ঝালকাঠির রাজাপুরে নার্গিস বেগম (২৫) নামে সেই গৃহবধূর গরু ফিরিয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বেল্লাল হোসেন খান। তবে গরু ফিরিয়ে দেওয়ার আগে একটি কাগজে ২৬ হাজার ৬শত টাকা পাওনা আছে বলে ওই নারীর কাছ থেকে সই নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও গরু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় ওই নারীকে চড় থাপ্পড়ও মারা হয়। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে রাজাপুর শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা ঘিগরা মাদরাসায় এক সালিসি বৈঠকে গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ স্থায়ীভাবে দলের পদ থেকে বেল্লাল খানকে বহিষ্কার করেছে। 

অভিযুক্ত বেল্লাল খান (৫৮) উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে তিনি নিজেকে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেন। 

রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ ও সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, আপনি মো.

বেল্লাল হোসেন খান রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে জনৈক আবু বক্করের ( ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগমের স্বামী) পোষা গাভী (গরু) তার গোয়াল থেকে নিয়ে এসেছেন। যাহা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হই। আপনার এই কর্মকাণ্ড কোন সভ্যসমাজের আচরণ হতে পারে না। যেহেতু আপনি জেনে শুনে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছেন তাই দল আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সমস্ত পদ ও পদবী এবং দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।

স্থানীয়রা জানান,  বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজাপুর শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা ঘিগরা মাদরাসায় সালিসি বৈঠকে ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগমের কাছ থেকে একটি কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে ওই নারীর কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। পরে তার গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়। 

এ সময় অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেন খান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমনসহ স্থানীয় বিএনপি'র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগম বলেন, “আমি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করায় সালিসি বৈঠকে উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমন আমাকে থাপ্পড় মারেন। পরে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে আমার কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। পরে আমার গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়।” 

অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেন খান বলেন, “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে আমি গ্রান্টার হয়ে নার্গিস বেগমের স্বামী আবু বক্করের জন্য ২০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে দেই। সেই টাকা সুদে আসলে ৩০ হাজার টাকা হয়। সেই ঋণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। তাই বাধ্য হয়ে গরুটি নিয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে মুরুব্বীদের উপস্থিতিতে একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে স্বাক্ষর রেখে গরু ফেরৎ দিয়েছি।” 

গত বুধবার (১৫ মে) সকালে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে গরুটি নিয়ে যান বেল্লাল।

তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের আজিজ খানের ছেলে এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী। আবু বক্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। গরুটি ফেরত পেতে বৃহস্পতিবার সকালে গরুর বাছুর নিয়ে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় হাজির হন নার্গিস বেগম। সকালে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় অবস্থিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় তলায় একজন আইনজীবীর চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নার্গিস বেগম। এ সময় তার সঙ্গে শিশুসন্তানসহ গরুর বাছুরটি ছিল। নার্গিসের শিশুসন্তানটিকে বাছুরটি ধরে কান্না করতে দেখা যায়।

নার্গিস বেগমের অভিযোগ, “স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বেল্লাল ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না পেয়ে গরুটি নিয়ে গেছে। গরুর বাছুরটি মাকে হারিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে।” 

রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।” 

রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেল্লাল হোসেন খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা দলের জন্য লজ্জার।”

ঢাকা/অলোক/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র গ স ব গম র র জ প র উপজ ল ব এনপ র স ২৬ হ জ র

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে পুরোনো জাহাজের নিরাপত্তা সরঞ্জামের তিন দোকানে আগুন, মহাসড়কে যানজট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুরোনো জাহাজের নিরাপত্তা সরঞ্জামের (ফায়ার সেফটি আইটেম) তিনটি দোকান পুড়ে গেছে। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকার মেঘনা ব্যাংকসংলগ্ন শিবলী মার্কেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।  এ কারণে রাত সাড়ে আটটা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

মার্কেটটির মালিক উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কুতুব উদ্দিন। দোকানগুলোর মালিক মো. জয়নাল আবেদীন ও খোকন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানগুলোতে পুরোনো জাহাজের নিরাপত্তা সরঞ্জাম, শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ বিক্রি হতো।

পাশের ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, আগুন লাগার পর মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, এর ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

দোকান পুড়ে যাওয়ার সময় কুতুব উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে ফায়ার সার্ভিসের দেরি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, তবে কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে জানা যাবে। কেউ হতাহত হননি।

আগুন নেভানোর সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আজ রাত সাড়ে ১০টায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ