সংস্কারে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে বিএনপি: সালাহউদ্দিন
Published: 2nd, July 2025 GMT
সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য গঠনে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সামাজিক এবং সংবাদমাধ্যমে ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, বিএনপি সংস্কার চায় না। অথচ বিএনপি অনেক বিষয়ে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে একমত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্যের স্বার্থে।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংস্কারের ৪৭ সুপারিশের একটি বাদে সবগুলোতে একমত হয়েছে বিএনপি। একটি সামান্য ভিন্নমত জানিয়েছে। সংস্কার কমিশন দুদকের সার্চ কমিটির যেসব প্রস্তাব করেছে, এর প্রশংসা করেছে বিএনপি। কারণ, এতদিন দুদক ছিল বিরোধীদল দমনের হাতিয়ার।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৪৭ সুপারিশের ৪২টিতে বিএনপি একমত জানিয়েছে। শুধু নিম্ন আদালত নিয়ে কিছু সুপারিশে ভিন্ন জানিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ২৪৩ সুপারিশের ১৪১টিতে একমত হয়েছে বিএনপি। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২১৬ সুপারিশের ১৮৭টিতে একমত হয়েছে। বিএনপি ৯০ শতাংশের বেশি একমত। তারপরও বলা হচ্ছে, বিএনপির কারণে সংস্কারে ঐকমত্য হচ্ছে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিপরীতে বিএনপি বিস্তারিত মতামত দিয়েছে, যা অন্য কোনো দল দেয়নি। সরকারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে বিএনপি সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ চেয়েছে। ন্যায়পালের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। অথচ বাজারে রিউমার আছে- বিএনপির কারণে সমঝোতা হচ্ছে না।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, অর্থবিল, আস্থা ভোট, সংবিধান সংশোধন এবং জাতীয় নিরাপত্তা বাদে অন্য বিষয়ে এমপিরা স্বাধীনভাবে যেন ভোট দিতে পারেন, সে জন্য বিএনপি ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনে একমত হয়েছে।
বিএনপি ছাড় দিচ্ছে না, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ আমিই করেছি। বিএনপি চেয়েছিল, দু’বারের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে। কিন্তু ঐকমত্যের জন্য বিএনপি ১০ বছর মেয়াদ নির্ধারণে প্রস্তাব অনুমোদন করে।
তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছিল সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা হবে। ঐকমত্যের জন্য বিএনপিই বিশেষায়িত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে। আমার দেওয়া প্রস্তাবে, সবার ঐকমত্য হয়েছে।
সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে নিয়োগ কমিটি গঠনে এখনও রাজি নয় বিএনপি। একে অন্যান্য দল মৌলিক সংস্কার বলছে। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ৯০ ভাগের বেশি সংস্কার প্রস্তাবে একমত। শতভাগ বিষয়ে তো জোর করে একমত করা যাবে না। যদি শতভাগ বিষয়েই একমত হতে হয়- তাহলে আলোচনায় ডাকা হয় কেন?
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন ঐকমত য র জন য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৫৪ জন, যার মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ২৬৯ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৮৫ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, যার মধ্যে শিশু-কিশোরী ৬২ জন। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮১৯ নারী ও ৭৩৬ শিশু ও কিশোরী।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে।
বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জানান, কেবল জুনে ১১৬ নারী ও ৮৭ জন কন্যাসহ ২০৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৬৫ জনের মধ্যে কন্যাশিশু ৪৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮ জন, এদের মধ্যে ৫ জন কন্যা। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, যার মধ্যে ২ জন কন্যা। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ কন্যাশিশু।
উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৫ জন নারী ও কন্যা; যার মধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ১৩ জন কন্যাসহ ৬৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন কন্যাসহ ১১ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৩ নারী, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন ১ জন নারী। ৩ জন নারী অগ্নিদগ্ধ (যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে), যৌতুক নির্যাতনের শিকার ১ নারী এবং পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৬ কন্যাসহ ২২ জন। অপহরণ হয়েছে ২ কন্যা, সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১ জন এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি।
সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ কিশোরী। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৭ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার ৫১ জন। ৩১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২১ নারী ও কন্যাশিশু পাচার হয়েছেন। একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার। ৬১ কন্যাসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৩২০ নারী ও কন্যাশিশু।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সমকালকে বলেন, এ পরিসংখ্যান শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিশেষ করে কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা ও দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এটি সমাজের জন্য অ্যালার্মিং।
তিনি বলেন, ছয় মাসে হাজারের বেশি নারী-কন্যা নির্যাতনের শিকার হলেও মহিলা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আছিয়া ধর্ষণ মামলায় তড়িঘড়ি করে বিচার হয়েছে, কিন্তু ভালো তদন্ত না হওয়ায় পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এ ধরনের বিচারে দ্রুততা নয়, নির্ভুলতা জরুরি। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।