ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার কেমন ক্ষতি হলো?
Published: 11th, May 2025 GMT
এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলে পাকিস্তান হামলার সঙ্গে যে কোনো ধরণের যোগসূত্রের কথা অস্বীকার করেছিল। এরপরেও কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই ৭ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। আগে থেকেই প্রস্তুত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের এই হামলা প্রতিহত করেছিল। ঘটনার তিন দিন পর প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান ১০ মে ভোররাতে ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় সমন্বিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে বিকেলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান। এই যুদ্ধে কোনো দেশই তাদের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি। তবে উভয় দেশের সংবাদমাধ্যম ও সামরিক কর্মকর্তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রাইজিংবিডি যুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির একটি আনুমানিক চিত্র পেয়েছে।
পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড ও আজাদ কাশ্মীরে সামরিক অভিযানে ভারতের অত্যাধুনিক রাফায়েল যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল। এগুলো থেকে ছোড়া হয় স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল এবং হ্যামার বোমা। এর পাশাপাশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে পাকিস্তানের দুই থেকে তিনটি বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
ভারতের হামলা ঠেকাতে পাকিস্তান জে-১০সি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে এবং কোরাল ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম ব্যবহার করে। পাকিস্তানের দাবি, তারা তিনটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান, একটি মিগ-২৯ ও একটি সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং ৭৭টি ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। এছাড়া ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাতটি বিমান ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৮৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের এই সংঘাতে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার। ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারে ক্ষতি হয়েছে ৮২ বিলিয়ন ডলার। উত্তর ভারতের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বিমান চলাচলে। আইপিএল বন্ধ হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয় ৫০ মিলিয়ন ডলার। সামরিক অভিযানে ব্যয় হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার, যুদ্ধবিমান হারিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার। লজিস্টিক ও বাণিজ্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন ডলার। করাচি শেয়ারবাজারে সূচক পড়ে গিয়ে ক্ষতি হয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার। আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলার, আর সামরিক খাতে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি ড্রোন বিধ্বস্ত ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে ব্যয় হয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে ভারতের।
এতো গেলো আর্থিক ক্ষতির কথা। এবার আসুন, প্রাণহানির চিত্রটি দেখি।
ভারতের মতে, পাকিস্তানের হামলায় তাদের পাঁচ সেনা নিহত, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পাঁচ জওয়ান আটক এবং ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ২৫-৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, তারা পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জারের এক সদস্যকে আটক করেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের ৭০ সদস্যকে হত্যা করেছে। আর পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় হামলায় তাদের বিমানবাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত, চার সেনা আহত এবং ৩৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৮ জন আহত হয়েছে।
এসব তথ্য কোনো তৃতীয় সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে উভয় দেশের দাবির দিকে যদি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে এই যুদ্ধে ভারতের বেশি সংখ্যক সেনা নিহত হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষতির পাল্লা ভারতের দিকেই বেশি।
ভারত -পাকিস্তানের এই শত্রুতা তাদের স্বাধীনতার পর থেকেই। যুদ্ধ যে কখনো ভালো ফল কিংবা স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসে না তা বোধ হয় এই দুই দেশের নেতারা কখনোই বুঝবেন না।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জেনে জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করেন
জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরবিরোধী অংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, গত ২০ মে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেনে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সদস্যপদ ফিরে পেয়ে তাঁরা সম্মেলন আয়োজন করেন। তাই জি এম কাদের আর আইনত চেয়ারম্যান নন।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই অভিযোগ করেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে দাবি করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আদালতে যাই, আদালত আমাদের সদস্যপদ বহাল করেন ও কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। আমরা রায় পেয়েছি ৩০ জুলাই। কাউন্সিল হয় ৯ আগস্ট। এই মধ্যবর্তী সময়ে জি এম কাদের আদালতে যাননি। এখন তিনি বাইরে চিল্লাচিল্লি করছেন। সুতরাং বিষয়টি আপনাদের বুঝতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কাউন্সিল করেছি।’
সম্মেলন আয়োজনে কোনো তড়িঘড়ি বা লুকোচুরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, অনৈতিকভাবে জি এম কাদের যে সম্মেলন স্থগিত করেছিলেন, সেই সম্মেলন তাঁরা আবার আয়োজন করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙ্গল’ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নম্বর–১২ তাঁরা ব্যবহার করবেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবেন।
জি এম কাদের সম্মেলনের ট্রেন মিস করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন কাদেরবিরোধী অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, কাউন্সিল হয়ে গেছে। এখন আর কোনো আকুতির সুযোগ নেই। তাঁরা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ব্যবহার করছেন, এটা অন্যায় করছেন। শিগগির এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাদেরবিরোধীদের কাউন্সিলে জি এম কাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৯ আগস্ট কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। তাই আইনত জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদের ভিত্তি নেই। তাঁরা মিলেমিশে কাজ করার জন্য জি এম কাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির কাদেরবিরোধী অংশের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের সর্বাত্মক সংস্কারে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে যে ক্রান্তিকাল চলছে, তার উত্তরণে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দরকার।
আরও পড়ুননির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি চেয়ে আনিসুল-হাওলাদার কমিটির চিঠি১৩ আগস্ট ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেন, শফিকুল ইসলাম, নাজমা আক্তার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, মাসরুর মাওলা, সাইদুর রহমান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, সরদার শাহজাহান, নুরুল ইসলাম মিলন, লিয়াকত হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, হারুন আর রশিদ, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, মো. ইয়াকুব হোসেন, শেখ আলমগীর হোসেন, নীগার সুলতানা, মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, নাসির উদ্দিন সরকার, হাফেজ মাহমুদুর রহমান, সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, শারমিন পারভীন লিজা, মিজানুর রহমান, তাসলিমা আকবর রুনা, শারমিন আকতার, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জি এম কাদের১৩ আগস্ট ২০২৫