আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজটি ছিল পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতির অংশ। পরিস্থিতির কারণে সেটা এখন মূল সিরিজের গুরুত্ব পেয়েছে। এ রকম একটি দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারা লাভজনক লিটন কুমার দাসদের জন্য। মৌসুমের শুরুতে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারবেন সহজ প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে। এটা দুর্বল জায়গাগুলোতে ঘষামাজা করার সুযোগ পাকিস্তান সফরের আগে। যদিও ছোট প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চাপ নিয়ে খেলার ‘বাজে’ অভ্যাস আছে টাইগারদের, যেটা মাঝে মধ্যে অঘটনের মুখে ঠেলে দেয়। আমিরাতের বিপক্ষে তেমন কিছু হওয়ার শঙ্কা কম। কারণ এই দলটির বিপক্ষে খেলা বিগত তিন ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই আজ শারজাহ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রাত ৯টায় শুরু হওয়া প্রথম টি২০ ম্যাচে জয়ের ধারাবাহিকতা রাখতে চাইবে লিটন বাহিনী।
গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টি২০ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ওই সিরিজটি স্বপ্নের মতো গেছে দলের দিক থেকে। টি২০ ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করা বিশাল ব্যাপার। উইন্ডিজ সফরের পাঁচ মাস পর আরেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলা হচ্ছে। মাঝে টি২০ ক্রিকেট বলতে ছিল বিপিএল। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টি২০ ক্রিকেট খেলার ভেতরে ছিলেন তাওহীদ হৃদয়রা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও ছিল সাদা বলের খেলা। আমিরাতে যাওয়ার আগে ভালো স্কিল ট্রেনিং হয়েছে। সেন্টার উইকেটে স্ল্যান নিয়ে স্কিড বলে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন সৌম্য সরকাররা।
হৃদয়দের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। ফিল্ডিংয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে। আমিরাতের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ দিয়ে ২০২৫ সালের টি২০ মৌসুম যেমন শুরু হচ্ছে, তেমনি কয়েকজন কোচেরও অভিষেক হবে। বিশেষ করে, পেস বোলিং কোচ শন টেইটের অভিষেক সিরিজ এটি। পাকিস্তান সফরের আগে শরিফুল ইসলামদের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্টও বুঝতে পারবেন তাঁর দেওয়া পরিকল্পনা গেমের ফিল্ডিং বা ব্যাটিং কতটা কাজে লাগাতে পারছে।
২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে লিটন কুমার দাসকে অধিনায়ক করা হয়েছে। আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির শুরু বলা যায়। কারণ বিশ্বকাপের এক বছরও বাকি নেই। বাংলাদেশ এখন থেকে যে টি২০ সিরিজ খেলবে, তাতে বিশ্বকাপ গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে শক্তিশালী একটি স্কোয়াড গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন সিমন্স। যদিও ধাপে ধাপে বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন করা হতে পারে। তাসকিন আহমেদ চোট পরিচর্যায় থাকায় খেলছেন না। মুস্তাফিজুর রহমান আজ খেলার পর ভারতের বিমান ধরবেন। ১৮ থেকে ২৪ মে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলার ছাড়পত্র পেয়েছেন তিনি।
১৬ জনের স্কোয়াডে পাঁচজন ফাস্ট বোলার থাকায় মুস্তাফিজ চলে গেলেও শারজাহতে ১৯ মে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে সমস্যা হবে না। এ ছাড়া আমিরাতের কন্ডিশনে বেশি ফাস্ট বোলার খেলানোর সুযোগও নেই। স্পিন ও পেসের সমন্বয় করে খেলাতে হবে। আজকের ম্যাচে তিন পেসার নিলে মুস্তাফিজের সঙ্গে তানজিম সাকিব, শরিফুল ইসলাম বা নাহিদ রানার মধ্যে যে কোনো একজন খেলবেন। ব্যাটিং লাইনআপে থাকতে পারেন তানজিম হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয় ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের সঙ্গী শেখ মেহেদী। তবে পেসার দু’জন খেলালে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে দেখা যেতে পারে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।
চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’
পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।