প্রায় দুই বছর আগের কথা। ছোটপর্দার ব্যস্ত অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ অনিয়মিত হয়ে পড়েন টিভি  নাটকে। মিডিয়ার আড্ডা আয়োজনেও খুব একটা দেখা মিলত না তাঁর। নতুন কোনো সিনেমায় অভিনয়েরও কোনো খোঁজখবর দিচ্ছিলেন না। একেবারে কাজের মধ্যে ডুবেছিলেন। তাঁকে নিয়ে যখন জল্পনা-কল্পনা চলছিল, তখনই  সাদা গেঞ্জি গায়ে এলোমেলো চুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। লিখেছিলেন, ‘আই অ্যাম লাভ উইথ দিস ক্যারেক্টার।’

জানালেন বিপ্লব হায়দারের ‘আলী’ সিনেমায় অভিনয়ের খবর। ইরফান সজ্জাদ অভিনীত সেই সিনেমাটি আসছে ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। 

সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ইরফান সাজ্জাদ বলেন, ‘২০২৩ সালের জুলাইতে ‘আলী’ সিনেমার দৃশ্য ধারণ শুরু হয়েছিল। এ সিনেমায় শুটিংয়ের জন্য তিন মাস নতুন কোনো কাজই করিনি। শুধু চরিত্রের ভেতরেই ডুবে ছিলাম। এটি আপামর জনসাধারণের গল্প। সবাই এ গল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন। আমি যেহেতু নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি, তাই যতটা কষ্ট করার ও শ্রম দেওয়ার দিয়েছি।

পরিচালক বলেছেন, তিনি আলীকে আলীরূপে আমার মধ্যে যেভাবে দেখতে চেয়েছেন, ঠিক তাই পেয়েছেন। যে কারণে তিনি দারুণ খুশি। আমিও আলী চরিত্রটিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে ভীষণ আনন্দিত। সিনেমাটি নিয়ে বেশ আশাবাদী। শুনেছি, এটি ঈদে মুক্তি পাবে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে ভেবে ভালো লাগছে।’     

নিজের অভিনীত চরিত্র প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘আলী সিনেমায় আমি একজন বোবা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছি। যার কোনো সংলাপ নেই। শুধু সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করতে হয়েছে। এটি একটি বাণিজ্যিক সিনেমা হলেও এর নির্মাণশৈলী বেশ পরীক্ষামূলক। এখানে আমার অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। চেষ্টা করেছি আলী চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। কতটা পেরেছি সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকই তা ভালো বলতে পারবেন’।

২০১৩ সালে ‘ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান’ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু ইরফান সাজ্জাদের। লাখো প্রতিযোগীকে পাশ কাটিয়ে বিজয়ের মুকুট মাথায় তোলেন এ তরুণ। এরপর নাটক-টেলিছবিতে নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। অভিনয় ক্যারিয়ারে সাদিয়া ইসলাম মৌ, রিচি সোলায়মান, বিজরী বরকতুল্লাহ, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ অনেক গুণী অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে তাঁকে দেখা গেছে।

২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’। পরের বছর প্রেক্ষাগৃহে আসে ‘ভালোবাসা এমনই হয়’। তানিয়া আহমেদের পরিচালনায় এ সিনেমাটি দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এর অপেক্ষা করছিলেন ভালো গল্প ও চরিত্রের জন্য। সিনেমা দুটির মুক্তির অর্ধযুগ পর তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। গত বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘ভয়াল’। এটি পরিচালনা করেছেন বিপ্লব হায়দার। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে অনম বিশ্বাসের ‘ফুটবল ৭১’।

সরকারি অনুদানে নির্মিত ফুটবল ৭১ সিনেমায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বীরত্বগাথার পাশাপাশি থাকবে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের গল্প। শুধু ছোট পর্দা-সিনেমা নয়, ওটিটিতেও দেখিয়েছেন তাঁর অভিনয় মুনশিয়ানা। 

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ-তে মুক্তি পেয়েছে ইরফান সাজ্জাদ অভিনীত নাটকে ‘গ্যাংস্টার ব্রোস’। এটি এমন এক কনটেন্ট, যা শুধু গ্যাংস্টারদের গল্প নয়। এখানে  মানবতা, বন্ধুত্ব আর আত্মত্যাগের এক গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা সাজিব খান। এতে বজলু চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন ইরফান। নাটকটি নিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন এ অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে ফজলু চরিত্রে আছেন সাইদুর রহমান পাভেল। দু’জনকে ঘিরেই নাটকের গল্প এগিয়ে গেছে।

বর্তমানে ঈদ নাটক ও টেলিছবির কাজ করছেন ইরফান সাজ্জাদ। গতকাল ভিকি জাহেদের পরিচালনায় ‘সন্দেহ’ নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। আগের তুলনায় তিনি ছোট পর্দার কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। সিনেমা ও ওটিটিতেই ব্যস্ত থাকতে চান তিনি। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছেন এ তারকা অভিনেতা।  

দেখতে দেখতে কেটে গেল তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় এক দশক। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট, জানতে চাইলে ইরফান বলেন, ‘আমি যতটুকু অভিনয় করার সক্ষমতা রাখি, তার ৫০ শতাংশও করিনি। এখনও অনেক কিছু করার বাকি। অনেক কিছু শেখার আছে। চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে সবসময়ই চেষ্টা করছি। তারকা নয়, ভালো অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে বহুদূরে এগিয়ে যেতে চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইরফ ন স জ জ দ ইরফ ন স জ জ দ চর ত র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ