সাবেক ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তারে এসে নাজেহাল পুলিশ
Published: 16th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সাবেক এক ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তারে গিয়ে নাজেহাল হয়ে ফিরতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ থাকার পর ওই পুলিশ সদস্যরা এলাকা ছেড়ে যান। পুলিশের ভাষ্য, অন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে ধরতে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, আড়াইহাজারে সরকারি সফর আলী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো.
এ সময় স্থানীয় মুসুল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে পুলিশের কাছে জানতে চান, কেন আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হবে, তাঁর নামে কোন ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সদুত্তর দিতে পারেননি। সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ তাদের ঘেরাও করে রাখে। পরিস্থিতি অন্যদিকে গড়ানোর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পুলিশ সদস্যরা জানায়, আলাউদ্দিনকে আটক করতে তারা আর এলাকায় আসবেন না। ঘণ্টাখানেক তারা অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদের সহায়তায় পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে যান।
আলাউদ্দিনের ভাষ্য, তিনি এক সময় ছাত্রলীগ করতেন। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছর আগেই সংগঠনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সংসার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত নন। তারপরও শুক্রবার দুপুরে সাদা পোশাকে তিন পুলিশ সদস্য কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তারে এসেছিলেন। তাঁর ধারণা, ‘কারও প্ররোচনায় তারা এসেছিলেন। তখন আমি জুমার নামাজের জন্য মসজিদে ছিলাম। ভেতরে থাকাবস্থায়ই এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের কাছে আমাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চায়। তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে পুলিশকে সসম্মানে এলাকা থেকে বিদায় দেওয়া হয়।’
বক্তব্য জানতে এসআই আক্তারুজ্জামান ও এএসআই আমিনুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ধরেননি। গোপালদী তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক জাকির হোসেনের দাবি, ‘মানিকপুর এলাকায় একটি ওয়ারেন্ট তামিল করতে যায় পুলিশ। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়; এর বাইরে আর কিছুই না।’ তবে যে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল পুলিশ, তার নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি পরিদর্শক জাকির।
আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি বুঝিয়ে পুলিশ সদস্যরা চলে আসেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-অঞ্চল) মেহেদি হাসান বলেন, সাদা পোশাকে পুলিশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযান যেতে পারে। ওই দল দূরে অবস্থান করলেও অন্তত একজন পোশাকধারী পুলিশ থাকতে হয়। মানিকপুরে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ