কোরিয়ান সিনেমার পোস্টারের সঙ্গে মিল, ব্যাখ্যা দিলেন নির্মাতা
Published: 12th, May 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল আজহায় মুক্তির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জোরেশোরে প্রচারণায় নেমেছে ‘ইনসাফ’ টিম। ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে সিনেমাটির তিন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীদের ফার্স্ট লুক পোস্টার। রবিবার সন্ধায় উন্মুক্ত হয়েছে সিনেমাটির তৃতীয় পোস্টার, যেখানে তাসনিয়া ফারিণকেও দেখা গেছে ভিন্ন লুকে।
ফুল ও কুঠার হাতে ধরা দেন ‘ইনসাফে’র নায়িকা। অভিনেত্রীকে নতুন রূপে দেখে নেটিজেনরা প্রশংসা করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে যে, পোস্টারটি অন্য এক সিনেমার পোস্টারের নকল। দেখা গেছে, কোরিয়ান সিনেমা ‘কিল বকসুনে’র একটি পোস্টারের সঙ্গে ফারিণের পোস্টারের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এরপর সোশ্যালে তা নিয়ে নকলের অভিযোগ তোলেন একাধিক দর্শক।
নকলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিনেমাটির নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার জানান, পুরো ব্যাপারটি ঘটেছে অসাবধানতাবশত। এটাকে নিজেদের ভুল হিসেবেই মানছেন তিনি।
সঞ্জয় সমদ্দার বলেন, ‘আমাদের লুক রিভিলগুলোতে সিম্বল হিসেবে কুড়াল একটা কমন ফ্যাক্টর ছিল। আমি ডিজাইনারকে বলেছিলাম যে তাসনিয়া ফারিণের হাতে ফুল ও কুড়াল দিয়ে কিছু প্ল্যান করতে। এভাবেই আমরা এগোই। কিন্তু এটা যে কোনো সিনেমার কোনো পোস্টারের সঙ্গে মিলে যাবে জানলে তা অবশ্যই এড়িয়ে যেতাম। এটা অসাবধানতাবশত হয়েছে। পরবর্তীতে এই বিষয়ে আরো সতর্ক থাকব।’
এর আগে ৪ মে চোখে সানগ্লাস, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, পোশাকে রক্তের ছিটেফোঁটা, হাতে কুড়াল, ঘাড়ে ঝুলানো থেটোস্কোপ নিয়ে ভয়ঙ্কার লুকে হাজির হন অভিনেতা মোশাররফ করিম। এমন ভয়ংকর চরিত্রে মোশাররফ করিমকে আগে দেখা যায়নি কখনও। দ্বিতীয় পোস্টার প্রকাশ করে বলা হয়, ‘এই ডাক্তার রোগ নয়, পাপ সারায়! রক্তই তার ভাষা, ইনসাফই তার শপথ!’
নির্মাতা জানান, অ্যাকশন থ্রিলার গল্পের সিনেমা ‘ইনসাফ’। এতে দানবীয় ও ভয়ংকর রূপে দেখা যাবে মোশাররফ করিমকে। পোস্টার উন্মোচন যেন সেটারই আভাস দিল। ‘ইনসাফ’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে আছেন শরীফুল রাজ। ধুন্ধুমার অ্যাকশন অবতারে এতে রাজকে উপস্থাপন করা হবে। সিনেমায় শরীফুল রাজের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে থাকছেন তাসনিয়া ফারিণ। আর এ সিনেমার মাধ্যমেই ঢাকার চলচ্চিত্রের পুরোপুরি কমার্শিয়াল সিনেমার নায়িকা হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তার।
গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত হয় ফার্স্ট লুক পোস্টার। হাতে রক্তাক্ত কুড়াল, ঠোঁটে মুচকি হাসি, চেহারায় রক্তের দাগ নিয়ে হাজির করা হয় রাজকে। পোস্টারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘ইনসাফ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি জীবনবোধ!’
গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে ইনসাফের শুটিং। এখন চলছে শেষ অংশের কাজ। ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে ‘ইনসাফ’। বাংলাদেশে প্রথম হলেও ইনসাফ সঞ্জয় সমদ্দারের দ্বিতীয় সিনেমা। এর আগে জিৎকে নিয়ে টালিউডে ‘মানুষ’ নামের সিনেমা বানিয়েছিলেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনস ফ
এছাড়াও পড়ুন:
নিভৃতচারী কৃষকের আর্তনাদ কি আমরা শুনছি
কৃষি এবং কৃষকই এ দেশের প্রাণ—এই ধ্রুব সত্যটি নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, মধ্যস্বত্বভোগী ও কপট ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত। নীতিনির্ধারক ও মূলধারার রাজনীতিবিদদের নীরবতা এবং কৃষকের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকে ‘ট্রল’ করার মতো দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা আমাদের জাতীয় সংবেদনশীলতার অভাবকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে।
করোনাকালীন ভয়াবহ সংকটে কৃষি যেভাবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। অথচ এত কমিশন গঠিত হলেও, কৃষি কমিশন গঠন করা হয়নি। এর মূল কারণ সম্ভবত নিভৃতে কাজ করে যাওয়া কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের মূল্য এই সমাজে অনেক সস্তা।
বর্তমানে কৃষি খাত নিয়ে যত আলোচনা—তা সবই যেন নিরাপদ কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, ভ্যালু চেইন ও উৎপাদন বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। প্রধান স্টেকহোল্ডার কৃষক ও তাঁর জীবন-জীবিকার স্বার্থ প্রায়শই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কৃষকের কোনো সক্রিয় সংগঠন নেই। চাষাবাদ ফেলে ঢাকা শহরে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব, কারণ তাতে তাঁদের পেটে ভাত জুটবে না।
অথচ কৃষকেরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশায় কৃষক! মাস্ক, গ্লাভস বা রাবারের জুতা চোখে না দেখা, ছেঁড়া গামছা মুখে পেঁচিয়ে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করা ভূমিহীন মানুষটা আমাদের কাছে হয়তো ‘কৃষিশ্রমিক’, ‘কৃষক’ নন; কিন্তু খাদ্য উৎপাদনচক্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে মৌলিক এবং তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকিও সবচেয়ে বেশি।
সমাজের চোখে ‘কৃষক’ বলতে যখন বিঘার পর বিঘা জমির মালিক, শিক্ষিত বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদের বোঝানো হচ্ছে, তখন প্রান্তিক, নিরক্ষর মানুষগুলোর অস্তিত্ব ও সংগ্রাম প্রায় অস্বীকৃত থেকে যাচ্ছে।
আবার কৃষক ও কৃষির সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত নয়, এর শিকড় প্রোথিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাণিজ্যিক কৃষিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষায় কৃষির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো প্রায় উপেক্ষিত।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা বা গবেষণা নেই। কীভাবে নারীর হাত দিয়ে কৃষির সূচনা হয়েছিল—ফসলের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বপন ও পরিচর্যার প্রথম ধাপগুলোয় নারীর যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিকগুলো পড়ানো হয় না বললেই চলে।
বাংলার কৃষিকাজে লোকায়ত জ্ঞানের অন্যতম ধারক খনার বচন প্রাসঙ্গিক হলেও আবহাওয়া, ফসল রোপণের সময়, মাটির গুণাগুণ–সম্পর্কিত হাজার বছরের পরীক্ষিত প্রথাগত প্রজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে স্থান পায় না। এর বদলে শুধু স্থান পায় আধুনিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিকীকরণের তত্ত্ব।
ধান লাগানো থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, বীজ সংরক্ষণ, ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের মতো অনেক ধাপে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ বাংলাদেশের কৃষিতে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিভিন্ন গবেষণায় এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এই বিশাল শ্রমশক্তি ও তাঁদের সমস্যা নিয়ে মূলধারার একাডেমিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদিও সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।
কৃষির এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু যান্ত্রিকীকরণ আর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই চলবে না। প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতিগত পরিবর্তন।
যা করা যেতে পারে:
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার সরকারি উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমাতে শক্তিশালী ‘ভ্যালু চেইন’ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ: প্রান্তিক কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের জন্য বিনা মূল্যে মানসম্পন্ন কীটনাশকপ্রতিরোধী মাস্ক, গ্লাভস এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
শিক্ষায় কৃষির সাংস্কৃতিক পাঠ অন্তর্ভুক্তিকরণ: উচ্চশিক্ষা ও স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে কৃষির উৎপত্তি, নৃতত্ত্ব, নারীর ভূমিকা, লোকায়ত জ্ঞান (যেমন খনার বচন) এবং কৃষকের জীবন ও সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কৃষিশ্রমিকের স্বীকৃতি: নারীর কৃষিভিত্তিক শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা। কৃষিশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ও স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা বরাদ্দ রাখা।
সর্বোপরি নীতিগত সদিচ্ছা এবং কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিই পারে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার মূল ভিত্তি—নিভৃতচারী কৃষককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে। কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
মো. জুবায়ের ইবনে কামাল অফিসার, জনতা ব্যাংক পিএলসি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়