পেশাদার লিগে প্রথমবার এবং বাংলাদেশ ফুটবল লিগে ২২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হলো মেডামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। শনিবার ফর্টিস এফসির বিপক্ষে আবাহনী ২-১ গোলে হারায় তিন ম্যাচ হাতে রেখে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৯ মিনিটে লিড নেয় ফর্টিস এফসি। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৭ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করে ফর্টিস। তার দুই মিনিট আগেই ওমর সজীবের লাল কার্ডে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় পড়ে যায় ফর্টিস। ৮০ মিনিটে এক গোল হজমও করে তারা।
ফর্টিস জিততেই আবাহনীর সঙ্গে ১০ পয়েন্টের ব্যবধান তৈরি হয় মোহামেডাদের। অর্থাৎ লিগে বাকি থাকা শেষ তিন ম্যাচে মোহামেডান হারলেও শিরোপা হারাবে না তারা। ২০০৭ সালে পেশাদার ফুটবল লিগ নামকরণ হওয়ার পর ১৮ বছরে এই শিরোপা জিততে পারেনি মোহামেডান। ২০০২ সালের পর এটিই তাদের একমাত্র ফুটবল লিগের শিরোপা।
গত মৌসুমেও লিগ জয়ের ভালো সম্ভাবনা জাগিয়েছিল মোহামেডান। কিন্তু শেষ টানতে পারেনি তারা। ম্যাচ জয়ের পথটা ফর্টিসের জন্য অবশ্য বৃষ্টি কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। ১৮ মিনিটে বৃষ্টি ও বজ্রপাতে ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হওয়ার প্রথম মিনিটেই পেনাল্টি পায় ফর্টিস, গোলও করে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল ফর ট স
এছাড়াও পড়ুন:
পশুবাহিত রোগে উদ্বেগ
পশুর দেহের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে যেসব রোগ হয় সেগুলোকে পশুবাহিত রোগ বা ইংরেজিতে জুনোটিক ডিজিজ বলে। সংক্রামিত পশু থেকে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে নানাভাবে, যেমন– ছোঁয়ার মাধ্যমে, কামড় দিলে, আঁচড় দিলে, কাঁচা বা অর্ধরান্না করা খাবার খেলে, দূষিত পানি পান করলে, জীবাণুযুক্ত বাতাসের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে।
কুকুরের কামড় থেকে র্যাবিস ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক হয়। প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। তার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে বার্ড ফ্লু। এটি ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা। এটি পোলট্রি ফার্ম বা বন্যপাখি থেকে মানবদেহে ছড়ায়। তা ছাড়া নিপাহ ভাইরাস ফলবাগানের বাদুড়ের লালা, মল-মূত্র বা রক্ত দ্বারা সংক্রামিত মানুষের খাবারের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত মানুষ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট ইত্যাদিতে ভোগে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই মারা যায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এতে উচ্চ তাপমাত্রা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র্যাশ, মাংশপেশি ও হাড়ে ব্যথা, বমি, রক্তবমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
রোটা ভাইরাসও গৃহপালিত পশু, যেমন– গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বাহিত রোগ বলে গবেষকরা মনে করেন। শিশুরা মূলত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের কারণে এতে প্রচণ্ড ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানবদেহ ও পশুর মলের সংস্পর্শে ছড়ায়।
পশুবাহিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রতিকার নীতি মানতে হবে। যেমন– ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। হাত ধুতে হবে। পরিধেয় কাপড়, বিছানাপত্র, আসবাব, বাড়িঘর, আশপাশ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। সব ধরনের খাবার/পানি টাটকা, জীবাণুমুক্ত, ভালো করে রান্না করে বা ফুটিয়ে খেতে হবে। আশপাশের সব পশু-পাখিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লালন-পালন করতে হবে। বাড়ি ও আশপাশের স্যানিটেশন ও ময়লা ব্যবস্থাপনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নিয়মিত পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে। সব ধরনের গৃহপালিত পশুপাখিকে নিয়মানুযায়ী ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাস্তার সব কুকুর-বিড়ালকে মাস-ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, হাটবাজার সব স্থানে প্রথমে সচেতনতা ও পরে আইন প্রয়োগ করতে হবে। বন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দেশের সব স্তরের মানুষকে নিজ নিজ স্থান থেকে বিবেচনা করে সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিবছর দেশে পশুবাহিত রোগের কারণে ওষুধ-হাসপাতাল-চিকিৎসকের খরচ, ইনকাম লস, সঞ্চিত অর্থ ব্যয়, সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকি, পশু-পাখির ক্ষতি, খাদ্যে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মিলে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই এই রাহু থেকে বাঁচতে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে।
ডা. গোলাম শওকত হোসেন: গবেষক ও কলাম লেখক