অনলাইনে শাড়ি কেনার কথা বলে ডেকে এনে লুট, গ্রেপ্তার ৪
Published: 15th, May 2025 GMT
প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে অনলাইনে শাড়ি বিক্রেতা দুই ব্যবসায়ী প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ৩১টি জামদানি শাড়ি খুইয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বুধবার রাজধানীর দক্ষিণখান থানার কসাইবাড়ীর হাজী মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মেহেদী হাসান ওরফে শাওন (২৪), মো.
দক্ষিণখান থানা–পুলিশ জানায়, ১২ মে বিকেলে জামদানি শাড়ি বিক্রির জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকার দক্ষিণখান মোল্লারটেক কসাইবাড়ী এলাকায় আসেন দুই ভাই- নুর মোহাম্মদ রাব্বি (২৪) ও তার বড় ভাই ছহিম (৩৫)। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘জামদানী গ্রাম’ নামের একটি পেজের মাধ্যমে জামদানি শাড়ি বিক্রি করতেন।
রাব্বির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাত এক নারী ক্রেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ওই ক্রেতা তার বোনের বিয়ের জন্য সাত-আটটি শাড়ি কিনতে চান বলে জানান এবং শাড়িগুলো যাচাই করে নেওয়ার কথা বলেন। এ সময় ২০-২৫টি জামদানি শাড়িসহ দক্ষিণখানের বটতলায় দেখা করতে বলেন ওই নারী। সরল বিশ্বাসে দুই ভাই ১২ মে সন্ধ্যায় মোট ৩১টি জামদানি শাড়ি নিয়ে নির্ধারিত স্থানে আসেন। সেখানে পৌঁছে ওই নারী ক্রেতাকে ফোন করলে তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর চারজন পুরুষ এসে নিজেদের ওই নারীর পরিচিত বলে পরিচয় দেন এবং একটি অন্ধকার গলির ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় সন্দেহ হওয়ায় রাব্বি শাড়িগুলো নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
আবার ওই নারী ফোন করে রাব্বিকে বলেন, তিনি এখন কসাইবাড়ী এলাকার কানাডা প্লাজার সামনে আছেন এবং সেখান থেকেই শাড়িগুলো কিনে নেবেন। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে দুই ভাই সেখানে পৌঁছালে ১০-১২ জনের একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি দিয়ে ও লাঠিপেটা করে ৩১টি জামদানি শাড়ির মধ্যে ১৯টি ছিনিয়ে নেয়। শাড়িগুলোর দাম প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বলে জানান রাব্বি।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রাব্বি ওই দিনই দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চার অভিযুক্তকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
এই প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ব্যবসায়ীদের নিশানা করে প্রতারণা ও ছিনতাই করে আসছিল বলে পুলিশ জানায়। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টপ ট জ মদ ন ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
গাফিলতি আর অসাবধানতায় প্রাণ হারাচ্ছে শিশু, জানে না সাঁতার
পারিবারিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন মা। এ সুযোগে কাউকে কিছু না বলে ১০ বছরের আফিয়া ও ৮ বছরের মিম বাড়ির পাশে নতুন খনন করা পুকুরে গোসল করতে নামে। ঘণ্টাখানেক পর পরিবারের লোকজন তাদের হদিস না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় পুকুরে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের বেদভিটা গ্রামে।
ঈদুল আজহা তখন বাকি তিন দিন। ২২ মাস বয়সী রাহাদ ও রিহান বাড়ির উঠানে খেলছিল। পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন পারিবারিক কাজে। এরইমধ্যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ির সামনে পুকুরে নেমে পড়ে তারা। যখন তাদের খোঁজ পড়ল, তখন তারা আর বেঁচে নেই। গত ৪ জুন কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
শুধু এ দুই ঘটনাই নয়, গত জুন মাসে জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয় শিশু। গত ১৫ মাসে মারা গেছে ১৫ জন। এর মধ্যে আট শিশু ও সাত কিশোর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের অসাবধানতা বা গাফিলতি দায়ী ছিল। সাঁতার না জানাও বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অপমৃত্যু এড়াতে সাবধানতার পাশাপাশি সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মো. মনির মল্লিক বলেন, শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর পেছনে প্রধানত পরিবারের অসচেতনতাই দায়ী। তাদের সার্বক্ষণিক নজরে রাখা এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এতে শিশু-কিশোররা দুর্ঘটনার শিকার হবে না। তিনি শিশুদের নিরাপদ রাখা এবং সার্বিক বিকাশে পরিবারের আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ১১ জুন লোহাগড়ার ঝিকড়া গ্রামের আবির তাজ ইমামের ২ বছরের মেয়ে আয়েশা পুকুরে ডুবে মারা যায়। ১০ জুন কালিয়ার ঘোষপাড়া এলাকার তারক ঘোষের সন্তান পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শ্রেষ্ঠ ঘোষসহ তিন বন্ধু নবগঙ্গা নদীতে ডুবে প্রাণ হারায়। সে সাঁতার জানত। ১ এপ্রিল লোহাগড়ার চাচই গ্রামে নানাবাড়িতে পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায় ফাতেমা সিদ্দিকা (৭)।
২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লোহাগড়ার পার-শানগর গ্রামের ফজলু রহমানের মেয়ে ফাতেমা খানম (২) ডুবে মারা যায়। পুকুরে ডুবে যাওয়ার আগে উঠানে খেলছিল সে। ৫ সেপ্টেম্বর লোহাগড়ার ছত্রহাজারি গ্রামে নানাবাড়ি বেড়াতে এসে আয়েশা (৩) পুকুরে ডুবে মারা যায়। সেও বাড়ির উঠানে খেলছিল। ১ আগস্ট সদরের শিমুলিয়া গ্রামের শফিকুল বিশ্বাসের ছেলে ১৫ মাস বয়সী আকিব বালতির পানিতে ডুবে মারা যায়। বালতি ধরে দাঁড়াতে গিয়ে তার মাথা নিচের দিকে চলে গেলে তার মৃত্যু হয়।
২৬ জুন নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে গিয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র আসমাউল মীরের মৃত্যু হয়। সে নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর এলাকার বিল্লাল মীরের ছেলে। ১৪ মে শহরের বরাশোলা এলাকার সাইফুর রহমানের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজ শেখ চিত্রা নদীতে ডুবে মারা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে নেমেছিল সে। ১১ মে সদরের নাকশি এলাকার সাইফুল শিকদারের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র রায়হান শিকদার নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ভালো সাঁতার না জানায় কলাগাছের অংশ ধরে ছিল। একপর্যায়ে সে নদীতে তলিয়ে গেলেও বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।
২০ এপ্রিল সদরের বাহির গ্রামের নূর জালাল মোল্যার দুই সন্তান তিন্নি (৫) ও তানহা (৩) ঘেরের পানিতে পড়ে মারা যায়। কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে ডুবে মারা যাওয়া রিহানের বাবা রিয়াজ শেখের ভাষ্য, বাড়িতে সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় রিহান ও চাচাতো ভাই রাহাদের বিষয়ে কারও খেয়াল ছিল না। তারা বাড়ির উঠানেই খেলছিল। পরে বাড়ির পাশের ডোবায় তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নড়াইল শহরের বরাশোলা এলাকায় চিত্রা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিহত রাজ শেখের কাকা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাড়ির পাশে হলেও রাজ কখনও নদীতে নামেনি, সে সাঁতারও জানত না।
অনেক অভিভাবক সন্তানের সাঁতার শেখাতে আগ্রহী নন এবং তাদের গাফিলতিও রয়েছে বলে মনে করেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে বার্ষিক সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য মাসব্যাপী ব্যবস্থা থাকে। গত মে মাসে ৮০ জনের বেশি শিশু-কিশোরকে সাঁতার শেখানো হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জুলাই থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার নড়াইল পৌরসভার পেছনে কালিদাস ট্যাঙ্ক পুকুরে পানি জীবাণুমুক্ত করে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা চলছে। স্থায়ীভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। কারণ প্রশিক্ষককে সম্মানী দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সাঁতার শেখা প্রত্যেক শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারিভাবে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে শেখানোর ধারণাটি সময়োপযোগী। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জেলা পর্যায়ে এসে সাঁতার শিখতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার না শিখিয়ে পুকুরে ছেড়ে না দিতে অভিভাবকদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।