শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনসহ ১৬ দফা দাবি জাতীয় শিক্ষক ফোরামের
Published: 10th, May 2025 GMT
ইসলামি পণ্ডিতদের সমন্বয়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। শনিবার রাজধানীতে এক সেমিনার থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সহসভাপতি এ বি এম জাকারিয়া দাবিগুলো তুলে ধরেন।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকদের ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ও শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া; মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদ্রাসায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা সবাইকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ; মাধ্যমিকে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের সরাসরি সহকারী প্রধান ও প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ; দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি; শিক্ষকদের অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলের টাকা দ্রুত দেওয়া; ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে সব স্তরের সিলেবাস বিন্যাস করা ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করা।
এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো ও শিক্ষা কমিশন গঠন; সর্বজনীন বদলি প্রথা চালু; ইএফটিতে (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা; আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যবই মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ছাপানোর ব্যবস্থা করা; ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ বা এলজিবিটিকিউ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ ও ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগবঞ্চিতদের দ্রুত নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আলিয়া মাদ্রাসায় ৩০ শতাংশ শিক্ষিকা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির বলে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটি শিক্ষকসমাজ জানতে চায়। সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনে যতটা আগ্রহী, শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনে ততটাই অনাগ্রহী। অথচ শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত না হওয়ায় ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী অনেক কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তাঁরাই শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে বাধা সৃষ্টি করছেন।
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি নাছির উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবদুস সবুরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন আজিজি প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার
পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।
গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার
বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।
নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী