আমি শিমলার এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি: অনুপম খের
Published: 17th, May 2025 GMT
ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের ছাদে দেখা হয়ে গেল বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরের সঙ্গে। হাস্যবদনে নীল রঙ্গের স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সামনে ক্যামেরা, পাশে কানের উৎসব ভিড়, আর দূরে সাগরের নীল জলরাশি। এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন নিজের পরিচালিত ছবি ‘তানভি দ্য গ্রেট’ নিয়ে। এই সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়েই কথা হয় তার সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনি তো এত বছর ধরে অভিনয় করে এসেছেন, হঠাৎ আবার পরিচালনায় ফেরা কেন?
অনুপম খের: (হাসি দিয়ে) ‘হঠাৎ’ বলা ঠিক হবে না। আমার মধ্যে পরিচালকটা সবসময় ছিল। ২০০২ সালে ওম জয় জগদীশ বানিয়েছিলাম, তখন থেকেই ভাবছিলাম, আরেকটা বানাবো। কিন্তু অভিনয়ের ব্যস্ততা, সময় আর সাহস—এই তিনটে একসঙ্গে জোগাড় করতে একটু সময় লেগে গেল। তানভি দ্য গ্রেট এমন একটা গল্প, যেটা না বললেই নয়।
প্রশ্ন: ছবিটা সম্পর্কে একটু বলবেন?
অনুপম খের: এটা এক তরুণী মেয়ের আত্ম-আবিষ্কারের গল্প। নাম তানভি। ছোট শহরের মেয়ে, কিন্তু স্বপ্ন বড়। ওর আত্মবিশ্বাস, সাহস, আর পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতাই এই ছবির প্রাণ। তানভির চরিত্রে অভিনয় করেছে শুভাঙ্গী দত্ত, একেবারে নতুন মুখ। কিন্তু ওর চোখে আমি যে আগুন দেখেছি, তা বহু অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর মধ্যেও পাইনি।
প্রশ্ন: ‘তানভি দ্য গ্রেট’ ছবিটি কানে প্রদর্শিত হচ্ছে। অনুভূতি কেমন?
অনুপম খের: এটা স্বপ্নের মতো। আমি চার দশক ধরে অভিনয় করছি, ৫০০-এর বেশি সিনেমায় কাজ করেছি। কিন্তু এই প্রথম কানে আমার ছবি স্ক্রিনিং হলো, আর সেটা আমার পরিচালনায়! এটা শুধুই সম্মান নয়, এটা একধরনের নতুন শুরু।
প্রশ্ন: আপনি শুধু পরিচালনা-প্রযোজনাই করেননি, অভিনয়ও করেছেন এই ছবিতে। এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
অনুপম খের: খুব চ্যালেঞ্জিং। পরিচালক হিসেবে আপনি চাইবেন সবকিছু ঠিকঠাক হোক। আবার অভিনেতা হিসেবে আপনাকে নিজের চরিত্রে ডুবে যেতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হতো, নিজের সাথেই লড়াই করছি! (হাসেন) তবে আমার অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে। টিমের সবাই অসাধারণ সাপোর্ট দিয়েছে।
প্রশ্ন: ছবিতে আইয়েন গ্লেন, বোমান ইরানি, জ্যাকি শ্রফের মতো তারকারা আছেন। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল?
অনুপম খের: অসাধারণ! আমি বরাবর বিশ্বাস করি, ভালো সিনেমা তখনই হয়, যখন টিম ভালো হয়। আইয়েন গ্লেনের মতো আন্তর্জাতিক তারকা এবং আমাদের বোমান-জ্যাকি—সবাই ছবির ভেতরে নিজেদের ঢেলে দিয়েছেন। এটা তাদের ভালোবাসা ও আস্থার ফল।
প্রশ্ন: বলিউডের সিনেমা ও সেখানকার সিনেমার গল্প নিয়ে এখন সমালোচনা হয় এটা আপনি কিভাবে দেখছেন?
অনুপম খের: সমালোচনার যৌক্তিক কারণও কিন্তু রয়েছে। সিনেমার জন্য দরকার ভালো গল্প। ভালো গল্প বিশ্বের সব জায়গাতেই কদর রয়েছে। বলিউড ভালো গল্প থেকে ক্রমেই সরে আসছে।
তবে এ থেকে দ্রুত উত্তরণের সময়ও আছে। এখনই দ্রুত উত্তরণের পথে হাটতে হবে। না হলে ফলাফল কি হবে তা সবাই দেখতেই পারছেন।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের জন্য আপনার বার্তা কী?
অনুপম খের: নিজেকে ছোট ভাবো না। সুযোগ নিজের হাতে তৈরি করতে হয়। আমি শিমলার এক সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। প্রথম সিনেমায় (সারাংশ) ২৮ বছর বয়সে ৬৫ বছরের বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সাহসটা রাখতে হয়। আর হ্যাঁ—সবসময় শিখতে থাকো। আমি এখনও শিখছি।
প্রশ্ন: আপনি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলবেন?
অনুপম খের: অবশ্যই। বাংলাদেশকে আমি খুব পছন্দ করি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মধুখালীর আগাম লিচুতে খরার ধাক্কা, তবু চাষিদের মুখে উৎসবের হাসি
ফরিদপুরের মধুখালীর জাহাপুরের লিচু রসালো ও সুস্বাদু। এ ছাড়া আবহাওয়াগত কারণে এখানকার লিচু পাকে দেশের অন্য এলাকার আগেই। এর ফলে মৌসুমের শুরুতেই জাহাপুরের লিচুর কদর বাড়ে। এই লিচুর বৈশিষ্ট্য—রং ও মান ভালো, খেতে সুস্বাদু, দামও সহনীয়। জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর, দপ্তরদিয়া, টেংরাকান্দি, মনোহরদিয়া, চর মনোহরদিয়া, খাড়াকান্দি ও মির্জাকান্দি গ্রামে লিচুর আবাদ বেশি।
তবে চলতি বছর খরার কারণে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়নি। আকারে ছোট, মিষ্টিও কম। গরমে ফেটে পড়ায় উৎপাদন কমেছে। তবুও এলাকায় লিচু নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার ঘাটতি নেই। জাহাপুর গ্রামে ১০৪ শতাংশ জমিতে লিচুবাগান করেছেন ওয়াদুদ মাতুব্বর (৫৫)। তিনি অন্তত ৩০ বছর ধরে লিচুবাগান করছেন। ১১ মে সরেজমিনে দেখা যায়, স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫), ছেলেমেয়ে ও প্রতিবেশীরা বাগানে বসে লিচুর আঁটি বাঁধছেন। এমনকি পাশের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে জামাতা জাহিদ খানও (৩৮) এসেছেন।
জামাতা জাহিদ খান বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি লিচু ভাঙার সময় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। আঁটি বাঁধা তাঁর কাছে কষ্ট নয়, বরং উৎসবের মতো।
ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়নি। অন্যবারের থেকে ফলন তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। লিচু আকারে ছোট হয়েছে, মিষ্টিও তেমন হয়নি। তাঁর স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, অনেকে মনে করেন, লিচু উৎপাদনে কোনো খাটনি নেই, সহজ কাম। কিন্তু লিচুর মুকুল আসার পর থেকে লিচু নামানোর আগপর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক, কীটনাশক, ছত্রাক দূর করতে অন্তত এ জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরার জন্য লিচুর ফলন ভালো হয়নি। মাঘ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি হলে এত খারাপ অবস্থা হতো না। ওই সময় লিচুর জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এক ফোটা বৃষ্টিও হয়নি।
পাইকারি বিক্রেতা দোহার এলাকার মো. হাশেম (৪২) জানান, জাহাপুরের লিচু আগে পাকে। এ জন্য এর কদর মৌসুমের শুরুতে বেশি। ঢাকা, বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলায় যায়।
শ্রমিক খরচ বেশি, তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎসবের মতো কাজ করছেন লিচুচাষিরা