রাজশাহীতে গত এপ্রিল মাসের টিসিবির বরাদ্দে চাল থাকলেও ছাড় করা হয়নি। পরিবেশকেরা অন্য মালামাল পেলেও চাল পাননি। উপকারভোগীরাও চাল পাচ্ছেন না। কিন্তু অন্য মালামাল বিতরণের সময় সফটওয়্যারে ১০ কেজি চাল পেয়েছেন বলে তথ্য এন্ট্রি করা হচ্ছে।

টিসিবির পরিবেশকেরা বলছেন, চালের তথ্য না দিলে সফটওয়্যার এন্ট্রি নিচ্ছে না। তাঁরা জেলা প্রশাসকের বাণিজ্য শাখার পরামর্শ অনুযায়ী চালসহ বিতরণ দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিন গত সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সফটওয়্যার কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু করতে পারছি না।’

টিসিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর মিলে টিসিবির মোট উপকারভোগী কার্ড ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৪০টি। আওয়ামী লীগের নেতারা অনেক কার্ড ইচ্ছেমতো করে নিয়েছেন—এমন অভিযোগে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কার্ড অ্যাকটিভেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তিন মাস সময় দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় গিয়ে ফোন নম্বরে ওটিপি পাঠিয়ে যাচাই করার পর যে কার্ড পাওয়া গেছে, সেগুলোকেই অ্যাকটিভেটেড কার্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে। উপকারভোগীদের যাঁরা কার্ড নিয়ে উপস্থিত হননি, তাঁরা বাদ পড়েছেন।

বর্তমানে অ্যাকটিভেটেড কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৭টি। এই কার্ডের বিপরীতে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগরে পরিবেশক আছেন ৮১ জন ও জেলায় ১৪২ জন। তবে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ দেওয়া অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে টিসিবি থেকে অনুমোদনের পরও পরিবেশকদের চাল দেওয়া হয়নি।

টিসিবি সূত্র জানায়, গত ২৭ এপ্রিল পরিবেশকদের মালামাল দেওয়া শুরু করা হয়। কিন্তু পরিবেশকেরা চালের জন্য অপেক্ষা করায় বিতরণ করতে দেরি হয়। চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

টিসিবির এপ্রিল মাসের বরাদ্দের অনুমোদনপত্রে দেখা যায়, প্রত্যেক উপকারভোগী ২ লিটার ভোজ্যতেল, ১০ কেজি চাল, ২ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ পাবেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা, ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা ও তেল প্রতি লিটারের দাম ১০০ টাকা। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এ বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তমতে, টিসিবির অ্যাকটিভেটেড স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দ দিতে হবে। কার্ড ছাড়া কোনো বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

টিসিবি স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড সেবা পোর্টালের বিতরণ ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনা মেনুর মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসন বা টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধানের আইডি থেকে ডিলার অ্যাসাইন করতে বলা হয়েছে এবং সে মোতাবেক ডিলার ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই পণ্য প্রাপ্তি ও বিতরণের প্রকৃত হিসাব যুগ্ম পরিচালকের (সিএমএস ও বিওবি) মেইলে পাঠানো নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিতরণ শুরু করা হয়। এখনো শেষ হয়নি। পরিবেশকেরা পণ্য বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। ১০ কেজি চাল বিতরণ না দেখালে সফটওয়্যার এন্ট্রি নিচ্ছে না।

রাজশাহীর চারঘাটের মেসার্স রুনা রিমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মজিবর রহমান বলেন, এপ্রিল মাসের বরাদ্দে চাল দেওয়া হয়নি। কিন্তু সফটওয়্যার এন্ট্রি করতে গেলে চাল না দিলে হচ্ছে না। জেলা প্রশাসকের বাণিজ্যিক শাখার পরামর্শে বাধ্য হয়ে তাঁরা জনপ্রতি ১০ কেজি চাল দেখানো হয়েছে। আরও কয়েকজন পরিবেশক একই অভিযোগ করেন।

টিসিবির রাজশাহী কার্যালয়ের প্রধান আতিকুর রহমান বলেন, টিসিবি যথারীতি চালসহ চারটি নিত্যপণ্যের অনুমোদন দিয়েছে। জেলা প্রশাসন বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসনের বাণিজ্য শাখার একটি সূত্র বলছে, টিসিবির মালামাল সরবরাহ করা হয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে। বরাদ্দ অনুমোদনের পর তারা কেন চাল সরবরাহ করেনি, সে ব্যাপারে একটি চিঠিও দেওয়া হয়নি। এদিকে আগেই টিসিবি তাদের বিতরণের ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করে ফেলেছে। এ জন্য সফটওয়্যার চাল ছাড়া এন্ট্রি নিচ্ছে না।

যোগাযোগ করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় এপ্রিল মাসে চাল দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আগে পাঁচ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। এই প্রথমবার বরাদ্দ ১০ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ছিল না। এ জন্য সমস্যাটা হয়েছে। তিনি পরবর্তী মাসের সঙ্গে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ দিতে মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সফটওয় য র র অন ম দ বর দ দ দ ১০ ক জ প রথম ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

সফটওয়্যার কোম্পানির টাকায় যক্ষ্মা সম্মেলনে

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির কাছে অর্থ চেয়েছে। ওই কোম্পানির সঙ্গে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লেনদেন আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ক্রয় আইনের লঙ্ঘন। চারজন বিদেশগামী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁরা নিজের অর্থে সম্মেলনে যাচ্ছেন।

যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগের আন্তর্জাতিক বার্ষিক সম্মেলন ইউনিয়ন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। সম্মেলন শুরু হচ্ছে ১৮ নভেম্বর, শেষ হবে ২১ নভেম্বর। সারা বিশ্বের যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সদ্য সাবেক উপপরিচালক জোবায়দা নাসরিন ভারতের সফটওয়্যার কোম্পানি কিউর এআই-কে ৫ অক্টোবর চিঠি দিয়ে অর্থসহায়তার অনুরোধ করেন। বর্তমানে তিনি যক্ষ্মা ও কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপপরিচালক।

এটি স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়। যে কোম্পানির সঙ্গে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যবসা আছে, তার কাছে অর্থসহায়তা চাওয়া অনৈতিক। এটা সরকারি ক্রয়বিধির পরিপন্থী। আইনের লঙ্ঘন। এটা ভবিষ্যৎ ক্রয়প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। এটা গ্রহণযোগ্য না, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিটি যেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পাঁচ কর্মকর্তাকে ওই সম্মেলনে যোগদান নিশ্চিত করতে অর্থসহায়তা দেয়। কোম্পানিটির কাছে অর্থসহায়তা বাবদ ২২ হাজার ২৭০ ডলারের (প্রায় ২৭ লাখ টাকা) একটি বাজেটও দেওয়া হয়।

সফটওয়্যার কোম্পানির কাছে পাঁচজনের একটি নামের তালিকা পাঠানো হয়। তাঁরা হচ্ছেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপপরিচালক মো. শাফিন জব্বার, জাতীয় কর্মসূচি সমন্বয়ক রূপালি শিশির বাণু, যক্ষ্মা ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ উম্মে তাসনিম মালিহা, বিভাগীয় যক্ষ্মাবিশেষজ্ঞ (ঢাকা উত্তর) ফারজানা জামান এবং সহকারী পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ এফ এম মনিরুল হক। প্রথমজন সরকারি কর্মকর্তা। বাকি চারজন দাতা সংস্থা গ্লোবাল ফান্ডের কর্মকর্তা। এই চারজন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অফিসে বসে কাজ করলেও তাঁদের বেতন–ভাতা দেয় গ্লোবাল ফান্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এর আগে ২০২১–২২ ও ২০২২–২৩ অর্থবছরে কিউর এআইয়ের কাছ থেকে সফটওয়্যার কিনেছে। এই সফটওয়্যার কেনা হয় গ্লোবাল ফান্ডের টাকায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সফটওয়্যার যক্ষ্মা শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হয়।

সংশ্লিষ্ট একজন সরকারি, তিনজন বেসরকারি ও একজন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আরও সফটওয়্যার কেনার প্রক্রিয়া চলমান। কোন কোম্পানির কাছ থেকে তা কেনা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে একটি কোম্পানির কাছে অর্থসহায়তা চেয়ে জোবায়দা নাসরিনের এই চিঠি নানা সন্দেহ তৈরি করেছে।

তাঁরা কিছুই জানতেন নাযক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক ভাই গুগল, আরেক ভাই মেটায়
  • সফটওয়্যার কোম্পানির টাকায় যক্ষ্মা সম্মেলনে