Samakal:
2025-06-27@06:41:31 GMT

তাল ফলের নিলাম

Published: 12th, May 2025 GMT

তাল ফলের নিলাম

বজ্রপাত নিরোধ, পরিবেশবান্ধব ‘তাড়াশ তাল সড়ক’ নির্মাণের কাজ সত্তরের দশকে শুরু করেন মো. আব্দুর রহমান মিঞা। এ বৃক্ষপ্রেমিক এলাকার জনসমাগমস্থলে চৌকিদার দিয়ে ঢোল ও মুড়ির টিন বাজিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করেন। এর পর ১৯৭৫ সালে ভাদ্র মাসের শেষ দিকে ২০-২৫টি পানসি নৌকায় তালবীজ নিয়ে নেচেগেয়ে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জনগুরুত্বপূর্ণ সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ থেকে ভূঞাগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের দু’ধারে ১২ ফুট অন্তর প্রায় ১৫ হাজার তালবীজ রোপণ করেন। এ সময় তালবীজ রোপণ কাজে অংশ নেওয়া কয়েকশ লোককে প্রায় ২৫ মণ চাল-ডাল দিয়ে পাকানো খিচুড়ি দিয়ে আপ্যায়নও করা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান মিঞা হলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

তাড়াশের ঐতিহাসিক ‘তাল সড়ক’-এ তালবীজ রোপণের জন্য ১৯৭৮ সালে আব্দুর রহমান মিঞা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ও গ্রহণ করেছিলেন। শতবর্ষী এ বৃক্ষপ্রেমী এখনও জীবিত। গাছের পরিচর্যার অভাব, যত্রতত্র ডাকুর কাটা, বজ্রপাতে মরে যাওয়ার পরও জীবিত আছে অনেক তালগাছ। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে তাড়াশের তাল সড়কটি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরে জেলা পরিষদ ওই সড়কে একবারও নতুন করে আর তালবীজ রোপণ, গাছগুলোর পরিচর্যার ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অন্তত মরা ৪৫টি তালগাছ নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এমনকি তাড়াশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক তাল সড়কের তালগাছ বাড়ানোর উদ্যোগ না নেওয়া হলেও গত ৮ মে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বাক্ষরিত সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে তাড়াশের ‘তাল সড়ক’-এর তালফল বিক্রির নিলাম নোটিশ দিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাড়াশ উপজেলার পৌষার বাসস্ট্যান্ড থেকে তাড়াশ হাসপাতাল গেট পর্যন্ত উভয় পাশের ২২৫টি তালগাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি করা হবে। ক্রয় করতে ইচ্ছুকরা ১৪ মে বুধবার দুপুর ১২টায় তাড়াশ ইউএনওর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। জেলা পরিষদ কর্তৃক ২২৫টি তালগাছের তাল ফল বিক্রির নিলামের খবরে এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

সামান্য টাকার জন্য এলাকাবাসীকে তাল ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ তাল ফল বিক্রি না করে সংগ্রহ করে সড়কের ফাঁকা জায়গায় নতুন করে তালবীজ রোপণ করলে তা অধিক ভালো হতো।
জেলা পরিষদ তালবীজ রোপণে নেই; আছে তাল ফল বিক্রিতে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু। যদিও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জানান, প্রতিবছর এলাকার একটি সিন্ডিকেট গোপনে হাজার হাজার টাকার তাল বিক্রি করে থাকে। তাই এ বছর নিলামের মাধ্যমে তাল ফল বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে প্রয়োজনে তালবীজ কিনে ওই সড়কে রোপণ করা হবে।  কিন্তু সর্বোপরি এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন, তাড়াশের কালের সাক্ষী তাল সড়কের ২২৫টি গাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি কি খুবই জরুরি?

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল: সমকালের তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ জ ল ত ল ফল ব ক র ত ল সড়ক র রহম ন সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিনে ভিন্ন রকম আয়োজন

বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন আগামীকাল। যদিও অনেক বছর ধরে আলাদা করে জন্মদিন উদযাপন করতে দেখা যায়নি তাঁকে। ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাঁকে। এবার শিল্পীর পক্ষ থেকে তাঁর ৮৫তম জন্মদিনে ভিন্ন ধরনের আয়োজন করছে চ্যানেল আই।

 আগামীকাল ২৮ জুন সংগীতজ্ঞ ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে চানেল আই প্রচার করবে ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব। সেখানে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত করবেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের প্রিয় দুই মুখ মিঠু ও মন্টি। তাদের সঙ্গে থাকবে একদল নতুন প্রজন্মের শিশু। 

এছাড়াও শুভেচ্ছা জানাবেন ‘এসো গান শিখি’র প্রযোজক মেনোকা হাসান এবং এই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী কনা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন সানজিদা, প্রযোজনায় অনন্যা রুমা। ‘তারকাকথন’ প্রচার হবে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে। ফেরদৌসী রহমানের কথায়, ‘‘শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জন্মদিনে তেমন কিছু করা হয় না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই সময় কাটাই। এ জন্য শুধু জন্মদিনকে ঘিরে চ্যানেল আইয়ে আয়োজিত ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেব। আগেও এতে অংশ নিয়েছি। সেখানে শিল্পীজীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে ভালোই লাগে।’’

 স্মৃতিচারণায় ফোরদৌসী রহমান তাঁর জন্মদিন নিয়ে এক মজার তথ্যও তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, তাদের বাড়িতে জন্মদিন সেভাবে উদযাপন করা হতো না। একমাত্র তাঁর বড় ভাই মোস্তফা কামালের (সাবেক প্রধান বিচারপতি) জন্মদিন হইচই করে উদযাপন করা হতো। গান হতো, কবিতা হতো, খাওয়া-দাওয়া হতো। কিন্তু একটি অর্জন বদলে দিয়েছিল তাদের বাড়ির চিত্র। সেটি ছিল ১৯৫৬ সাল। সে বছরই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ফেরদৌসী রহমান। জন্মদিনের ঠিক দু’দিন আগে ২৬ জুন প্রকাশ পায় তাঁর মেট্রিকের রেজাল্ট। ফলাফল বোর্ড স্ট্যান্ড করার পাশাপাশি সারাদেশে মেয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি; যা আনন্দ দিয়েছিল সবাইকে। সেই সুবাদে ঘটা করে উদযাপন করা হয় ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন। 

কিংবদন্তি শিল্পী ও ভাওয়াইয়াসম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের উত্তরসূরি হিসেবে সংগীত বলয়ে ফেরদৌসী রহমানের বেড়ে ওঠা। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন ভারতের কোচবিহারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলায় বাবার কাছে তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি। এরপর ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমুখ সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি মঞ্চে পারফরম্যান্স শুরু করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নেপথ্য কণ্ঠ দেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দুই শতাধিক সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ১৯৪৮ সালে রেডিওতে শিশুশিল্পী এবং ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। 

১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর দেশের সংগীতপ্রেমীদের মাঝে সাড়া ফেলেন ‘এসো গান শিখি’ গানের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। ফেরদৌসী রহমানের বড় ভাই মোস্তফা কামালও ছিলেন সংগীত অনুরাগী। আরেক ভাই লোকগানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শুধু ভাইবোনই নয়, তাদের উত্তসূরিদের প্রায় সবাই দেশীয় সংগীতকে ধারণ ও লালন করেন যাচ্ছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ