ভুয়া এআই ভিডিও তৈরির টুল দিয়ে ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে হ্যাকাররা
Published: 12th, May 2025 GMT
ভুয়া এআই ভিডিও তৈরির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে নতুন এক তথ্য চুরির ম্যালওয়্যার ‘নুডলোফাইল’। আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে এই ক্ষতিকর সফটওয়্যার।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান মরফিসেক সম্প্রতি জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভুয়া ওয়েবসাইটের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটে বলা হয়, ব্যবহারকারী তাঁর পছন্দের ছবি, ভিডিও বা লেখা প্রকাশ করলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি হবে স্বয়ংক্রিয় ভিডিও। তবে বাস্তবে এসব সাইটে আপলোডের পর ব্যবহারকারীকে একটি জিপ ফাইল দেখানো হয়। যার ভেতরে ‘ভিডিও ড্রিম মেশিনএআই.
এ কৌশলে ব্যবহারকারীদের সন্দেহ কমে যায় এবং কিছু অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারও একে ম্যালওয়্যার হিসেবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। ফাইলটি চালু করার পর একাধিক ধাপে একটি সংক্রমণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে একটি ব্যাচ স্ক্রিপ্ট চালু হয়ে উইন্ডোজের ‘সার্টইউটিল’ নামের বৈধ টুল ব্যবহার করে একটি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রার ফাইল ডিকোড করে। এটি একটি পিডিএফ ফাইলের মতো মনে হয়। একই সময়ে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিতে একটি নতুন কি সংযোজন করা হয়। যার মাধ্যমে ম্যালওয়্যারটি কম্পিউটার চালুর সময় নিজে থেকেই সক্রিয় হতে পারে। পরবর্তী ধাপে ‘এসআরসিএইচওএসটি.এক্সই’ নামে একটি ফাইল চালু হয়। যা একটি নির্দিষ্ট সার্ভার থেকে ‘র্যান্ডমইউজার২০২৫.টিএক্সটি’ নামে একটি পাইথন স্ক্রিপ্ট ডাউনলোড করে এবং সরাসরি মেমোরিতে চালায়। এই স্ক্রিপ্টের মাধ্যমেই ‘নুডলোফাইল’ নামে ম্যালওয়্যার সক্রিয় হয়।
কম্পিউটারে যদি অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস চালু থাকে, তাহলে ম্যালওয়্যারটি ‘আরইজিএএসএম.এক্সই’ ফাইলের মধ্যে প্রবেশ করে ‘পিই হোলোয়িং’ কৌশল ব্যবহার করে। আবার ‘শেলকোড ইনজেকশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে এটি মেমোরিতে সক্রিয় থাকে। নুডলোফাইল মূলত ওয়েব ব্রাউজারে সংরক্ষিত লগইন তথ্য, পাসওয়ার্ড, সেশন কুকি, টোকেন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের সংবেদনশীল ফাইল চুরি করতে ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনে এটি দূর থেকে যন্ত্রে ঢোকার (অ্যাকসেস) সুবিধাও দিতে পারে, অর্থাৎ হ্যাকার আক্রান্ত কম্পিউটারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
মরফিসেক জানিয়েছে, ম্যালওয়্যারটি এখনো কোনো পাবলিক নিরাপত্তা ডেটাবেজে নথিভুক্ত নয়। এটি ‘গেট কুকি ও পাসওয়ার্ড’ নামে একটি সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘ম্যালওয়্যার-এ-সার্ভিস’ আকারে ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন ফোরামে বিক্রি হচ্ছে। গবেষকদের ধারণা, এর সঙ্গে ভিয়েতনামি ভাষার একটি সাইবার অপরাধী চক্র যুক্ত।
চুরি করা তথ্য ‘টেলিগ্রাম’ মেসেজিং অ্যাপের একটি বটের মাধ্যমে হ্যাকারদের কাছে পাঠানো হয়। বটটি কার্যত একটি ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সার্ভার হিসেবে কাজ করে, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর তথ্য গ্রহণ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নুডলোফাইলের সঙ্গে যুক্ত থাকে ‘এক্সওয়ার্ম’ নামে আরেকটি দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ ট্রোজান। যার মাধ্যমে তথ্য চুরির পাশাপাশি আক্রান্ত কম্পিউটার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সম্ভব হয়।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য লওয় য র প সওয় র ড ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।
হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মসালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)
৫. অতিরিক্ত দোয়া
ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।
আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:
রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।
ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।
জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)
সালাতুল হাজতের ফজিলতসালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতর্কতানিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫