আচমকাই ফরাক্কা ব্যারেজ ঘিরে ফেলল সেনা, এল কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ
Published: 16th, May 2025 GMT
ভারত পাকিস্তকান যুদ্ধ আবহে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ফরাক্কা ব্যারেজ ও ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয়েছিল লাল সতর্কতা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজ পর্যন্ত ছিল পাকিস্তান সেনাদের নজরে। যুদ্ধের আগে আশঙ্কা ছিল মিসাইল হানার কিংবা আত্মঘাতী হামলার।
গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যারাজে যেকোন সময় যেকোন হামলা প্রতিহত করতে শুক্রবার থেকে শুরু হল সেনা মক ড্রিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের সংযোগকারী ফরাক্কা ব্যারেজ অঞ্চলকে আরো সুরক্ষিত করার জন্য আয়োজন করা হলো ‘মাল্টি এজেন্সি মক এক্সারসাইজ'।
ফারাক্কা ব্যারাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স বা সিআইএসএফ। কিন্তু এদিন এই মহড়ায় অংশ নেন বিএসএফ, সিআইএসএফ, রাজ্য পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের
মার্কিন পণ্যে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত: ট্রাম্প
ফরাক্কা ব্যারেজ, যা উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গকে গঙ্গা নদীর মাধ্যমে সংযুক্ত করে, সেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যদি কোনো অপ্রীতিকর বা সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটে, তা হলে কিভাবে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে-সেই কৌশলগত দিকগুলোই এদিনের মহড়ায় পরীক্ষা করা হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্পে শুক্রবার দুপুরে হঠাৎই এক বিশাল নিরাপত্তা মহড়া চলতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা। আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পন্ন এই বাঁধে এমন মহড়া দেখে কেউ কেউ প্রথমে আতঙ্কিত হলেও পরে জানা যায়, এটি ছিল একটি পূর্ব-নির্ধারিত মক ড্রিল—অর্থাৎ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি প্রস্তুতিমূলক মহড়া।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি হলেও উত্তেজনার মাত্রা কিন্তু এখনও পুরোপুরি হ্রাস পায়নি। এই পরিস্থিতিতে শুধু সীমান্তবর্তী এলাকাই নয়, দেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো মজবুত করা হলো। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য তৈরি সুরক্ষা বাহিনী।
এদিন সিআইএসএফ এর সিনিয়র কমান্ড্যান্ট মুকেশ কুমার বলেন, “উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের সংযোগ রক্ষাকারী ফারাক্কা ব্যারেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে কোনো ধরনের অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আমাদের দেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তাই এখানকার সুরক্ষা আগের থেকে মজবুত করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সীমান্তবর্তী অঞ্চলই যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। দেশের ভেতরেও এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যা খুবই স্পর্শকাতর। সেসব অঞ্চলের সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
পাশাপাশি মুকেশ কুমার এলাকাবাসীর কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়ে বলেন, “এখানকার স্থানীয় লোকজন যদি ফরাক্কা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখতে পান তাহলে তৎক্ষণাৎ তা সুরক্ষা এজেন্সিগুলোকে জানানোর আবেদন রাখছি আমরা।”
সিআইএসএফ সূত্রের খবর, ফরাক্কা ব্যারেজের সুরক্ষাকে আরো মজবুত করতে আগের থেকে বেশিসংখ্যক সিআইএসএফ জওয়ান নিয়োগ করার পাশাপাশি যে সমস্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার অল্প কিছু ফাঁকফোকর ছিল সেখানে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ‘ডেইলি পেট্রোল’।
ঢাকা/সুচরিতা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত র জন য এল ক য স রক ষ ফর ক ক ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা শান্তি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দ্রুত অনুমোদনের দাবি কিছু আরব দেশের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘দ্রুত অনুমোদনে’র আহ্বান জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশ। গত শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানায়।
ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আগামী সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাভুটি উপলক্ষে শান্তি পরিকল্পনার একটি নতুন খসড়া তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবারের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি যাতে পাস হয়, এ জন্য ১৫ সদস্যের কাউন্সিল সদস্যের সঙ্গে গত সপ্তাহ থেকে আলোচনা শুরু করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে একই দিন গাজা নিয়ে একটি ভিন্ন খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করেছে রাশিয়া, যেখানে ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের উল্লেখ করা হয়নি। ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের সঙ্গে মস্কোর প্রস্তাবের কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি। তাদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তারা যেহেতু ওয়াশিংটনের বিকল্প প্রস্তাব প্রকাশ করেছে, তাই ওয়াশিংটনের প্রস্তাব পাস হবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই শঙ্কা থেকে মার্কিন কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাঁদের প্রস্তাব পাস না হলে ফিলিস্তিনিদের ‘ভয়াবহ পরিণত’ ভোগ করতে হতে পারে।
গত ১০ অক্টোবর ট্রাম্পের যে ২০ দফার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোকে কিছুটা সংস্কার করে নতুন খসড়া প্রস্তাবটি তৈরি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার খসড়াটির এক কপি বার্তা সংস্থা এএফপির হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবে ‘শান্তি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।’ এই বোর্ড ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত গাজায় অস্থায়ী প্রশাসনিক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এর চেয়ারম্যান হবেন ট্রাম্প। ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত এই বোর্ড কাজ করবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের খসড়া প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, গাজায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করা হবে। বিভিন্ন দেশের সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত এই অস্থায়ী বাহিনী ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। সীমান্ত এলাকা নিরাপদ রাখতে এবং গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্র করতে ফিলিস্তিনের নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকে সহায়তা করবে আইএসএফ। ট্রাম্পের আগের ২০ দফায় সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের উল্লেখ না থাকলেও নতুন খসড়ায় সেটার উল্লেখ আছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার ৩৭ বছরগতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার ৩৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে ফিলিস্তিন জাতীয় কাউন্সিলের এক বৈঠক থেকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, ‘বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা! তুরস্কের নাগরিক হিসেবে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের অচ্ছেদ্য অধিকার রক্ষা এবং তাঁদের ন্যায্য দাবির সমর্থনে অটল থাকব।’
এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩টির মধ্যে ১৫০টি সদস্যদেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কিছু শক্তিশালী দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই রাষ্ট্র সমাধানের আশা নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।