গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসা শুরু হয়েছে রসালো ফল লিচু। এতে জানান দিচ্ছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আগমনী বার্তা। বাগান থেকে বাজারে ছড়াচ্ছে ম-ম ঘ্রাণ। মধুমাস শুরুর আগেই নাটোরের গুরুদাসপুর ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেশি ও মোজাফফর জাতের রসালো লিচু ওঠানো হচ্ছে। এবার ফলন ও দাম নিয়ে চাষি এবং ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ক্রেতা বলছেন, দাম বেশি।
গুরুদাসপুরে লিচুর ভালো ফলন হওয়ায় চাষির মুখে তৃপ্তির হাসি। নাটোরের সর্ববৃহৎ ফলের বাজার বেরগঙ্গারামপুর বটতলায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ ট্রাকে এ ফল চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি মৌসুমে অন্তত ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।
লালপুরে বাজারে আসা দেশি লিচুর দাম বেশ চড়া। প্রতি ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা বলছেন, ১০-১৫ দিন পরে পাওয়া যাবে উন্নত জাতের বোম্বাই ও চায়না থ্রি লিচু। গুরুদাসপুরে ১০০ লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। গত বছর ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এবার খুচরায় দাম ২৪০-২৫০ টাকা, গত বছর ১৭০-১৯০ টাকা ছিল।
চাঁচকৈড় বাজার থেকে লিচু কিনে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২০০ লিচু কিনেছি ৫০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতেই দাম বেশি। এখনও প্রায় ২০ দিন এ ফল পাওয়া যাবে। দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো।’ আরেক ক্রেতা মৌসুমি হাবিবা ৫০টি কিনেছেন ৭০ টাকায়। তাঁর মতে, ফলের দাম তদারকি করা দরকার।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, গুরুদাসপুরে প্রায় ৪১০ হেক্টর জমিতে এবার বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়েছে। গত দুই বছরে ১০ হেক্টর বেড়েছে। প্রায় এক হাজার চাষি এবার চাষে যুক্ত হয়েছেন। চাষি মান্নান আলী বলেন, গত বছরও ভালো ফলন হয়েছিল, কিন্তু এবার আরও বেশি। পুরো গ্রাম ঘ্রাণে ভরে গেছে। এবার ভালো লাভ হবে।
আগে অন্য ফসলের আবাদ করলেও এখন লিচুর বাগান করেছেন জানিয়ে আব্দুল আওয়াল বলেন, ধানের তুলনায় লিচুতে বেশি লাভ। দামও ভালো। কৃষি উদ্যোক্তারা বলছেন, লিচুর ফলন দেখে চাষির আগ্রহ বাড়ছে। ফল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে যুক্ত হয়ে আয় বাড়ছে অনেকের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদের ভাষ্য, প্রতি হাজার লিচু ১৮শ থেকে ২৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন, বেড়গঙ্গারামপুর লিচুর আড়তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।
শনিবার লালপুরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দু’পাশে টুকরিতে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। ওয়ালিয়া বাজারে বিক্রেতা রিমন আলী জানান, দেশি মোজাফফর জাতের লিচু ১০০টি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায়। সামনে উন্নত জাতের মোজাফফর, বোম্বাই ও চায়না থ্রি উঠতে শুরু করবে। তারপরও এবার দাম বেশিই থাকবে। কারণ তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে অনেক ফল ঝরে গেছে। 
বাজারে বছরে প্রথম লিচু দেখে কিনতে এসেছিলেন শাহেখ আলী। কিন্তু টক স্বাদের দেশি ফল ও দাম চড়া হওয়ায় কেনেননি। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে হওয়ায় অনেকে বেশি টাকা দিয়েই কিনছেন। দাম নাগালের মধ্যে না থাকায় অনেকে রসালো ফলটির স্বাদ নিতে পারছেন না।
এখন বাজারে যেসব লিচু পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো দেশীয় আগাম জাতের কিছুটা অপরিপক্ব বলে জানান লালপুরের কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড়। তিনি বলেন, পরিপক্ব ও উন্নত জাতের লিচু বাজারে আসতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ঘুরে হার্ভার্ডের পথে ড্যাফোডিলের এই শিক্ষক

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ