লিচুতে খুশি চাষি-বিক্রেতা দামে অসন্তোষ ক্রেতার
Published: 10th, May 2025 GMT
গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসা শুরু হয়েছে রসালো ফল লিচু। এতে জানান দিচ্ছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আগমনী বার্তা। বাগান থেকে বাজারে ছড়াচ্ছে ম-ম ঘ্রাণ। মধুমাস শুরুর আগেই নাটোরের গুরুদাসপুর ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেশি ও মোজাফফর জাতের রসালো লিচু ওঠানো হচ্ছে। এবার ফলন ও দাম নিয়ে চাষি এবং ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ক্রেতা বলছেন, দাম বেশি।
গুরুদাসপুরে লিচুর ভালো ফলন হওয়ায় চাষির মুখে তৃপ্তির হাসি। নাটোরের সর্ববৃহৎ ফলের বাজার বেরগঙ্গারামপুর বটতলায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ ট্রাকে এ ফল চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি মৌসুমে অন্তত ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।
লালপুরে বাজারে আসা দেশি লিচুর দাম বেশ চড়া। প্রতি ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা বলছেন, ১০-১৫ দিন পরে পাওয়া যাবে উন্নত জাতের বোম্বাই ও চায়না থ্রি লিচু। গুরুদাসপুরে ১০০ লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। গত বছর ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এবার খুচরায় দাম ২৪০-২৫০ টাকা, গত বছর ১৭০-১৯০ টাকা ছিল।
চাঁচকৈড় বাজার থেকে লিচু কিনে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২০০ লিচু কিনেছি ৫০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতেই দাম বেশি। এখনও প্রায় ২০ দিন এ ফল পাওয়া যাবে। দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো।’ আরেক ক্রেতা মৌসুমি হাবিবা ৫০টি কিনেছেন ৭০ টাকায়। তাঁর মতে, ফলের দাম তদারকি করা দরকার।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, গুরুদাসপুরে প্রায় ৪১০ হেক্টর জমিতে এবার বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়েছে। গত দুই বছরে ১০ হেক্টর বেড়েছে। প্রায় এক হাজার চাষি এবার চাষে যুক্ত হয়েছেন। চাষি মান্নান আলী বলেন, গত বছরও ভালো ফলন হয়েছিল, কিন্তু এবার আরও বেশি। পুরো গ্রাম ঘ্রাণে ভরে গেছে। এবার ভালো লাভ হবে।
আগে অন্য ফসলের আবাদ করলেও এখন লিচুর বাগান করেছেন জানিয়ে আব্দুল আওয়াল বলেন, ধানের তুলনায় লিচুতে বেশি লাভ। দামও ভালো। কৃষি উদ্যোক্তারা বলছেন, লিচুর ফলন দেখে চাষির আগ্রহ বাড়ছে। ফল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে যুক্ত হয়ে আয় বাড়ছে অনেকের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদের ভাষ্য, প্রতি হাজার লিচু ১৮শ থেকে ২৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন, বেড়গঙ্গারামপুর লিচুর আড়তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।
শনিবার লালপুরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দু’পাশে টুকরিতে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। ওয়ালিয়া বাজারে বিক্রেতা রিমন আলী জানান, দেশি মোজাফফর জাতের লিচু ১০০টি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায়। সামনে উন্নত জাতের মোজাফফর, বোম্বাই ও চায়না থ্রি উঠতে শুরু করবে। তারপরও এবার দাম বেশিই থাকবে। কারণ তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে অনেক ফল ঝরে গেছে।
বাজারে বছরে প্রথম লিচু দেখে কিনতে এসেছিলেন শাহেখ আলী। কিন্তু টক স্বাদের দেশি ফল ও দাম চড়া হওয়ায় কেনেননি। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে হওয়ায় অনেকে বেশি টাকা দিয়েই কিনছেন। দাম নাগালের মধ্যে না থাকায় অনেকে রসালো ফলটির স্বাদ নিতে পারছেন না।
এখন বাজারে যেসব লিচু পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো দেশীয় আগাম জাতের কিছুটা অপরিপক্ব বলে জানান লালপুরের কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড়। তিনি বলেন, পরিপক্ব ও উন্নত জাতের লিচু বাজারে আসতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
লিফলেট বিতরণে যাওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার অভিযোগ
মাদারীপুরের শিবচরে তারেক রহমানের ৩১ দফা–সংবলিত লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট নিয়ে বের হন মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাবলু সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকেরা। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেন তাঁরা। ফেরার পথে উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এলে শিবচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান বাবুল ফকিরের লোকজনের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ।
এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। ভাঙচুর করা হয় পাঁচটি মোটরসাইকেল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবচর থানা–পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া সুমন আহম্মেদ ও রাশেদ মৃধা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট নিয়ে তাঁরা চরশ্যামাইল এলাকার কাজীর দোকান নামক স্থানে এলে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ফকিরের ছেলে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা সুমন ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁদের অনেক লোকজন আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল রেখে তাঁদের অনেকে সেখান থেকে ফিরেছেন।
বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন অনুসারীর কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মিটমাটও হয়ে গেছে। লিফলেট বিতরণ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার সময় রাস্তায় গতিরোধ করে দুই দিক থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় যারা আহত বেশির ভাগই বিএনপির কর্মী সমর্থক। তিনি হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাবলু ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। এ ঘটনায় থানায় এখনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’