জীর্ণ সেতুর মাঝে বড় গর্ত, চলাচলে ঝুঁকি
Published: 12th, May 2025 GMT
সেতুর দুটি অংশ ধসে পড়ে ২০১৫ সালে। ভেঙে গেছে রেলিংও। ফাটল ধরেছে পিলারে। মাঝ বরাবর রয়েছে বড়সড় গর্ত। এর ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ১০ বছর এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করলেও সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেননি স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মুকুন্দি গ্রামে প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। এরপর জরাজীর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙা সেতু দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ছয় গ্রামের মানুষ। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
সেতুটি দিয়ে হেঁটে যাওয়াও কষ্টসাধ্য বলে জানান মুকুন্দি গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, এ সেতু দিয়ে কৃষক ঝুঁকি নিয়ে বাজারে তাদের পণ্য আনা-নেওয়া করেন। পাঁচ বছর পর পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কেউ সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। এতে তাদেরসহ আশপাশের ছয়টি গ্রামের বাসিন্দাদের কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা সেতুটি দিয়ে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কাউয়াদি, ভবানীপুর, তুলাতলী, সাধারদিয়া, নতুনবাজারসহ ছয় গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চলাচলে এটি ব্যবহার করে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় ভাঙা সেতুটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
জাকির মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার ভাষ্য, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে চলাচল করে। আমরা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন ভেঙে পড়ে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
একই ধরনের কথা বলেন ভবানীপুর গ্রামের আসাদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সেতুটি সংস্কার বা নির্মাণ না করা হলে ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে না। সরকারের কাছে দ্রুত পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
সড়কটি দিয়ে নিয়মিত যাত্রীসহ পণ্য আনা-নেওয়া করতেন সাধারদিয়া গ্রামের ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাত্রীদেরও কষ্ট বেড়েছে। কৃষক জায়েদ আলীর ভাষ্য, ৩০ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংস্কার করা হয়নি। ২০১৫ সালের দিকে ওপরের কিছু অংশ খসে পড়া শুরু হয়। গ্রামের বাসিন্দারা মসজিদের দানের টাকা দিয়ে সংস্কার করেছিল।
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন, সেতুটি দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। অনেক দিন ধরে এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ে থাকতে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বলেন, সেতুটি সম্পর্কে আগে কেউ কিছু জানায়নি। সম্প্রতি জেনেছেন, এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পুনরায় নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আশপ শ র
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।