ইসলামি পণ্ডিতদের সমন্বয়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। শনিবার রাজধানীতে এক সেমিনার থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সহসভাপতি এ বি এম জাকারিয়া দাবিগুলো তুলে ধরেন।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকদের ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ও শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া; মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদ্রাসায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা সবাইকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ; মাধ্যমিকে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের সরাসরি সহকারী প্রধান ও প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ; দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি; শিক্ষকদের অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলের টাকা দ্রুত দেওয়া; ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে সব স্তরের সিলেবাস বিন্যাস করা ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করা।

এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো ও শিক্ষা কমিশন গঠন; সর্বজনীন বদলি প্রথা চালু; ইএফটিতে (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা; আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যবই মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ছাপানোর ব্যবস্থা করা; ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ বা এলজিবিটিকিউ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ ও ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগবঞ্চিতদের দ্রুত নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আলিয়া মাদ্রাসায় ৩০ শতাংশ শিক্ষিকা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও দাবি জানানো হয়।

সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির বলে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটি শিক্ষকসমাজ জানতে চায়। সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনে যতটা আগ্রহী, শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনে ততটাই অনাগ্রহী। অথচ শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত না হওয়ায় ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী অনেক কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তাঁরাই শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে বাধা সৃষ্টি করছেন।

জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি নাছির উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবদুস সবুরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন আজিজি প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ