আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। রবিবার (১১ মে) এ উপলক্ষে বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দলটি ‘অভিনন্দন অভিযাত্রা’ বের করে।

অভিযাত্রা পূর্ব সমাবেশে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানাই। জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত‍্যাকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাহী আদেশে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না দিয়ে আমরা চাচ্ছিলাম বিচারিক প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেয়ার জন‍্য। আওয়ামী লীগ যে সীমাহীন অন‍্যায়, জুলুম ও লুটপাট করেছে তাতে এ দলটার বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফুঁসে উঠেছে, অতএব এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত এবং এতে নাগরিকদের প্রত‍্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বলে আমরা মনে করি।”

তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এজন‍্য আন্দোলন করে আসছিলাম। এক অজানা কারণে আমাদের দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়িমসি এবং কালক্ষেপণ করে। শেষ পর্যন্ত ফ‍্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করতে হয়েছে।” তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও সমর্থন দানকারী সবার প্রতি শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.

ওহাব মিনারের সভাপ‌তি‌ত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় সমা‌বে‌শে বক্তব্য রাখেন- দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, ব্যারিস্টার সানি আবদুল হক, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) গাজী নাসির, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, এবি যুব পার্টির সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার, ছাত্র পক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাজাহান ব্যাপারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, পেশাজীবী কাউন্সিলের সদস্য সচিব শামীম মাহাবুব, দুর্যোগ বিষয়ক সহ সম্পাদক মাসুদ জমাদ্দার রানা, স্বেচ্ছাসেবক ও জনকল্যাণ বিষয়ক সহ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসাইন রমিজ,  ছাত্রপক্ষের চুয়াডাঙ্গা জেলার আহ্বায়ক আলমগীর হোসাইন, গাইবান্ধা জেলা সহ সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রাফিউর রহমান ফাতাহ।

প্রফেসর ডা. ওহাব মিনার বলেন, “যে ফ্যাসিবাদের পতন ২৪-এ হয়েছে তাদের আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই। আপনারা নিশ্চিত থাকেন। তার কারণ ছাত্র-জনতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে এজন্য ছাত্র-জনতা মাঠে পাহারা বসিয়েছে। যারাই নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইবে, গুম-খুন ও লুটের মতো অপকর্ম করবে তারাই আওয়ামী লীগের মতো ভাগ্যবরণ করবে।”

উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক ও জনকল্যাণ বিষয়ক সহ সম্পাদক কেফায়েত হোসাইন তানভীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব বারকাজ নাসির আহমাদ, সফিউল বাশার, নারী  উন্নয়ন বিষয়ক সহ সম্পাদক শাহিনুর আক্তার শিলা, আমেনা বেগম, শিক্ষা বিষয়ক সহ সম্পাদক ফয়সাল মনির,সহ প্রচার সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, রিপন মাহমুদ, সহ দপ্তর সম্পাদক শরন চৌধুরী, মশিউর রহমান মিলু, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক জামিল আহমেদ, সড়ক ও যোগাযোগ বিষয়ক সহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুর মোহাম্মদ সুমন, যুব পার্টির দপ্তর সম্পাদক আমানুল্লাহ সরকার রাসেল, যুবনেতা মাহমুদ আজাদ, রাশেদ, পল্টন থানা আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মুন্সী, যাত্রাবাড়ী থানা আহ্বায়ক আরিফ সুলতান রাফিউর রহমান ফাত্তাহ, মাহমুদুল হাসান আসিফ, সোলাইমান আল হাবিব, ফারহানুল ইসলাম ইফতি, সায়েমুল ইসলাম, জাওয়াদ হামিম, মাশরুর ইসলাম মাহিন, মেহরাজুল ইসলাম আদরসহ কন্দ্রীয়, মহানগরী, যুবপার্টি ও ছাত্রপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম র রহম ন হ স ইন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বান্দরবানের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দরিদ্র্যের ঘেরাটোপে বন্দী

দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যা মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যে ভুগছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাসিন্দারা, যেখানে এই হার ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এ তথ্য উঠে এসেছে- পরিকল্পনা কমিশনের প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। দেশের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের ওপর এটিই প্রথম প্রতিবেদন।

গত ৩১ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৯.৭৭ শতাংশ বা ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। বিভাগভিত্তিক হিসাবে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে। তবে জেলা হিসাবে শীর্ষে রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান।

প্রতিবেদনের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেশি। এছাড়া দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে- পানির প্রাপ্যতা, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ইন্টারনেট সংযোগসহ ১১টি সূচকের সমন্বয়ে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয়রা বলছেন, বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে পরিকল্পিত প্রসার, কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে দ্রুত ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে দারিদ্র্যসীমা থেকে মুক্ত হবে পার্বত্য এই জেলার ১১টি পাহাড়ি গোষ্ঠীসহ মোট ১২ সম্প্রদায়ের জনগণ। এসব সংকট মোকাবেলায় সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের হার আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

মানবাধিকার কর্মী ডনাইপ্রু নেলি বলেন, “সরকার প্রতি বছর বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য সব জেলার মানুষকে ভালো রাখা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন সর্বত্র সমানভাবে দেখা যায় না। বিশেষ করে বান্দরবান যেখানে বহু ভাষাভাষী ও বহু সংস্কৃতির মানুষ বাস করে, রয়েছে মনোরম পাহাড় ও প্রকৃতি। সেই জেলায় এখনো অনেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটায়, দারিদ্র্যের কষ্টে জীবন যাপন করে। অনেকের কাছে পর্যাপ্ত কাপড়ও নেই।”

তিনি বলেন, “প্রতি বছর সরকারি বাজেটের টাকা নানা রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থের কারণে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। আবার অনেক সেবামূলক সংগঠনও রাজনৈতিকীকরণের ফলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদি এ রাজনৈতিকীকরণ দূর করা যায় এবং বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হয়, তবে বান্দরবানের দারিদ্র্য কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”

চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বান্দরবান মূলত একটি পর্যটননির্ভর জেলা। একে পর্যটনের শহর বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে পর্যটন শহরের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। পর্যটন অবকাঠামো সমৃদ্ধ হলে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।”

তিনি বলেন, “বছরে ৯-১০ মাস পর্যটক না আসায় স্থানীয় অর্থনীতিতে স্থায়ী উন্নতি ঘটছে না। পর্যটকদের নিয়মিত উপস্থিতি না থাকায় অর্থনৈতিক প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথাযথভাবে পৌঁছায়নি। ফলে বান্দরবানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অন্যান্য জেলার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।”

বান্দরবান জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মার্মা বলেন, “বিগত সরকারের উন্নয়নের জোয়ার বলছি। সে উন্নয়নটা যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে, জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজে লাগানো যেত। উন্নয়ন বলতে আমরা যদি অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বুঝায়, তাহলে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, যেটা খুবই প্রয়োজন ছিল।”

তিনি বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ যদি যথাযথ কাজে লাগানো খুবই জরুরি ছিল। আগামীতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজে লাগালো যায়, তাহলে মনে হয় এই লজ্জাজনক দারিদ্র্যের হার সেখান থেকে উত্তরণ হবে।”

বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীন বলেন, “আন্তর্জাতিক এনজিও, স্থানীয় এনজিও, জেলা পরিষদের ৩৪টি ন্যস্ত বিভাগসহ জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বান্দরবানে কাজ করছে। তবুও প্রান্তিক জনগণ তাদের প্রাপ্য সুবিধা ঠিকভাবে পাচ্ছে না। নইলে দারিদ্র্যের সমীক্ষায় বান্দরবান জেলা সবার নিচে অবস্থান করত না।”

তিনি প্রত্যাশা করে বলেন, “জেলা পরিষদের ন্যস্ত বিভাগ ও এনজিওর কাজের অগ্রগতি থাকলেও বাস্তবে প্রান্তিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও এনজিওগুলোর উচিত প্রান্তিক পর্যায়ে সঠিকভাবে কাজ করা।”

তিনি আরো বলেন, “বান্দরবান প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। ঝিরি, ঝর্ণা আর পাহাড়ে ঘেরা এই জেলা। পর্যটন খাতে যথাযথ পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং পাহাড়ের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কাজ করা গেলে অর্থনৈতিক দুরবস্থা কিছুটা লাঘব হবে।”

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবানে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে- সম্প্রতি এমন একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, পূর্ববর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে যে বরাদ্দ এসেছিল, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ বছর জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।”

তিনি আরো বলেন, “বান্দরবানের তিনটি উপজেলায় অর্থনীতি মূলত পর্যটন ও কৃষিনির্ভর। নানা কারণে দীর্ঘদিন পর্যটন কার্যক্রম স্থবির ছিল। ফলে উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়েছিল। তবে গত ৩ মাস ধরে পর্যটন খাত উন্মুক্ত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন প্রাণ ফিরেছে। পাশাপাশি কৃষি খাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে স্থানীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং দারিদ্র্যও অনেকাংশে কমে আসবে।”

ঢাকা/চাই মং/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ