নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চায় সরকা: খাদ্য উপদেষ্টা
Published: 12th, May 2025 GMT
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ে অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত খাদ্যকে জনগণের জন্য নিরাপদ করতে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে জাইকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশে জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত ‘ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এ দ্রুত প্রকল্প পরিচালক এবং পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া বৈঠকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনবল বৃদ্ধি, জাপান ও আসিয়ান দেশগুলোর মতো একক এবং সুবিন্যস্ত খাদ্য ব্যবসা লাইসেন্স ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দশ বছর মেয়াদি ২ হাজার ৪০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় ঢাকায় একটি ফুড সেফটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি, চট্টগ্রাম ও খুলনায় দুইটি খাদ্য পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের খাদ্য নিরাপত্তা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
বৈঠকে খাদ্য উপদেষ্টা ‘ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এ অর্থায়নে জন্য জাইকাকে ধন্যবাদ জানান এবং এই প্রজেক্টের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে জাইকার কর্মকর্তারা এবং খাদ্য সচিব মো.
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাটজিপিটি কি আমাদের চিন্তা আটকে দিচ্ছে?
আমি প্রচুর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করি। সম্ভবত একটু বেশিই করি। হয়তো পয়সা উশুল করার জন্য। অথবা ঝামেলা পাকানোর জন্য। আমার ধারণা, যন্ত্রকে বিপদে ফেলার জন্য। অনেক সময় এমন হয়, মাথায় একটা প্রশ্ন এল, তারপর আর বেশি চিন্তা না করে সরাসরি টাইপ করে ফেলি, চ্যাটজিপিটি, বলো তো...।
একটা সময় ছিল, এসব প্রশ্ন নিয়ে আমি কষ্ট করতাম। ভাবতাম, গুগল করে হাজারো ঘাঁটাঘাঁটি করতাম, ভুল করতাম, শিখতাম। এখন সেসব কষ্ট নেই। যন্ত্র এসে সব সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই ‘সহজ করে দেওয়া’র মধ্যেই লুকিয়ে আছে একধরনের বিপদ। যে বিপদ খুব ধীরে ধীরে আসে, সাইলেন্ট মোডে। আপনি টেরও পাবেন না, কখন আপনার চিন্তা করা বন্ধ হয়ে গেছে।
চ্যাটজিপিটি উত্তর দেয় তাড়াতাড়িই, গোছানো, সুন্দর ভাষায়। যেন আপনি যা জানতে চাচ্ছেন, তার চেয়ে এক ধাপ বেশি বুঝে ফেলেছে যন্ত্রটাই। তখন আপনি আর থামেন না। একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার ... তারপর একসময় এমন হয়, আপনি নিজে ভাবার আগেই মেশিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মানে, একটা সময় গিয়ে আপনার মাথায় প্রশ্ন আসার আগেই উত্তর চলে আসে। মনে হয়, ও আপনার মন পড়ে ফেলছে। অনেকটা প্রশ্নের আগেই উত্তর।
এই অভ্যাস যখন গেঁথে যায়, তখন চিন্তাটা আউটসোর্স করে দেওয়ার মোডে চলে যায়। আপনার মাথার বদলে একটা বিশাল সফটওয়্যার ভাবছে। আপনি শুধু উত্তর নিচ্ছেন না, বিশ্বাসও করছেন। চিন্তা করছেন না। যাচাই করছেন না। তর্কও করছেন না। পাল্টা বাড়ি দিচ্ছেন না। ধমক দিচ্ছেন না ভুল বলে।
এটাই ভয়ংকর। আসলেই ভয়ংকর।
চ্যাটজিপিটি অনেক সময় এমনভাবে উত্তর দেয় যেন ব্যাপারটা খুবই সহজ, নিখুঁত; একদম নির্দ্বিধায় মানার মতো। আপনি ভাবছেন, ‘এই তো, এটাকেই তো খুঁজছিলাম!’ অথচ আমরা বুঝতে পারছি না, উত্তরটা ঠিক হলেও আমরা নিজে কিছু ভাবিনি, আমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি। এটা কিন্তু আমাদের বিপদে ফেলছে। অনেকের মাথাকে অসার করে ফেলছে।
আগে কী হতো?
একটা বিষয়ে মাথায় প্রশ্ন এলে আমরা সেটা নিয়ে পড়তাম, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতাম, নানা রকম চিন্তার ভেতর দিয়ে যেতাম। তর্ক হতো, ঝগড়া হতো। তখন একটা ভুল উত্তরও অনেক সময় ভালো একটা শিক্ষার জন্ম দিত। মাথা আবার চকচকে নতুনের মতো কাজ করত। সেই ভুল করা, দ্বিধায় পড়া, পথ হারানো, বাড়ি খেয়ে আবার পথ খুঁজে পাওয়া—পুরো যাত্রাটা একটা চিন্তার অভ্যাস তৈরি করত। এই অভ্যাসই ছিল আমাদের চিন্তার মূল শক্তি। এটাই মানুষের মূল শক্তি। এটাই আমাদের বিবর্তনের রাস্তা, যেটাতে হেঁটেছি আমরা এত এত শতক।
এখন আমরা সেটাই ছাড় দিচ্ছি।
চ্যাটজিপিটি বলে, ‘এই রাস্তায় হাঁটুন।’ আমরাও চোখ বুজে হাঁটছি। আর এই চোখ বুজে হাঁটার মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রশ্ন করার সাহস। যন্ত্র যে রাস্তা দেখাচ্ছে, সেটা ভালো হতেই পারে, কিন্তু সেটা একমাত্র রাস্তা নয়। আমরা নিজেরা আর খোঁজার চেষ্টা করছি না, বিকল্প ভাবছি না। ভয়ংকর ব্যাপার।
এআই-এর ভাষা এতটাই গোছানো, এতটাই বিশ্বাসযোগ্য যে অনেক সময় ভুল হলেও তা ধরতে ইচ্ছা করে না। আপনি ভাবেন, এত সুন্দর করে বলছে, নিশ্চয় ঠিকই বলেছে। তখন আর নিজের মতো করে চিন্তা করার দরজাটা খোলা থাকে না।
একটা সময় গিয়ে আপনার চিন্তার ধরনটাই বদলে যায়। আপনি নিজের মতো করে ভাবার বদলে চ্যাটজিপিটির মতো করে ভাবতে শুরু করেন। ওর যুক্তি, ওর বাক্যগঠন, ওর কাঠামো সব ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে আপনার মাথায়। তখন আপনি বুঝতেই পারেন না, আপনার মাথার ভেতরে যেটা ঘুরছে, সেটা আদৌ আপনার নিজের চিন্তা নয়, বরং এটা যন্ত্রের ছায়া। আমি নিজেই উপলব্ধি করেছি, এতগুলো সিস্টেম ব্যবহার করে।
এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা।
তবে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। চ্যাটজিপিটি কোনো শত্রু নয়। ও একটা শক্তিশালী টুল। কিন্তু সেটাকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন, সেটাই আসল। আপনি যদি শুধু শর্টকাট চান, ও আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি একটা উত্তর দিয়ে দেবে। সেটা নেওয়াটা ঠিক হবে না।
কিন্তু আপনি যদি নিজে চিন্তা করতে চান, নিজের মতো করে দ্বিধা, ভুল, অনিশ্চয়তা পেরিয়ে সামনে যেতে চান, তাহলে চ্যাটজিপিটিকে সহকারী বানান, গুরু নয়। ওর উত্তর নিয়ে প্রশ্ন করুন, সন্দেহ করুন, তর্ক করুন। দেখবেন, তখনো আপনি শিখছেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণটা থাকছে আপনার হাতে।
চ্যাটজিপিটি আমাদের চিন্তা কেড়ে নিচ্ছে না। আমরাই বরং নিজেরা তুলে দিচ্ছি। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি ভাবার আগেই উত্তর পেতে চান, নাকি উত্তর পাওয়ার আগেই ভাবতে চান?
রকিবুল হাসান
টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বইয়ের লেখক এবং লিংকথ্রি টেকনোলজিসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা
(মতামত লেখকের নিজস্ব)