জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তির’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তানে এই অনুষ্ঠানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসছেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে গুলিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সামনে যুবশক্তির আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠান এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেবেন।

অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যুবশক্তির নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলের সামনের সড়কে জড়ো হচ্ছেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরাও এই অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেছেন। অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের কেউ কেউ এসেছেন। মঞ্চ থেকে মাইকে স্লোগান ও বক্তব্য চলছে। বেলা সোয়া তিনটায় মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী ছড়া আবৃত্তি করা হচ্ছিল।

অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে যুবশক্তির বৈশিষ্ট্য নিয়ে নানা বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারিও (তথ্যচিত্র) দেখানো হয়েছে। মঞ্চ থেকে ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বায়ান্নর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ প্রভৃতি স্লোগানের পাশাপাশি যুবশক্তির সাংগঠনিক স্লোগানও দেওয়া হচ্ছে৷ স্লোগানটি হলো ‘বাংলার শক্তি যুব শক্তি, যুব শক্তি জনতার মুক্তি’।

বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মঞ্চ থেকে এসব কার্যক্রম চলছিল আর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসছিলেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তির’ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বশক ত র অন ষ ঠ ন কর ম র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ