ মণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩০০ মণ পেঁয়াজ এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে ঘরে সংরক্ষণ করছেন। মেশিনটির সুবিধা হলো নিজে নিজেই কাজ করা যায়। শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। তিনি এর সুফল পাচ্ছেন। 
কৃষক কোরবান আলী জানান, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে তিনি একটি মেশিন কিনেছিলেন। সেখানে যত পেঁয়াজ রেখেছিলেন তা ভালো ছিল। এজন্য এ বছর আরও দুটি মেশিন কিনেছেন। 
শাহীন মণ্ডল জানান, তিন বছর আগে তিনি মেশিনটি তৈরি করেন। গ্রামের কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হিমশিম খান। এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা থেকেই যন্ত্রটি তৈরি করেন। প্রথম বছর তিনি ১০টি মেশিন বিক্রি করেন, দ্বিতীয় বছর ৪০টি। এ বছর আড়াইশটি বিক্রি হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি এ মেশিনটি তৈরি করেন। ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন বলে জানান। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মেশিনটি ব্যবহার করলে ৮-৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের নির্দেশনায় একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেসব কৃষক আড়াইশ থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করে, তাদের প্রণোদনা হিসেবে এ মেশিন দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে। 
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, তারা চাষিদের এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এ মেশিন চাষিদের বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম শ নট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতু থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে রেললাইন

যমুনা সেতুর ওপর থেকে রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ বৃহস্পতিবার নাট-বোল্টসহ যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত ১৮ মার্চ যমুনা রেলসেতু চালু হয়েছে। এরপর থেকে সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলছে না। যমুনা সেতুর ওপর রেললাইনের প্রয়োজন নেই। এ কারণে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মাধ্যমে যৌথ পরিকল্পনায় সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, রেললাইন খোলা শুরু হয়েছে। উপরিভাগে যানবাহনের জটলা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আগামীতে সেতুর দুটি লেন প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রেললাইন খুলে নেওয়া হলে সড়ক সেতুতে আরও প্রায় সাড়ে তিন মিটার জায়গা বাড়বে। এটা মূল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযোগ করতে পারব। এতে উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার বাড়বে। এ ধরনের সেতু আন্তর্জাতিকভাবে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত হয়। বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতি লেন ৬ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ। এ কারণে দুর্ঘটনা বা যানজট হয়। রেললাইন অপসারণের পর প্রতি লেন প্রস্থ হবে প্রায় ৮ মিটার। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লাগে। প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সাসেক-২) পরিচালক ড. ওয়ালীউর রহমান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এবারের ঈদে সেতু দিয়ে এক দিনে ৬৫ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে সেতু কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে-পরে বিপাকে পড়ে। সেতুর ওপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় এলেঙ্গা ও সিরাজগঞ্জসহ দুই পারে থেমে থেমে যানজট হয়। সেতুর উপরিভাগ প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন হয়। এর নকশায় রেলপথ ছিল না। পরে সেতুর ওপর উত্তর পাশে লোহার খাঁচা, বার ও অ্যাঙ্গেল যুক্ত করে রেললাইন বসানো হয়। ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হয়। নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতি বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি তৈরি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ