ঢাকার ধামরাই উপজেলার ১৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪টিতেই দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা। মাসিক সভা ছাড়াও প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ দিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। দাপ্তরিক এসব কাজের কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়ে ওঠে না তাদের। যে কারণে অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ে। বাধাগ্রস্ত হয় শিক্ষাদান।

উপজেলার বড়নালাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি খালি ছয় বছর ধরে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক কানিজ নাছিমা। এ বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের জায়গায় আছেন তিনিসহ তিনজন। কানিজ নাছিমাকে দাপ্তরিক কাজ, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। ১০৫ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় অন্য

দুই শিক্ষককে। তারা ঠিকমতো পাঠদানও করতে পারেন না।
অভিভাবকদের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের শিক্ষা অফিসে দৌড়ঝাঁপেই বহু সময় চলে যায়। তারা বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে পারছেন না। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মৌলিক শিক্ষায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৭১টি। এর মধ্যে বড়নালাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আতুল্লার চর, মকিমপুর, নিকলা, চর চৌহাট, আমতা, বড় নারায়ণপুর, পশ্চিম সূত্রাপুর, সাইট্টা, আমছিমুর, খাগাইল, বেরশ, দুর্গাপুর, বান্নাখোলা, উত্তর বান্নাখোলা, দক্ষিণ বানাখোলা, গাংগুটিয়া, হাতকোড়া, বারবাড়িয়া, জালসা, কৃষ্ণপুরা, চক মহিষাশী, বাটুলিয়া, শ্রীরামপুর, কুল্লা, চাপিলসহ ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। প্রধান শিক্ষকের বদলি, অবসরজনিত কারণ, মৃত্যু, সৃষ্ট পদসহ নানা কারণে এসব পদ খালি। জ্যেষ্ঠ

সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত 
প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে আরও ৮৪টি। এতে করে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন ও জালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেনজীর আহমদসহ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষক হয়েও তারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক স্বল্পতায় তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি মাসে মাসিক সভা ছাড়াও নানা কাজে অন্তত পাঁচ দিন উপজেলায় যেতে হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মতো দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। সব ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
প্রায় ১৬ বছর ধরে আতুল্লার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি। ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা তারেক আহম্মেদ বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ কারণে উপজেলা সদরের শিক্ষা অফিসে 
যাতায়াত করতে হয় প্রায়ই। তাঁর বিদ্যালয় থেকে সেখানকার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ফলে বিদ্যালয়ের পাঠদানের রুটিন পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব হয় না।
ধামরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাখখারুল ইসলাম মিজানের ভাষ্য, আদালতে মামলার কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে আছে। উপজেলায় বিপুল সংখ্যক শূন্য পদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র সহক র সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ