বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ, অডিও ফাঁস
Published: 16th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমুর কণ্ঠ সদৃশ একটি অনলাইন মিটিংয়ের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে তাকে ইসলামী ব্যাংক ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ চালানোর কথা বলতে শোনা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এমন বক্তব্যকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন।
শুক্রবার (১৬ মে) সকালে ৩ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আশরাফুল আলম এমু দেবীগঞ্জে সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
আরো পড়ুন:
নিখোঁজের ১৯ ঘণ্টা পর নদীতে ভেসে উঠল শিশুর লাশ
নারীর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল পোড়া
অডিওতে আশরাফুল আলম এমু সদৃশ কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, “আমি তো প্ল্যানিং নিচ্ছি- আমার এলাকায় যে কয়টা ইসলামী ব্যাংক আছে, এক রাতেই সব জ্বালিয়ে দেব। তবে, উপজেলা আওয়ামী লীগ যদি আমাকে সাহস না দেয়, পাশে না থাকে, তাহলে পারব না।”
তিনি বলেন, “৪৯৫টি উপজেলায় যদি একসঙ্গে রুখে দাঁড়াই এবং প্রত্যেক উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ ১০ নেতার বাড়িতে আগুন দেই, তাহলে ওরা এমনিতেই ভেঙে পড়বে।”
ভিডিওতে তাকে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, “পুলিশ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা রাস্তায় না নামলে পুলিশ সহযোগিতা করবে না। আমার এলাকাতেও পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ধরছে না। বিএনপি-জামায়াত চাপ দিলে তখনই ধরে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাংগঠনিক কাজে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাকে বাধা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি নিজে সাংগঠনিক কাজ করতে গেলেও আমাদের নেতারা বাধা দিচ্ছেন, বলছেন পুলিশের হয়রানি বাড়ছে।”
এ বিষয়ে জানতে দেবীগঞ্জে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমুর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দীন চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন তোবারক হ্যাপি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। দলীয়ভাবে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে।”
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বেলাল হোসেন বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি। প্রশাসনের উচিত এসব উসকানিদাতাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।”
ইসলামী ব্যাংকে অগ্নিসংযোগের হুমকি প্রসঙ্গে দেবীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। অিডিওটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ব এনপ উপজ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা