চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৩ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১০ কোটি ৫ লাখ ডলার বা ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

সোমবার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে দেশে এসেছে ৭৩ কোটি ৫ লাখ ডলার। আগের বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬০ কোটি ১০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে ২২ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

লিবিয়া থেকে ফিরছেন আরো ১৭৭ বাংলাদেশি

মিয়ানমারে আটকেপড়া ২০ জন ফিরলেন স্বজনদের কাছে

২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত ৭ মে পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৫২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৭ মে পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৯৭২ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। 

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। মার্চ মাসে এসেছে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচার রোধে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে, হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। যে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। এছাড়া, গত রমজানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিবার-পরিজনের নিকট বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। আগামী ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করেও রেমিট্যান্স পাঠানোর ধারা অব্যাহত রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার।

ঢাকা/এনএফ/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স র ম ট য ন স এস ছ

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান কি ভারতের সঙ্গে আরেকটা সংঘাত সামলাতে সক্ষম?

ভারত মিসাইল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের ওপর। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে তা নিয়ে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এখন দুই দেশের নিজেদের সীমানা নিয়ে উদ্বেগ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের আক্রমণকে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরে পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। (ইতিমধ্যে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে।)

এই সংঘাতের নতুন করে সূত্রপাত ঘটে গত এপ্রিলে ভারতের কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে। ২৬ জন সাধারণ ভারতীয় পর্যটক নিহত হওয়ার পর, আন্তর্জাতিকভাবেও প্রতিক্রিয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘হতাশাজনক’ বলে আখ্যায়িত করে সমস্যার দ্রুত সমাধান আশা করেন।

পাকিস্তানের জন্য আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অর্থনৈতিক অভিঘাত সামলানো কঠিন হবে। ভারতের তুলনায় সেই আঘাত হবে অনেক বেশি। সেই সংঘাত যত দীর্ঘ হবে, পাকিস্তানের জন্য তা হবে তত বেশি ভয়াবহ। বিনিয়োগ বিষয়ে আগাম অবস্থা জানানোর জন্য মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তারা এ বিষয়ে ৫ মে জানিয়েছে যে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা আছে। এতে পাকিস্তানের রাজস্ব কমবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতি কিছুটা সামলে আসার সম্ভাবনা ছিল। ভারতের সঙ্গে সংঘাত সেই সুযোগ লন্ডভন্ড করে দিতে পারে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে এ ধরনের সংঘাত পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করে দেয়। আফগানিস্তান যুদ্ধ পাকিস্তানের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। দেশে দেখা দিয়েছিল সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। অস্ত্র আর মাদক চোরাচালান সেই যে বেড়েছে, তা আজও সামলানো যায়নি। সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো এখনো খোদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বৈদেশিক ঋণ ১৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি খরচই ঠিকমতো মেটানো যাবে না। এ অবস্থায় যুদ্ধ বা সামরিক উত্তেজনা বাড়লে বিদেশি বাজার থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। ফলে ঋণ পরিশোধ আরও জটিল হয়ে উঠবে, আর রিজার্ভেও চাপ পড়বে। এমনকি আইএমএফের পুনরুদ্ধার কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

অবশ্য পাকিস্তানের এই দুর্বলতা আজকের নয়। ২০২১ সালে সেই সময়ের সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে তাঁদের ট্যাংক চালানোর মতো ডিজেল পর্যন্ত নেই। সামরিক যানবাহন বা অস্ত্র সচল রাখার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করার টাকাও নেই তহবিলে। সেই দুর্বলতা আজও কাটেনি।

ভারতের অবস্থা একেবারে ভিন্ন। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের রপ্তানি ছিল ভারতের মোট রপ্তানির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা হলেও ভারতের অর্থনীতি তেমন প্রভাবিত হবে না।

তবে ভারতের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়লে বাজেটঘাটতি বাড়তে পারে। তাহলে উন্নয়ন ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ভারতের জন্য নিরাপত্তাচাপ কেবল পশ্চিম সীমান্তেই নয়, চীন সীমান্তেও রয়েছে। দুই সীমান্তে একসঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হলে অনেক খরচ হয়। তাই ভারতেরও সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই।

কিন্তু এই সব চাপ পাকিস্তানের বিপদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ মানে কেবল সাময়িক রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং অর্থনৈতিক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো। চীনের কাছে থেকে তারা সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ নবায়ন করেছে। কিন্তু এর ফলে পাকিস্তান চীনের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর তা পশ্চিমা মিত্রদের (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে।

এ ছাড়া পাকিস্তানের কৃষি খাত সামরিক উত্তেজনায় বড় ধাক্কা খেতে পারে। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। এটা বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার সংকেত। অথচ কৃষিই পাকিস্তানের মূল অর্থনৈতিক খাত। এই খাতে তাদের ৪০ শতাংশের মতো মানুষ কাজ করে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি দেশটি। এ অবস্থায় আরেকটি বড় সংকট এলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়াবে।

তাই পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলা কেবল কৌশলগত নয়, বরং টিকে থাকার প্রশ্ন।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহল জরুরি হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। আর তখন শুধু ভারত-পাকিস্তান অঞ্চলে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। এখানে মানুষ প্রতিদিন ৩ দশমিক ৬৫ ডলারের কম আয় করে কোনোমতে টিকে থাকে। যুদ্ধ হলে এই সব দরিদ্র মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হবে।

পুরোদস্তুর যুদ্ধ না হলেও সীমিত মাত্রায় সংঘাত হতে পারে। আর তা হচ্ছেও। দুই দেশের মধ্যে এমন সংঘাত নতুন কিছু নয়। এমন ছোটখাটো সংঘর্ষেও বিপুল অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতি হতে পারে। আর তা পাকিস্তানের মতো দুর্বল দেশের জন্য কম মারাত্মক হবে না।

ইউসুফ নজর পাকিস্তানি লেখক

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স
  • পরিপত্র জারি হলে আ.লীগের ওয়েবসাইট-ফেসবুক বন্ধে পদক্ষেপ: ফয়েজ আহমদ
  • ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নেবে ১৫৮ জন, আবেদনের সুযোগ আর ২দিন
  • রেমিট্যান্স আহরণে সৌদি আরব শীর্ষে
  • ১৯ মে ঢাকায় ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪’
  • এক বছরে এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তা পেলেন ৩৫ হাজার উদ্যোক্তা
  • পাকিস্তান কি ভারতের সঙ্গে আরেকটা সংঘাত সামলাতে সক্ষম?
  • রুয়েটে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ১২ মে
  • ন্যায্য মূল্য পান না পেঁয়াজচাষি, মজুতদারদের পোয়াবারো