Samakal:
2025-11-17@13:16:38 GMT

তাল ফলের নিলাম

Published: 12th, May 2025 GMT

তাল ফলের নিলাম

বজ্রপাত নিরোধ, পরিবেশবান্ধব ‘তাড়াশ তাল সড়ক’ নির্মাণের কাজ সত্তরের দশকে শুরু করেন মো. আব্দুর রহমান মিঞা। এ বৃক্ষপ্রেমিক এলাকার জনসমাগমস্থলে চৌকিদার দিয়ে ঢোল ও মুড়ির টিন বাজিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করেন। এর পর ১৯৭৫ সালে ভাদ্র মাসের শেষ দিকে ২০-২৫টি পানসি নৌকায় তালবীজ নিয়ে নেচেগেয়ে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জনগুরুত্বপূর্ণ সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ থেকে ভূঞাগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের দু’ধারে ১২ ফুট অন্তর প্রায় ১৫ হাজার তালবীজ রোপণ করেন। এ সময় তালবীজ রোপণ কাজে অংশ নেওয়া কয়েকশ লোককে প্রায় ২৫ মণ চাল-ডাল দিয়ে পাকানো খিচুড়ি দিয়ে আপ্যায়নও করা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান মিঞা হলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

তাড়াশের ঐতিহাসিক ‘তাল সড়ক’-এ তালবীজ রোপণের জন্য ১৯৭৮ সালে আব্দুর রহমান মিঞা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ও গ্রহণ করেছিলেন। শতবর্ষী এ বৃক্ষপ্রেমী এখনও জীবিত। গাছের পরিচর্যার অভাব, যত্রতত্র ডাকুর কাটা, বজ্রপাতে মরে যাওয়ার পরও জীবিত আছে অনেক তালগাছ। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে তাড়াশের তাল সড়কটি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরে জেলা পরিষদ ওই সড়কে একবারও নতুন করে আর তালবীজ রোপণ, গাছগুলোর পরিচর্যার ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অন্তত মরা ৪৫টি তালগাছ নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এমনকি তাড়াশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক তাল সড়কের তালগাছ বাড়ানোর উদ্যোগ না নেওয়া হলেও গত ৮ মে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বাক্ষরিত সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে তাড়াশের ‘তাল সড়ক’-এর তালফল বিক্রির নিলাম নোটিশ দিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাড়াশ উপজেলার পৌষার বাসস্ট্যান্ড থেকে তাড়াশ হাসপাতাল গেট পর্যন্ত উভয় পাশের ২২৫টি তালগাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি করা হবে। ক্রয় করতে ইচ্ছুকরা ১৪ মে বুধবার দুপুর ১২টায় তাড়াশ ইউএনওর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। জেলা পরিষদ কর্তৃক ২২৫টি তালগাছের তাল ফল বিক্রির নিলামের খবরে এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

সামান্য টাকার জন্য এলাকাবাসীকে তাল ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ তাল ফল বিক্রি না করে সংগ্রহ করে সড়কের ফাঁকা জায়গায় নতুন করে তালবীজ রোপণ করলে তা অধিক ভালো হতো।
জেলা পরিষদ তালবীজ রোপণে নেই; আছে তাল ফল বিক্রিতে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু। যদিও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জানান, প্রতিবছর এলাকার একটি সিন্ডিকেট গোপনে হাজার হাজার টাকার তাল বিক্রি করে থাকে। তাই এ বছর নিলামের মাধ্যমে তাল ফল বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে প্রয়োজনে তালবীজ কিনে ওই সড়কে রোপণ করা হবে।  কিন্তু সর্বোপরি এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন, তাড়াশের কালের সাক্ষী তাল সড়কের ২২৫টি গাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি কি খুবই জরুরি?

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল: সমকালের তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ জ ল ত ল ফল ব ক র ত ল সড়ক র রহম ন সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান বনাম পশ্চিমা বিশ্ব : সভ্যতার ভণ্ডামির পাঠ

ইরান কেবল একটি রাষ্ট্র নয়, বরং গোটা এক সভ্যতা। প্রাচীন ও আত্মসচেতন এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে শত শত বছর ধরে দর্শন, শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার চর্চার মধ্য দিয়ে। এই সভ্যতাগত চরিত্রই যুগে যুগে ইরানের রাজনৈতিক ও নৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। 

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ। তবে তা আত্মসম্মানবোধ থেকে, আত্মসমর্পণ থেকে নয়। তবু পশ্চিমা গণমাধ্যম ও তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকেরা ইরানকে এক ‘দুষ্ট রাষ্ট্র’ হিসেবে তুলে ধরেছে। যেন পশ্চিমের নৈতিকতার মিথ ধরে রাখার জন্য ইরান এক সুবিধাজনক ‘অপর’। 

ইরানের পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই দাঁড়িয়ে আছে প্রতিরোধের নীতির ওপর। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে ইরানের সমর্থন কখনোই অন্ধ সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ ছিল না। সেই সমর্থন মূলত এমন এক আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে, যারা আজও ফিলিস্তিনিদের পিষ্ট করে চলেছে গণহত্যার মতো নির্যাতনের মাধ্যমে। 

আরও পড়ুনআরব দেশগুলো এখন বুঝছে—ইরান নয়, ইসরায়েলই তাদের জন্য বড় হুমকি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যেখানে ইসরায়েল শরণার্থীশিবির ও হাসপাতাল বোমাবর্ষণকেও নিজেদের ‘আত্মরক্ষা’ হিসেবে দাবি করে, সেখানে ইরানের সংহতি আক্রমণ নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব। পশ্চিমা গণমাধ্যমে যেভাবে ইরানকে রহস্যঘেরা ও গোপনীয়তার আড়ালে ঢেকে রাখা এক রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো হয়, বাস্তবতা তার থেকে অনেক জটিল এবং ভিন্ন। 

ওয়াশিংটনের নৈতিক চশমা দিয়ে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বোঝা যায় না। পারস্যের উত্তরসূরি হিসেবে এই ইসলামি প্রজাতন্ত্র এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, যেখানে সম্পর্কের ভিত্তি সততা আর শক্তি মানেই সংযম। আধুনিক ইতিহাসে ইরান কোনো দেশে আক্রমণ বা উপনিবেশ স্থাপন করেনি। বরং আক্রমণ, নিষেধাজ্ঞা ও বিশ্বের থেকে একঘরে হয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা সয়েছে। তবু ইরান আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থেকে সরে দাঁড়ায়নি। 

ইরানের অভ্যন্তরীণ জটিলতা যা–ই থাকুক, এই নৈতিক উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করেছে। ওয়াশিংটনের কথামতো না চলার জন্যই ইরানকে শাস্তি দেওয়া হয়, নিজের জনগণকে দমন করার কারণে নয়। 

ইরান পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের পথে হাঁটতে চাইলে (যদি সত্যিই সেই পথ বেছে নেয়) তাকে আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতের বাইরে বিচার করা যায় না। ইসরায়েলের একটি অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার আছে। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে সই করেনি এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার কাছেও তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। 

তাহলে ইরান কেন প্রতিরোধক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবে? বিশেষ করে এমন এক পরিবেশে, যেখানে পশ্চিমের নৈতিকতা প্রয়োগ হয় বেছে বেছে। আর আন্তর্জাতিক আইন ব্যবহৃত হয় দুর্বলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে। সেখানে তো প্রতিরোধই টিকে থাকার উপায়। 

পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে দুনিয়াকে নসিহত করে, কিন্তু অস্ত্র বিক্রি করে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের কাছে। গাজায় ‘সন্ত্রাসীদের’ নিন্দা করে, অথচ শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়াকে ক্ষমা করে দেয়। ইরানকে তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানার দাবি জানায়, কিন্তু নিজেরা সুযোগ পেলেই তা লঙ্ঘন করে। এই ভণ্ডামি ব্যক্তিগত নয়, এর শিকড় গাথা আছে ঔপনিবেশিক ঔদ্ধত্যের শত শত বছরের অভ্যাসে। যে শক্তিগুলো একসময় এশিয়া ও আফ্রিকা লুট করে বেরিয়েছে, আজ তারাই গণতন্ত্র ও শান্তি নিয়ে জ্ঞান দেয়। 

আরও পড়ুনইরান–আমেরিকা ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ যে চার কারণে আসন্ন৩১ আগস্ট ২০২৫

ইরানের অভ্যন্তরীণ জটিলতা যা–ই থাকুক, এই নৈতিক উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করেছে। ওয়াশিংটনের কথামতো না চলার জন্যই ইরানকে শাস্তি দেওয়া হয়, নিজের জনগণকে দমন করার কারণে নয়। 

গাজায় ইসরায়েলের চলমান কর্মকাণ্ড পশ্চিমা দ্বিমুখিতার সর্বোচ্চ অশ্লীল প্রদর্শন। বিশ্ব তাকিয়ে দেখেছে শিশুরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ছে, হাসপাতালে বোমা হামলা হচ্ছে, শরণার্থীরা অনাহারে মরছে। আর এসবই ন্যায্যতা পাচ্ছে ‘নিরাপত্তার’ নামে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিটি নীতি পায়ের তলায় পিষ্ট করা হচ্ছে, তবু কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে না। যে সরকারগুলো একসময় ইউক্রেনের দুর্দশায় চোখের জল ফেলেছিল, তারাই এখন ফিলিস্তিনে গণহত্যার অর্থ জোগাচ্ছে। 

পার্সেপোলিস থেকে তেহরান পর্যন্ত, কবি থেকে বিপ্লবী পর্যন্ত ইরান এমন এক ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, যা কোনো সাম্রাজ্যই মুছে দিতে পারেনি। ইরানের রাজনীতি বিতর্কিত হতে পারে, শাসনব্যবস্থা অপূর্ণ হতে পারে কিন্তু তার সভ্যতাগত মনন অটুট। এর বিপরীতে পশ্চিমারা অস্ত্র চুক্তি ও তেল-স্বার্থের বিনিময়ে বিসর্জন দিয়েছে নিজেদের নৈতিক দিশা। 

রঞ্জন সলোমন গোয়াভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও মানবাধিকারকর্মী

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ