ভারত পাকিস্তকান যুদ্ধ আবহে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ফরাক্কা ব্যারেজ ও ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয়েছিল লাল সতর্কতা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজ পর্যন্ত ছিল পাকিস্তান সেনাদের নজরে। যুদ্ধের আগে আশঙ্কা ছিল মিসাইল হানার কিংবা আত্মঘাতী হামলার।

গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যারাজে যেকোন সময় যেকোন হামলা প্রতিহত করতে শুক্রবার থেকে শুরু হল সেনা মক ড্রিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের সংযোগকারী ফরাক্কা ব্যারেজ অঞ্চলকে আরো সুরক্ষিত করার জন্য আয়োজন করা হলো ‘মাল্টি এজেন্সি মক এক্সারসাইজ'।

ফারাক্কা ব্যারাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স বা সিআইএসএফ। কিন্তু এদিন এই মহড়ায় অংশ নেন বিএসএফ, সিআইএসএফ, রাজ্য পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের

মার্কিন পণ্যে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত: ট্রাম্প

ফরাক্কা ব্যারেজ, যা উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গকে গঙ্গা নদীর মাধ্যমে সংযুক্ত করে, সেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যদি কোনো অপ্রীতিকর বা সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটে, তা হলে কিভাবে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে-সেই কৌশলগত দিকগুলোই এদিনের মহড়ায় পরীক্ষা করা হয়।

মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্পে শুক্রবার দুপুরে হঠাৎই এক বিশাল নিরাপত্তা মহড়া চলতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা। আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পন্ন এই বাঁধে এমন মহড়া দেখে কেউ কেউ প্রথমে আতঙ্কিত হলেও পরে জানা যায়, এটি ছিল একটি পূর্ব-নির্ধারিত মক ড্রিল—অর্থাৎ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি প্রস্তুতিমূলক মহড়া।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি হলেও উত্তেজনার মাত্রা কিন্তু এখনও পুরোপুরি হ্রাস পায়নি। এই পরিস্থিতিতে শুধু সীমান্তবর্তী এলাকাই নয়, দেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো মজবুত করা হলো। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য তৈরি সুরক্ষা বাহিনী।

এদিন সিআইএসএফ এর সিনিয়র কমান্ড্যান্ট মুকেশ কুমার বলেন, “উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের সংযোগ রক্ষাকারী ফারাক্কা ব্যারেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে কোনো ধরনের অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আমাদের দেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তাই এখানকার সুরক্ষা  আগের থেকে মজবুত করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সীমান্তবর্তী অঞ্চলই যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। দেশের ভেতরেও এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যা খুবই স্পর্শকাতর। সেসব অঞ্চলের  সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।”

পাশাপাশি মুকেশ কুমার এলাকাবাসীর কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়ে বলেন, “এখানকার স্থানীয় লোকজন যদি ফরাক্কা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখতে পান তাহলে তৎক্ষণাৎ তা সুরক্ষা এজেন্সিগুলোকে জানানোর আবেদন রাখছি আমরা।”

সিআইএসএফ সূত্রের খবর, ফরাক্কা ব্যারেজের সুরক্ষাকে আরো মজবুত করতে আগের থেকে বেশিসংখ্যক সিআইএসএফ জওয়ান নিয়োগ করার পাশাপাশি যে সমস্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার অল্প কিছু ফাঁকফোকর ছিল সেখানে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ‘ডেইলি পেট্রোল’।

ঢাকা/সুচরিতা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত র জন য এল ক য স রক ষ ফর ক ক ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ

গাজা পরিস্থিতি নতুন এক সন্ধিক্ষণে এসে হাজির হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ দফার একটি পরিকল্পনা হাজির করেছেন। যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বলা হচ্ছে গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে, কিন্তু গাজাকে যেভাবে সাজানো বা পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

ইসরায়েল ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় রাজি। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষা হামাসের। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠনটির সামনে আরেকটি বড় পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে কতটা বিশ্বাস করা যায়?

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি যে পরিসংখ্যান, তা জাতিসংঘ স্বীকৃত এবং নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিবেদনগুলোয় নিয়মিত উদ্ধৃত হয়। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজার উপর চালিয়ে আসা ইসরায়েলি আগ্রাসনের আজ ৭২৪ তম দিনে এসে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৬৫,০০০। এই শতাব্দীর সবচে' নজিরবিহীন এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে মাত্র ১৭ বর্গ মাইলের উপত্যকাটি। এই সংখ্যা ভয়াবহ রকমের বিশাল কিন্তু এই সংখ্যা কেবলই বোমা হামলা, জায়নবাদী স্নাইপারদের গুলি কিংবা ভবন ধ্বংসের মতো আঘাতে প্রত্যক্ষভাবে নিহতদেরই পরিসংখ্যানমাত্র।

এর বাইরে ইসরায়েলি অবরোধের দরুণ অনাহারে ধীরে ধীরে প্রাণহানির শিকার, অসুস্থতায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ব্যক্তি যাদের মৃত্যু ওষুধের সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিরোধযোগ্য ছিল, কিন্তু অবরুদ্ধ অবস্থায় তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে, পঙ্গু ও অঙ্গহানির শিকার, যাদের নাড়াচাড়া করা কঠিন, কিংবা যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে অথচ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি সেসব ব্যক্তি, গর্ভেই যেসব শিশু সিজারিয়ান অপারেশন ও অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে তাদের সবার সংখ্যা হিসেব করলে এই প্রাণহানির পরিমাণ দাঁড়ায় বহুগুণ।

বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট কর্তৃক জুলাই ২০২৪- সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সরাসরি আঘাতজনিত কারণে সরকারি হিসাবে যে মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে মোট প্রাণহানির সংখ্যার মাত্র বিশ শতাংশ। অর্থাৎ, সরকারি হিসেব মতে প্রতিটি মৃতের বিপরীতে আরও চারজন মারা যাচ্ছেন ক্ষুধা, তৃষ্ণা অথবা চিকিৎসাহীনতায়। ফলত সরকারি হিসেব মতে ৬৫ হাজার শহীদের বিপরীতে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখের অধিক। এ সংখ্যা চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুরকালের হিসেবে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক অষ্টমাংশ। লাশের এই সমুদ্রসম সারি আর লাখ লাখ আহত নিয়ে পৃথিবীর ধ্বংসস্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপত্যকাটি।

সেই গাজা উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের সম্মিলিত চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পাকিস্তান, তুরস্ক, আরব উপসাগরীয় দেশগুলো এতে সমর্থন জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন করার কথাও জানিয়েছে। কিন্তু গাজার মূল শক্তি হামাস এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা আছে, গাজা হবে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল যা প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি হবে না, গাজাকে পুনর্গঠন করা হবে, ইসরায়েল ও গাজার প্রতিনিধিরা যদি এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে এই হামলা অবিলম্বে বন্ধ হবে, ইসরায়েল তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে, বন্দিমুক্তির প্রস্তুতি চলবে। এই সময়কালে সকল সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে, নতুন করে কোনও প্রকার আক্রমণ করা হবে না। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দী জীবিত ও মৃত ফেরত দেওয়া হবে। সব বন্দী মুক্ত হলে, ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দী এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় আটককৃত প্রায় ১,৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি প্রদান করবে।

এ পরিকল্পনার অধীনে হামাসের সদস্যদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র ত্যাগ করার শর্তে দায়মুক্তি দেওয়া হবে, অন্য যারা গাজা ছেড়ে যেতে চায় তাদের জন্য নিরাপদ প্যাসেজ প্রদান করা হবে। চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে গাজায় অবিলম্বে ত্রাণ ও রসদ পাঠানো হবে। গাজায় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা, তাতে ইসরায়েল অথবা হামাস হস্তক্ষেপ করবে না। রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে। গাজা একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক কমিটি দ্বারা শাসিত হবে। এই কমিটি গঠিত হবে নিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে নাম এসেছে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের। এর তদারকি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’।

এই বোর্ড অব পিস গাজার পুনর্গঠন ও বাজেট ব্যবস্থাপনা করবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করে। একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। কাউকেই গাজা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হবে না; হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর গাজার শাসনমূলক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ থাকবে না। গাজার সকল সামরিক, অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে না। গাজার নিরস্ত্রীকরণ করা হবে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে। আঞ্চলিক অংশীদারদের গ্যারান্টি দিতে হবে যাতে হামাস প্রতিবেশী অর্থাৎ ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) গঠন করা হবে। আইএসএফ ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে কাজ করবে। ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সীমান্ত এলাকাতেও তাদের দায়িত্ব থাকবে। ইসরায়েল গাজা দখল করবে না। আইএসএফ গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর, ইসরায়েল ধাপে ধাপে গাজা থেকে সরে যাবে এবং ইসরায়েলের সেনারা ধাপে ধাপে আইএসএফ বা গাজার অস্থায়ী প্রশাসনের হাতে এলাকা হস্তান্তর করবে। সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সামনে অগ্রসর হলে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাদের সংস্কার পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তৈরি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংলাপ শুরু করবে, যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি সহাবস্থান নিশ্চিত হয়। একটি স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের পথ তৈরি করা হবে।

সুস্পষ্টভাবেই এই চুক্তিতে একমত হওয়া হামাসের জন্য একপ্রকারের আত্মসমর্পণ। কিন্তু অনন্যোপায় হয়েই হামাসকে এ চুক্তি মানতে হবে। এই দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইকে অনন্তকালের জন্য অব্যাহত রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার নেতানিয়াহুর জন্যও এটা একপ্রকারের রাজনৈতিক পরাজয়ই বটে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি গাজাকে সমূলে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু এই ঘোষণায় একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট। নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা জুড়েই এর বিরোধিতা করেছেন। ইসরায়েলের জন্যও এ যুদ্ধ ছিল ব্যাপক ব্যয়বহুল এবং বহুলাংশেই ধ্বংসাত্মক। কিন্তু তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে পারেননি। যদিও তাকে পাশে রেখে এ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ট্রাম্প। এমনকি কাতারে হামলার জন্য দেশটির আমিরের কাছে ফোন করে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু নেতানিয়াহু আসলেই এই প্রস্তাবনায় বিশ্বাস করেন কি না তা সন্দেহজনক। আন্তর্জাতিক রীতি ও আইনকে উপেক্ষা করার দীর্ঘ প্রতারণামূলক ইতিহাস রয়েছে ইসরায়েলের। এই চুক্তি বাস্তবায়নে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের প্রশ্ন আছে। টেকনোক্র্যাট সেই শাসন বোর্ড এবং টনি ব্লেয়ারের ভূমিকাও নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছেন, এই প্রস্তাব হামাস মেনে না নিলে গাজাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার যে ইসরায়েলি পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করবেন। অথচ ফিলিস্তিনি জনগণের উপর এই পৃথিবীতে শতাব্দীর সবচে' বড়ো গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে কারোর বিচারের কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। বরং ঔপনিবেশিকতা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনাই সুস্পষ্ট। ফলে শেষ পর্যন্ত এই ঘোষণা ফিলিস্তিনে স্বস্তি ও শান্তি আনতে কতখানি ভূমিকা রাখবে তা এখনই সুস্পষ্টভাবে বলা কঠিন।

আরজু আহমাদ লেখক ও রাজনৈতিককর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ