কবরস্থান কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সভাপতি পদে ভোট
Published: 16th, May 2025 GMT
দুই প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ কবরস্থানে! শুনতে অবাক লাগলেও এমন একটি নির্বাচন নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচন, জেলা পরিষদ, উপজেলার পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের সঙ্গে পরিচিত এবং ভোটগ্রহণ দেখলেও কবরস্থান নিয়ে নির্বাচন এবং ভোটগ্রহণের কথা সম্ভবত কখনও শোনেননি বা ভোটও দেননি। তবে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় এমনই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে- একটি কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে!
ইতিমধ্যে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা করা হয়েছে তপশিল। শুধু কি তাই, ৩০ হাজার টাকা করে দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন কেনার পর দাখিল করেছেন। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ! প্রতীক ও প্রার্থীর ছবি সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। এই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উৎসবের আমেজও দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সভাপতি কে হবেন? এমন বিষয় নিয়ে দুইটি পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এলাকাবাসীরা দাবি করেন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আব্দুল মতিন মাস্টার নামের কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় তপশিল। বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষকে ভোটার করে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৮০০ জন ভোটার গোপন ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য গোরস্থান কমিটির ‘সভাপতি’ নির্বাচন করবেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আগামী ২৪ মে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ্ ময়দানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচন এলাকায় উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি করেছে। চলছে প্রার্থীদের আপ্যায়ন!
নির্বাচন কমিশন প্রধান ও কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাষ্টার জানান, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান পরিচালনা কমিটি গঠনে ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। বেশ কয়েকজন সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) স্মরণাপন্ন হই। তিনি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। অতঃপর আমাকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী তপশিল ঘোঘণা করার পর সভাপতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করার পর দাখিলও করেছেন। বাছাই শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী দুজন হলেন- আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)। দুটি মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। পরে পূর্বের কমিটি বিষয়টি আমাকে জানায়। এখনও দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া আর নেই
কিশোরগঞ্জের ইটনায় তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মনু মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর ভাতিজা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি (মনু মিয়া) দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়।
আরও পড়ুন৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া হাসপাতালের শয্যায়, ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা১৭ মে ২০২৫মনু মিয়ার স্বজনেরা বলেন, জীবনভর কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল হয়নি নিঃসন্তান মনু মিয়ার। ফলে শরীরে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হন তিনি। গত ১৪ মে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থতাবোধ করলে তাঁকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কারও মৃত্যুসংবাদ শুনেই ঝড়বৃষ্টি কিংবা রাত-বিরাত উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় খনন যন্ত্রপাতি নিয়ে মনু মিয়া ঘোড়ায় করে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। মানুষের অন্তিম যাত্রায় কবর তৈরি করতেন পরম যত্নে। ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করেছেন তিনি। এ জন্য কোনো সুবিধাও তিনি নেননি। মনু মিয়ার ডায়েরিতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই দীর্ঘ সময়ে তিনি অন্তত ৩ হাজার ৫৭টি খুঁড়েছেন।
কবর খুঁড়তে দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানি জমি বিক্রি করে কয়েক বছর আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। ঘোড়াটি সচল রেখেছিল তাঁকে। বাড়িতে মনু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগমের অনুপস্থিতিতে ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর দেশি-বিদেশ থেকে অনেকেই মনু মিয়াকে দামি ঘোড়াসহ নানা সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু মনু মিয়া কারও সহায়তা নিতে রাজি হননি। তিনি শুধু সবার কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন, আবার যাতে অন্যের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।
একজন সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে তাঁর কবর খোঁড়ার সুনাম আছে। শুধু কবর খনন করেই ক্ষান্ত হননি মনু মিয়া। এ পর্যন্ত যাঁদের কবর খুঁড়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর দিন-তারিখ সব লিখে রেখেছেন। মনু মিয়া সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আজ তাঁর লাশ দাফনের জন্য কবর খননের প্রস্তুতি চলছে। আজ বিকেলে নিজ এলাকায় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।