রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দক্ষিণ এশীয় অভিজ্ঞতা
Published: 16th, May 2025 GMT
নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি কৌতূহল বাড়ার কথা আমরা জানি। বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক ভাবাদর্শের বেলায় রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তার প্রতি সহানুভূতি তৈরির পটভূমি হিসেবে কাজ করতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার সময় সেই রাজনীতির সংগঠকেরা ক্রমে আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের ওপর নজর রাখা দুরূহ হয়। অপ্রত্যাশিত আদলে তাদের পুনরুত্থান ঘটার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় চরমপন্থারও জন্ম হয়। আবার রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা অনেক ভাবাদর্শের বিকাশের পথ রুদ্ধও করে দেয়। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কী রকম অবস্থা তৈরি করবে, সেটা দেখতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
তবে বাংলাদেশে বা আশপাশের অঞ্চলে ইতিমধ্যে অনুরূপ যেসব নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে আছে, তার ফল এ-ও জানাচ্ছে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করে কোনো নির্দিষ্ট ভাবাদর্শ বা রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখা বেশ দুরূহ।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কথা দিয়ে শুরু করা যায়। ১৫ বছর এ দল অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞাতুল্য পরিবেশে ছিল। এমনকি শেষতক আইনি ফরমানেও নিষিদ্ধ করা হয়। তার ফল কী দাঁড়িয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) কাহিনিতেও ঘুরে আসতে পারি।
২০২৫ সালে আরএসএসের ৯৯ বছর বয়স হলো। এই দলকে থামাতে সেক্যুলার সমাজ চারবার নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারি করেছিল। এসব নিষেধাজ্ঞার বড় বড় পটভূমিও ছিল। ১৯৪৮ সালে গান্ধীকে হত্যায় তাদের কর্মীদের যোগসাজশ ছিল এক দফা নিষেধাজ্ঞার কারণ। ১৯৯২ সালে তারা একই ঝামেলায় পড়ে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে। কিন্তু পুনঃপুন নিষেধাজ্ঞার পরও আরএসএসকে থামানো-দমানো যায়নি। দেশটির ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তাদের সহযোগী দল বিজেপি এখন শাসক। কেন্দ্রেও আছে পরপর তৃতীয় মেয়াদে।
ভারতের এই নজির জানাচ্ছে সমাজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সমর্থনের অবশেষ থাকলে অপরাধমূলক কাজের পরও তাকে নিষিদ্ধ করে রাখা কঠিন। এর জন্য জনসমাজে নিবিড় সংলাপ দরকার। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের কাছে এসব আদর্শ ও অনুশীলনের উত্তম বিকল্প হাজির করার দীর্ঘ পরিক্রমা ছাড়া এদের পরাস্ত করার সংক্ষিপ্ত পথ নেই।
বিএনপির এখনকার নেতা তারেক রহমান বিগত বছরগুলোতে আদালতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার-নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। কিন্তু তিনি এখন দেশের প্রধান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন—এমনকি দেশে না থেকেও। মানুষ আপাতত বিএনপির অতীত শাসনামল নিয়েও কম ভাবে। এ রকম কেন ঘটে, কখন ঘটে, কীভাবে ঘটে, সেটা বুঝতে পারলে আমরাও বিতর্কিত রাজনৈতিক দল, ধারা ও আদর্শের গ্রহণ-বর্জনের উপায় নিয়ে আরও পুনর্ভাবনা করতে পারব।ভারতে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিও ২০০৯ থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আছে। কেবল নিষেধাজ্ঞাই নয়, ২১ বছর পুরোনো এই দলকে দেশের ‘প্রধান অভ্যন্তরীণ শত্রু’ আখ্যায়িত করে কংগ্রেস আমলে যে যুদ্ধ শুরু হয়, সেটা বিজেপি আমলে বাড়তি গতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন; কিন্তু অনেক রাজ্যে এই আদর্শবাদীদের এখনো বেশ ভালোমতো সক্রিয়তা ও প্রভাব আছে।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত আছে পাকিস্তানেও। পাঞ্জাবের টিএলপি বা তেহরিক–ই–লাব্বায়িককে সেখানকার সরকার ২০২১ সালে নিষিদ্ধ করে। পুলিশ হত্যার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ২০২১-এর আগে থেকে তাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলছিল। কিন্তু ২০২২ সালেই ‘ব্যান’ তুলে নিতে হয়। স্থানীয়ভাবে তাদের আবেদন এত বাড়তে শুরু করে যে প্রকাশ্যে কাজ করতে না দিয়ে উপায় ছিল না।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ৩০ লাখ ভোট পেয়ে তারা পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধান দলের মর্যাদা পায়। পুরোনো ইসলামপন্থী দল জামায়াতের চেয়েও দ্বিগুণ ভোট পায় তারা। উল্লেখ্য, জামায়াতও পাকিস্তানে একাধিক দফায় নিষিদ্ধ হয়েছে—যেভাবে বাংলাদেশে তারা একাধিকবার অনুরূপ অবস্থায় পড়েছিল। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে তাদের অনেক নেতার ফাঁসিও হয়েছে।
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা: ঝুঁকির দিকগুলো কী১৫ মে ২০২৫নিষেধাজ্ঞার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাইরেও জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠনকে দমিয়ে রাখতে বিগত সরকারের শাসনামলে হেন কিছু করা বাকি ছিল না। শিবির কর্মী সন্দেহে অনেক শিক্ষার্থী নাজেহাল ও নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু ২০২৪–এ এসে অন্তত পুরো দেশ দেখল প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নিষেধের মাঝে সংগঠন হিসেবে তারা ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের বিরোধী ভূমিকা ও অবস্থান সবারই জানা, এ নিয়ে অনেক অভিযোগও তোলা হয়েছে; কিন্তু দল হিসেবে তাদের এগিয়ে যাওয়া কমেনি, কমানো যায়নি।
পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের সমকালীন এসব উদাহরণ খুব সহজ যে প্রশ্ন হাজির করে তা হলো ফৌজদারি অন্যায়ে যুক্ততার ইমেজ সত্ত্বেও আরএসএস, টিএলপিসহ উল্লিখিত সবার জনভিত্তি বাড়ছে কেন? নিষেধাজ্ঞা কেন এসব দলকে থামাতে পারেনি? এমন কোনো মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে কি না, যার প্রভাবে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা সমাজে প্রত্যাশিত ফল দেয় না?
পদ্ধতিগতভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার শিক্ষা আছে প্রধানত সমাজবিজ্ঞানীদের। অনেক ধরনের ফৌজদারি অন্যায়, জুলুম, দুর্নীতির মালিকানার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার আগপর্যন্ত লীগ বিশেষ বিশেষ আদর্শবাদের কথাও বলত। নিষেধাজ্ঞার চাপে সেসব আদর্শকেও থামানো যাবে কি না, সে-ও বিবেচনা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানীদের সামনে থাকছে। আসলে রাজনীতি বা কোনো আদর্শ বা কোনো চিন্তার পরীক্ষাগার হলো জনসমাজ। সেখানে কোনো ভাবাদর্শ টিকে থাকবে কি না, তাতে কলি-ফুল-ফল ধরবে কি না, সেই অনুমোদন আসে সমাজের জমিন ও জল থেকে।
ঔপনিবেশিক আদলের রাষ্ট্রে বসবাস করা মানুষ মনমানসিকতায় রাষ্ট্রের প্রতি একরূপ বৈরীও হয়। এটাও দক্ষিণ এশিয়ার সমাজের একটা ধরন। ফলে রাষ্ট্র যদি ন্যায্যত ও কিছু পদক্ষেপ নেয়, সামাজিক মনন তাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটতে চায়। আবার জনসমাজ যদি কখনো তার ভেতর থেকে কোনো রাজনীতি প্রত্যাখ্যান বা এড়িয়ে যেতে চায়, তখন রাষ্ট্রীয় শত প্রচারেও তাকে টিকিয়ে রাখা যায় না। এককালের দাপুটে মুসলিম লীগের হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস প্রায় সবারই জানা। তবে রাষ্ট্রীয় ফরমানের তাৎক্ষণিক প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না। আবার আইন রাষ্ট্রের প্রধান ভিত্তি হলেও এটা মানুষের কালেকটিভ বিহেভিয়র বা সম্মিলিত আচরণ কতটা টেকসইভাবে বদলাতে পারে, সে বিষয়ে আজও বিতর্ক হয়।
লীগ সরকারের বিপুল চেষ্টার পরও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে কিন্তু মুছে ফেলা যায়নি। বাংলাদেশের সামাজিক মনস্তত্ত্বের কোনো ক্ষুধা বা প্রত্যাশা জিয়া যদি পূরণ করে থাকেন, তাহলে ইতিহাসে তাঁর একটা প্রভাব থেকে যাবে। একই কথা অন্য সব জাতীয় নেতার বেলাতেও সত্য।
বিএনপির এখনকার নেতা তারেক রহমান বিগত বছরগুলোতে আদালতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার-নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। কিন্তু তিনি এখন দেশের প্রধান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন—এমনকি দেশে না থেকেও। মানুষ আপাতত বিএনপির অতীত শাসনামল নিয়েও কম ভাবে। এ রকম কেন ঘটে, কখন ঘটে, কীভাবে ঘটে, সেটা বুঝতে পারলে আমরাও বিতর্কিত রাজনৈতিক দল, ধারা ও আদর্শের গ্রহণ-বর্জনের উপায় নিয়ে আরও পুনর্ভাবনা করতে পারব।
প্রসঙ্গক্রমে এ-ও বলতে হয়, যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই ফৌজদারি অপরাধের, গণ-অত্যাচার ও হত্যার নির্মোহ বিচার বাঞ্ছনীয়। এর সঙ্গে রাজনীতিকে অতিরিক্ত জড়িয়ে ফেললে বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। শাস্তিপ্রাপ্তদের দিকে জন-আবেগ বইতে শুরু করে। অতীতে এ রকম ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। নাথুরাম গডসে ভারতের অনেক জায়গায় পূজিত হতে শুরু করেছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৬-৭৭ সালে কলঙ্কিত নির্বাচন করেও এখনো সেখানকার সমাজে নায়ক হয়ে আছেন মুখ্যত জিয়াউল-উল-হকের জবরদস্তিমূলক বিচার ও ফাঁসির প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
বাংলাদেশে লীগের আমলে সংঘটিত বহু ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ রয়েছে সমাজে। ন্যায্য বিচারে সেসব শাস্তিযোগ্য হলে নিষেধাজ্ঞার নীতিগত যুক্তি সবল হতো। আবার গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনীতিবিদদের অন্যায়ের বিচারের সুযোগ জনগণ নিজ হাতে নিতে চায়। অন্যায় ও নিন্দনীয় ভূমিকা পালনকারী কোনো দলকে যদি নির্বাচন করতে দেওয়া হয় এবং জনগণ যদি তাকে ভোটে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সেই নিষেধাজ্ঞা হয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে প্রকৃতই শক্তিশালী এক বার্তা। সমাজের নিচ থেকে উঠে আসা সেই বার্তা খণ্ডনের বা তার বিরুদ্ধে বলার কিছুই থাকে না তখন দলটির। লীগের আপাতত সেই ঝুঁকি নেই।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ব দর শ ব এনপ র দর শ র অন য য় ধরন র আদর শ
এছাড়াও পড়ুন:
নৃশংসতার সেই রাতের ৯ বছর আজ
৯ বছর আগের এই দিনেই ঢাকার গুলশানের এক নিরিবিলি সন্ধ্যা রূপ নেয় বিভীষিকায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁ, হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সেই রাতে ২০ জন নিরীহ মানুষ নির্মমভাবে প্রাণ হারান জঙ্গিদের হাতে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন ইতালি, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন জঙ্গিদের নিক্ষেপ করা বোমায়।
রাতভর চলা সেই জিম্মি পরিস্থিতির অবসান ঘটে পরদিন সকালে, সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মাধ্যমে। ওই অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে।
হামলার দায় স্বীকার করে ওই রাতেই বিবৃতি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তৎকালীন সরকার আইএসের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।
নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ পেরিয়েছে। এ মামলায় বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টে রায় হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন দণ্ডিত আসামিরা, যা শুনানির অপেক্ষায়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ‘নব্য জেএমবির’ সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা গত মাসে (জুন) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক লিভ টু আপিল করেন বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় আসামির ক্ষেত্রে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে লিভ টু আপিলগুলো উপস্থাপন করা হবে।’
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। এঁদের মধ্যে আসলাম হোসেন গত বছরের ৬ জুন গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে কারারক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ওই কারাগারে কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে যায়। তখন কারারক্ষীদের গুলিতে মোট ৬ জন নিহত হন।
এই মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় গত ১৭ জুন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রাসঙ্গিক বিবরণে বলা হয়, তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ফরেনসিক, ব্যালিস্টিক, ডিএনএ ও ইমিগ্রেশন রিপোর্ট এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতৃত্বে অতি উগ্র অংশ নব্য জেএমবি পরিচয়ে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালায়।
সেই হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজন সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ২২ জনকে হত্যা করেছে বলে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে ওই পাঁচজন সন্ত্রাসী অপরাধী। তাঁদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁকে এই আইনের অধীনে বিচার শেষে ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ৬(২)(অ) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। বিচারিক আদালত ‘একই অভিপ্রায়ের’ বিষয়টি উল্লেখ করে আপিলকারীদের (সাত আসামি) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, তা সঠিক হয়নি। বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(আ) ধারায় সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
এদিকে হোলি আর্টিজানের সেই পুরোনো ঠিকানায় এখন আর আগের মতো কোনো রেস্তোরাঁ নেই। জায়গাটির মালিকপক্ষ পরবর্তী সময়ে রেস্তোরাঁটি আর চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে সেটি একটি আবাসিক ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ভবনের দেয়ালের ভেতর আজও জমে থাকা স্মৃতি কেউ কেউ ভুলতে পারেননি। সেই রাতের ঘটনা শুধু নিহতদের নয়, গোটা জাতির স্মৃতিতে আজও স্পষ্ট হয়ে আছে।