পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চারটি কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কলেজের কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে অছাত্র, বিবাহিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা পেয়েছেন ছাত্রদলের পদ।
গত সোমবার রাতে এই চার কলেজে মোট ৫০ জনকে নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ১০ জনকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের কেউ অছাত্র, কেউ বিবাহিত কেউবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো.

তানজিদ রশিদ বাপ্পি বলছেন, ‘যাদের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে তারা প্রত্যেকে স্থানীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের মাধ্যমে আমাদের 
কাছে পরিচিত হয়েছেন। এমনটা হলে তাদের কারণেই হয়েছে।’

উপজেলা সদরের শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজে আসাদ শেখকে সভাপতি ও মো. ইমাম খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্যের, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে আল শাদিদ ইসলাম সিয়ামকে সভাপতি ও মো. আরিফুল ইসলাম মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্যের, বৈঠকাটা ডিগ্রি কলেজে মো. তানভীর হোসেন হৃদয়কে সভাপতি ও মো. আতিকুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের এবং গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে তানজিম মাহমুদকে সভাপতি ও মো. মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। 
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অধিকাংশই এ কলেজের ছাত্র নন। তাছাড়া সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত ও ছাত্রলীগের কর্মী। কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এসএম আপেল মাহমুদ বলেন, সভাপতি আল শাদিদ ইসলাম সিয়াম এখনও এ কলেজে ভর্তি হননি। 
কলেজ কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হাসিবুর রহমান বাঁধন জানিয়েছেন, সিয়াম মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র নয় বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যয়ন দেওয়ার পরও জেলা কমিটি তাকে কলেজ কমিটিতে স্থান দিয়েছে। তবে সিয়ামের দাবি, তিনি ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

বিবাহিত ও ছাত্রলীগের কর্মী হওয়া প্রসঙ্গে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মুন্নার দাবি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইফ খান গত সংসদ নির্বাচনের সময় তাকে মারধর করে জোর করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের নতুন কমিটির ২ নম্বর সহসভাপতি এস এম শাহরিয়ার অয়ন বিবাহিত। তবে অয়ন বিষয়টি সমকালের কাছে অস্বীকার করেছেন।
মাটিভাঙ্গা কলেজের ছাত্রত্ব নেই নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাঁধন সিকদারের। তাঁর ভাষ্য, তিনি ২০২৪ সালে এইচএসসি 
পাস করেছেন। ডিগ্রিতে ভর্তি শুরু হলে এ কলেজে ভর্তি হবেন।

এই কলেজের কমিটি নিয়ে আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেজারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিম শেখ অনু, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আহাসান জিহাদের বিরুদ্ধে। নেজারুল ও অনুকে উপজেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা চেনেন না বলে দাবি করেছেন। আর জিহাদ ডাব ব্যবসায়ী। তার এই কলেজে ছাত্রত্ব নেই।
কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের একাধিক নেতার অভিযোগ, বৈঠাকাটা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর হাসান হৃদয় ৫ আগস্টের আগে কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ছাত্র ঐক্যজোট নামের একটি সংগঠনের ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তবে তার দাবি, তিনি এর আগে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
বৈঠাকাটা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুল্লাহ কলারদোনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স সদস য র কম ট র র কম ট কল জ র ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের