সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের চরে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই অসুস্থ, ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি
Published: 13th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার শ্যামনগরসংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৫ ব্যক্তির অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে আটজনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মশিউর রহমান জানান, গত ২৬ এপ্রিল ভারতের পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের একটি বস্তি থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে দলভিত্তিক ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ জনকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়। ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিন এলাকায় তাঁদের ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। পরে সকাল ৯টার দিকে তাঁরা বন বিভাগের সহায়তায় সাতক্ষীরার মান্দারবাড়ি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এরপর গত শনিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাকা-দোবেকী ক্যাম্পের কনটিনজেন্ট কমান্ডার আতিকুর রহমানের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে তাঁদের মোংলা কোস্টগার্ড অফিসে নেওয়া হয়। পরে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের একটি বাসে তাঁদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় পৌঁছানো হয়।
৭৮ জনের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় নাগরিক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
৭৮ জনের ১ জন লিটন মিয়ার ভাগ্নে নাজমুল হোসেন জানান, রোববার রাতে পুলিশ তাঁদের স্বজনদের থানায় আসার জন্য আহ্বান জানায়। তাঁরা গতকাল সোমবার সকালেই শ্যামনগর থানায় পৌঁছান। তবে হস্তান্তরের কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, বেলা তিনটায় সংবাদ সম্মেলনের পর তাঁদের হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা পৌঁছান রাত ১১টার পর, এ কারণে হস্তান্তর সম্ভব হয়নি।
আবু হিলালের খালু মিজানুর রহমান বলেন, বিএসএফের নির্যাতনে অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ। গতকাল সকাল থেকে হস্তান্তরের আশায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এটা আরেক ধরনের নির্যাতন। অনিক শেখ ও আবু বক্কর নামের দুজন বলেন, বিএসএফের লাঠিপেটায় অনেকের পিঠ ও নিতম্বের চামড়া উঠে গেছে। অসুস্থ মানুষগুলোকে তীব্র গরমে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনগুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা২২ ঘণ্টা আগেশ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, কোস্টগার্ড মংলা পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ের পর হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা গতকাল রাত ১১টার পর পৌঁছালে ব্রিফিং করা সম্ভব হয়নি। আজ মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিং করে তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অসুস্থ হয়ে পড়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ২ জনকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৫ জনকে শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনসুন্দরবনের চরে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জন এখনো বন বিভাগের ক্যাম্পে১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র শ য মনগর ব এসএফ ৭৮ জন ১১ট র
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্ত হত্যা, পুশ ইন, চোরাচালান ও সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা হবে
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন ২৫ আগস্ট শুরু হবে। ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে উভয় বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনটি চলবে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত।
আজ রোববার বিজিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, ঠেলে পাঠানো (পুশ ইন) ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং ভারত থেকে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্যান্য চোরাচালান রোধসহ বিভিন্ন আন্তসীমান্ত অপরাধ দমন নিয়ে আলোচনা হবে।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন এবং অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণ রোধ, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ এবং সীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হবে।
বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্ত সম্মেলনে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, সাম্প্রতিককালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের ফলে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়সমূহ এবং সীমান্ত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সম্মেলনে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালকেরা নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধিদলে নিজ নিজ দেশের সীমান্তরক্ষী ছাড়াও সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করবেন। এবারের সম্মেলনে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে বিজিবি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএসএফ মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ভারতের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।