সিলেট-১ আসনে দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারা দু’জন আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদিকে ‘ডা. জোবাইদা রহমানকে সাংসদ হিসাবে দেখতে চাই’ লেখা পোস্টার নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকে বলছেন, সিলেটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এটি বেনামি পোস্টার। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই।  

গত মঙ্গলবার রাত ১১টার পর হঠাৎ নগরীতে দেখা মেলে ডা.

জোবাইদা রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার। এতে জোবাইদা রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি আছে। এতে লেখা রয়েছে– ‘বাংলাদেশের অহংকার সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জোবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই’। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার, শাহি ঈদগাহ, সোবহানীঘাট, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এই পোস্টার। 
গত বুধবার পোস্টার সাঁটানোর সময় নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে আটক করা হয় চা দোকানি আব্দুল কাদিরকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব   কাদির দীর্ঘদিন ধরে পোস্টার সাঁটানোর কাজ করে আসছিলেন। তাঁকে আটক করে নগর ছাত্রদলের কিছু নেতা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। এমনকি কাদিরের ভাষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আপলোড করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রদলের একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। তবে কে বা কারা পোস্টারটি করেছে, তা জানা যায়নি। 

এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় এই পোস্টার দেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। কারা হঠাৎ এসব পোস্টার সাঁটাল, তাদের খুঁজতে থাকেন বিএনপির লোকজন। এখানে নির্বাচন করার জন্য মুক্তাদির ও আরিফুলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। অনেকের ধারণা, সিলেট বিএনপিতে বিভক্তি থাকায় জিয়া পরিবারের বাইরে কেউ এই আসনে নির্বাচন করলে পরাজয়ের আশঙ্কা আছে। 
আরিফুল হক সম্প্রতি লন্ডন সফরে যান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে, মুক্তাদির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডন যাবেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।  
ডা. জোবাইদার পোস্টার নগরীজুড়ে সাঁটানোর পর অনেকেই ফেসবুকে তাঁকে সিলেটের অভিভাবক হিসেবে  আখ্যায়িত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ডা. জোবাইদা সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করলে ঐক্যবদ্ধ হবে সিলেটের বিএনপি। 

আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন থেকে আসার পর নিজ বাসায় নেতাকর্মীকে বলেন, ‘তারেক রহমান সিলেটের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আগামী নির্বাচনে দলকে সিলেটের ১৯ আসন উপহার দিতে চাই। এ জন্য সিলেটের একজন অভিভাবক দরকার। আমি নেতার কাছে দাবি করেছি, এমন একজন নেতা দরকার, যাকে ঘিরে সিলেটে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সিলেট বিভাগের মানুষ আশার আলো দেখবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাউকে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি। এতে সিলেটবাসীর ১৭ বছরের বঞ্চনার অবসান হবে।’
পোস্টার প্রসঙ্গে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ডা. জোবাইদা রহমান সিলেটের কৃতীসন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসা, নির্বাচন করা অথবা সিলেট-১ আসন চাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু পরিচয়বিহীন পোস্টার লাগিয়ে তাঁকে প্রার্থী করার দাবি জানানোর প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট। নগরীজুড়ে সাঁটানো পোস্টারগুলো বেনামি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সিলেট বিএনপি এই মুহূর্তে দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আরেক পক্ষে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তারা দু’জনেই হাল ধরে আছেন বিএনপির। একজন দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। আরেকজন ছিলেন দু’বারের মেয়র। এ অবস্থায় তাদের প্রকাশ্য বিরোধ থামাতে হলে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে সিলেটের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটা পাল্টে যাবে। সিলেট হবে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত স ল ট ১ আসন ত র ক রহম ন ন ব এনপ ব এনপ র র জন য র র জন

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসাবিজ্ঞানে আলোর নানান রূপ

কেবল দেখার জন্যই যে আলো চাই, তা নয়। আলোর প্রয়োজন আরও বহু কাজে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানান শাখায় আলোকশক্তির ব্যবহার বহুমাত্রিক। রোগনির্ণয় ও রোগের চিকিৎসায় আলোর প্রযুক্তিগত ব্যবহার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানবকল্যাণে আলোর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

অণুবীক্ষণযন্ত্রে আলো

রোগের ধরন ও জীবাণু শনাক্ত করার কাজে অণুবীক্ষণযন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন। মাইক্রোস্কোপে লেন্সের সাহায্যে ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা যায়। ধরা যাক, কারও দেহে একটি টিউমার হয়েছে। টিউমারটি অস্ত্রোপচারের সাহায্যে অপসারণ করা হলো। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াজাত করে মাইক্রোস্কোপের নিচে এ টিউমারের ধরন পরীক্ষা করা যাবে। এ টিউমারের ভেতর যে কোষ রয়েছে, তা স্বাভাবিক কি না, এতে কোনো ক্যানসার কোষ আছে কি না কিংবা কোষের বিন্যাস কেমন—সবই জানা যাবে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে। কফ, প্রস্রাব, ক্ষতস্থানের রস প্রভৃতি নমুনায় জীবাণুর উপস্থিতি ও জীবাণুর ধরন নিশ্চিত করার জন্যও মাইক্রোস্কোপ আবশ্যক।

দর্পণে রোগনির্ণয়

দর্পণ বা আয়নায় আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগানো হয়। মুখের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করে দেখতে দন্তচিকিৎসকেরা দর্পণের সহায়তা নেন। মুখগহ্বরের একেবারে ভেতর পর্যন্ত বা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সহজেই দেখা যায় এসব দর্পণের সাহায্যে। রোগীও খুব একটা অস্বস্তি বোধ করেন না। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজেও দর্পণ ব্যবহার করা হয়।

এন্ডোস্কোপ ও কোলোনোস্কোপ

এন্ডোস্কোপ ও কোলোনোস্কোপে ব্যবহার করা হয় লেন্স। অর্থাৎ এখানেও রয়েছে আলোকপ্রযুক্তি। খাদ্যনালি বা পাকস্থলীর ভেতরটা দেখতে চিকিৎসককে সহায়তা করে এন্ডোস্কোপ। অন্যদিকে বৃহদান্ত্রের ভেতরটা দেখার জন্য কাজে আসে কোলোনোস্কোপ।

রোগনির্ণয়ে আলোর আরও ব্যবহার

রক্তে নানান কিছুর মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় স্পেকট্রোফটোমিটার নামের একটি যন্ত্র। একটি নমুনায় কোনো একটি নির্দিষ্ট উপাদান ঠিক কী পরিমাণে আছে, তা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকেই জানতে পারা যায় এ যন্ত্রের সাহায্যে। অন্যদিকে আবার এক্স–রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের ফিল্ম স্পষ্টভাবে দেখার জন্য যে বক্সে রাখা হয় (ভিউ বক্স), সেখানেও থাকে আলো।

চিকিৎসায় লেজার ও ফটোথেরাপি

নানান রোগের চিকিৎসায় লেজারপদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। এটিও আলোকশক্তিরই এক রূপ। চোখের সমস্যা সমাধানে যে ল্যাসিক করানো হয়, সেটি লেজারভিত্তিক একটি পদ্ধতি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যারও সমাধান হয় লেজারের সাহায্যে। নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসায় ফটোথেরাপি দেওয়া হয়। সেখানে ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি।

চোখের জন্য আরও আলো

চোখ পরীক্ষার সময় দূরের লেখা পড়তে বলা হয়। একজন ছয় মিটার দূর পর্যন্ত ঠিকভাবে পড়তে পারলে বলা হয়, তাঁর ‘ভিশন ৬/৬’। তাহলে কি সব চক্ষুবিশেষজ্ঞের চেম্বারের দৈর্ঘ্য ছয় মিটার হতেই হয়? না। একদমই তা নয়। তিন মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ঘরেই একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ এ পরীক্ষা করে ফেলতে পারেন অনায়াসে। কীভাবে, জানেন? আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে। তিন মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ঘরের দৈর্ঘ্য বরাবর এক প্রান্তে বসে থাকা একজন তাঁর পেছন দিকের দেয়ালে থাকা বর্ণগুলোকে তাঁর সামনে ঠিক বিপরীত দিকে রাখা আয়নায় কতটা স্পষ্টভাবে দেখতে পান, তা থেকেই বোঝা যায়, ছয় মিটার দূরত্বে তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেমন। কারণ, তাঁর পেছনের দেয়াল থেকে সামনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আলো আবার তাঁর চোখে ফেরত আসছে। অর্থাৎ আলোর অতিক্রান্ত পুরো পথের দূরত্ব ছয় মিটারই হচ্ছে। চোখের ভেতরকার বেশ কিছু পরীক্ষা করার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞরা একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন, যার নাম স্লিট ল্যাম্প। এতেও আছে আলোর ব্যবহার। আবার ধরুন, কারও রেটিনা, অপটিক ডিস্ক বা রক্তনালি দেখা প্রয়োজন। তখন একজন চিকিৎসক অফথ্যালমোস্কোপ নামে আরও একখানা ছোট যন্ত্রের সাহায্য নেন। এতেও হয় আলোর ব্যবহার।

অস্ত্রোপচারে আলো

অস্ত্রোপচারের টেবিলে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হয়, যাতে ছায়া না পড়ে। এর ফলে শল্যচিকিৎসক কাজটি করেন নির্বিঘ্নে। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসা করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় ক্যামেরাযুক্ত আলোক সরঞ্জাম। পেটে ছোট ছোট ছিদ্র করে এ সরঞ্জামের সাহায্যেই পেটের ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাইরে থেকে দেখতে পান একজন শল্যচিকিৎসক।

ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মি

ব্যথা সারাতে ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্য নেওয়া হয়। এটি আলোর এক বিশেষ রূপ। নির্দিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যমে দেহের নির্দিষ্ট অংশে এ রশ্মি প্রয়োগ করা হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।

অতিবেগুনি রশ্মি

কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কাজে অতিবেগুনি আলোকরশ্মি কাজে লাগানো যায়। নমুনায় নির্দিষ্ট জিনের উপস্থিতিও নির্ণয় করা যায় অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে।

ডা. রাফিয়া আলম: ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোমেডিসিন বিভাগ,
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৃত সন্তানকে নিয়ে গুলতেকিন খানের আবেগঘন পোস্ট
  • ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: কিছু প্রশ্ন ও প্রস্তাব
  • মেক্সিকোতে টিকটকে লাইভ করার সময় তরুণীকে গুলি করে হত্যা
  • দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে পুতিন ও আনোয়ার ইব্রাহিমের রসিকতা
  • সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: ইসলামের সঙ্গে কি সাংঘর্ষিক?
  • অটোরিকশা নয়, বন্ধ হচ্ছে জীবন
  • বান্দরবানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জিপ পাহাড়ি খাদে, নিহত ১
  • চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী একজনের পদত্যাগ
  • চিকিৎসাবিজ্ঞানে আলোর নানান রূপ