বজ্রপাতে ৫ বছরে হবিগঞ্জে ৮১ জনের প্রাণহানি
Published: 17th, May 2025 GMT
হবিগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে গত ৫ বছরে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে ৫৫ জনই কৃষক। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ৬৮ শতাংশই কৃষক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ১২ মে মাঠে গরু চরাতে গিয়েছিলেন জেলার লাখাই উপজেলার স্বজনগ্রামের ৭০ বছরের আজগর আলী। কিন্তু প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি। আকস্মিক বজ্রপাতে মাঠেই প্রাণ হারান আজগর আলী। এর আগের দিন আজমিরীগঞ্জের ডেমিকান্দি গ্রামের যুবক সাজু মিয়া বাড়ির পাশে একটি খালে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। এভাবে প্রতিবছর হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ।
বিশেষ করে বোরো মৌসুমে ধান কাটতে হাওড়ে যাওয়া কৃষকরা বজ্রপাত আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতি বছরই জেলার কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হতভাগ্যদের বেশির ভাগই হাওড়ে ধান কাটতে যাওয়া কৃষক বা শ্রমিক।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়- ২০২১-২২ অর্থবছরে বজ্রপাত থেকে জানমাল রক্ষায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পে ১৫টি জেলায় ৩৩৫টি লাইটনিং এরেস্টার (বজ্রনিরোধক যন্ত্র) বসানো হয়। এতে ব্যয় হয় ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পের আওতায় হবিগঞ্জ জেলায় ৩৩টি এরেস্টার স্থাপনে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
এরমধ্যে বাহুবল উপজেলায় দুটি, নবীগঞ্জে ছয়টি, বানিয়াচঙ্গে ৭টি, আজমিরীগঞ্জে ছয়টি, হবিগঞ্জ সদর তিনটি, লাখাই তিনটি, শায়েস্তাগঞ্জে দুটি, চুনারুঘাটে দুটি ও মাধবপুর দুটি রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী- প্রতিটি যন্ত্র চারপাশের ১০৮ মিটার এলাকায় বজ্রপাত নিরোধ ও তথ্য সংরক্ষণ করবে। কোটি কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও মাঠে এর কার্যকারিতা আছে কি না তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এ পর্যন্ত যন্ত্রগুলো কতটি বজ্রপাত ঠেকাতে পেরেছে সে তথ্যও নেই সংশ্লিষ্ট অফিসে।
এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাদের রহমান বলেন, “এরেস্টারগুলো সচল কিনা বা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই।”
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড.
ঢাকা/মামুন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এর স ট র প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
পোশাক খাতে আগ্রহ কমছে নারী শ্রমিকদের
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত এটি এবং মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে এই খাত থেকে। পোশাক শিল্পের বিপ্লবের মূল ধারক-বাহক হলেন শ্রমিক। বিশেষ করে নারী শ্রমিক। তবে সেই পোশাক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ ক্রমশ কমছে।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে একসময় মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিল নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ। তবে বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে তা কমে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ উঠে এসেছে।
কলকারখানা ও শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসকল কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ নারী শ্রমিক।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১০ বছর আগে গার্মেন্টস কারখানায় কাজের ক্ষেত্রে নারীদের যে পরিমাণ অংশগ্রহণ ও আগ্রহ ছিল, তা এখন অনেকাংশে কমছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে বিভিন্ন কারখানার অন্তত ৫০ জন্য নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন বিষয়ে উঠে এসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সন্তান লালন পালনের অসুবিধা, স্বামীর আয়ের উৎসবৃদ্ধি, কম মজুরি, দীর্ঘ সময় কাজ করা, পারিবারিক দায়িত্ব পালন। এছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজে কাজের সুবিধা আরেকটি কারণ।
নারী শ্রমিকরা জানান, পোশাক শিল্পে কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় কারখানাতেই ব্যয় করতে হয়। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। কাজের দক্ষতা ও কর্ম ঘণ্টা অনুযায়ী মজুরি তুলনামূলক কম। পাশাপাশি প্রত্যেকটি কারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া হয়, এতে তাদের কাজের প্রতি অনিহা তৈরি হয়।
প্রযুক্তি খাত উন্নত হয়েছে, অথচ এসব শ্রমিকদের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। ফলে কর্মক্ষেত্রে দক্ষ হতে সময় লাগছে। এছাড়াও পোশাক কারখানার বাইরে অন্যান্য খাতে কাজের সুযোগ বেড়েছে। যেখানে কর্মঘণ্টা কম ও কাজের পরিবেশ ভালো। সেখানে কাজ করে পরিবারকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার সুযোগ থাকে।
অটোমেশন ও স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং সেক্টরগুলো মূলত পুরুষ শ্রমিকেরা পরিচালনা করেন। ফলে নারী শ্রমিকদের প্রভাব সেখানেও কমে গেছে। অটোমেশনের সময়ে দক্ষ হয়ে ওঠার মতো সময় ও সুযোগ নারীরা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই শিল্পে ১৯৮০ সালে নারী শ্রমিকের হার ছিল ৮০ শতাংশ। যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়ায় ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রথম দিকে কম বেতনের চাকরি হলেও অনেক নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে তারা করতে চান না।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার তাসলিমা খাতুন। ১০ বছর আগে গাজীপুরে এসেছিলেন চাকরি করতে। তারপর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কারখানায় কাজ করেছেন। সেসময়ে ছোট্ট সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করতেন। দেড় বছর ধরে তিনি আর কাজ করেন না।
তিনি বলেন, “দুজনে পরিশ্রম করে কিছু টাকা জমা করেছি। তখন পরিশ্রম গায়ে সইতো, এখন চাপ নিতে কষ্ট হয়। এরমধ্যে ছেলে বড় হয়ে গেছে, ওরে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। ছেলেকে মানুষ করতে হবে এজন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।”
শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মী তাসলিমা আক্তার বলেন, “নারী শ্রমিকদের অটোমেশনে দক্ষ হতে যে মনোযোগ দিতে হয়, ঘরে-বাইরে কাজ করে তা দেওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণেও নারী শ্রমিক এ খাতে কমে যাচ্ছে। এছাড়া কর্মপরিবেশ, মাতৃকালীন ছুটি ও ডে কেয়ার ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করা দরকার।”
জামালপুর থেকে একযুগ আগে স্বামী-স্ত্রী চলে আসেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায়। এরপর দু'জন চাকরি করেন বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। স্বামী আলফাজ হোসেন বলেন, “প্রথম যখন গাজীপুরে কাজ করতে আসি বেতন খুব কম ছিল। দু'জনে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম এবং কিছু করে সঞ্চয় করতাম। এখন বেতন বেড়েছে, সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গ্রামে জমি করেছি। গতবছর আমার স্ত্রীকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ সে আর গার্মেন্টসে কাজ করতে চায় না। শরীরও আগের মতো চাপ নিতে পারে না।”
শ্রমিক নেতা অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনের সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, “আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় একটি চালিকাশক্তি হলো পোশাক শিল্প। এই খাতেই বড় অংশ শ্রমিক নারী। কিন্তু, আজ প্রশ্ন উঠছে- যখন নারীরা সংখ্যায় এত বেশি, তখন কেন তারা নেতৃত্বে এত কম। কাজ শেষে পরিবার সামলানো, সন্তান লালন পালন করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও স্বামীর স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে অনেকেই চাকরি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। তারা পরিবারকে সময় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এসব নানা কারণে নারীদের অংশগ্রহণ কমছে।”
ঢাকা/এস