কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর মাহবুব আলম টুটুল (৩২) নামে এক যুবক বিষপানে ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৭ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের মেছোপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রত্না খাতুন (২৫) একই গ্রামের আমোদ মল্লিকের মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রত্না খাতুনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের বাহির বোয়ালদহ গ্রামের ওমর আলীর ছেলে মাহবুব আলম টুটুলের প্রায় নয় বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সাত বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে প্রথম স্বামীর সংসার ছেড়ে রত্না খাতুন অন্যত্র বিয়ে করেন। সেখানে মাস খানেক সংসার করার পর দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে রত্নার বিচ্ছেদ হয়। এক সপ্তাহ আগে তিনি আবারো প্রথম স্বামী টুটুলের কাছে ফিরে আসেন।

আরো পড়ুন:

টঙ্গী ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

চিত্তরঞ্জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, প্রেমিকার বাবা-মা ও ভাবি গ্রেপ্তার

নিহতের বোন মরিয়ম বলেন, ‘‘গত রবিবার রত্না টুটুলকে আবারো বিয়ে করেন। কিন্তু, দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে এখনো রত্নার সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করতেন টুটুল। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। শনিবার দুপুরেও দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে টুটুল ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে রত্নাকে হত্যা করেন। এরপর তিনি নিজেও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।’’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, ‘‘মৃত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার বুকে ও পেটে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ফুসফুসে আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, ওই গৃহবধূর স্বামীও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’’

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহত গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’’

ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট ওসমানী হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ওয়ার্ডের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।

স্বজনদের ভাষ্য, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় দুই প্রসূতির প্রসববেদনা ওঠে। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে স্বজনসহ অন্যদের সহযোগিতায় তাঁরা বারান্দায় সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্যে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় তাঁরা শয্যা পাননি। দুই প্রসূতি জরুরি অবস্থায় গিয়েছিলেন। ভিড় থাকায় ভেতরে জরুরি অবস্থার বিষয়টি তাঁরা জানাতে পারেননি। এক প্রসূতি সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দেওয়ায় নবজাতকটিকে বাঁচানো যায়নি। তবে মা সুস্থ আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের চাটিবহর গ্রামের শাহিন মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম (১৯) ও গোলাপগঞ্জের দক্ষিণ রামপাশা গ্রামের রতন চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুপ্রিতা রানী দাস (২৫) বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে সুমি বেগমের সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। দুই প্রসূতি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সুমি বেগমের মা রাজিয়া বেগম জানান, মেয়েকে বুধবার বেলা তিনটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর জায়গা পাননি। এ সময় মেয়ের প্রসববেদনা উঠলে ওয়ার্ডের ভেতরে যেতে চাইলেও যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে উপস্থিত অন্যরা ভেতরে নার্সদের খবর দিলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। পরে হাসপাতালের বারান্দাতেই তিনিসহ অন্যদের সাহায্যে নবজাতকের জন্ম হয়। সন্তান প্রসবের পর ওয়ার্ডের নার্সরা গিয়েছিলেন। পরে তাঁর মেয়েকে ওয়ার্ডের ভেতরে নেওয়া হয়।

রাজিয়া বেগম আরও জানান, তাঁর মেয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সন্তান প্রসব করেন। সময়ের আগে সন্তান প্রসব ও হাসপাতালের অসহযোগিতায় তাঁর মেয়ের বাচ্চাটি মারা গেছে। তার মেয়ের সন্তান প্রসব হওয়ার প্রায় ১০ মিনিট পর আরও এক প্রসূতির প্রসববেদনা ওঠে। তিনিও বারান্দায় একইভাবে সন্তান প্রসব করেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ৯০০। চিকিৎসাধীন আছেন প্রায় দুই হাজার ৮০০ রোগী। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি করা হয়। একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন প্রসূতি ভর্তির জন্য চলে আসেন। ভর্তির কক্ষে শয্যা আছে পাঁচটি। সেখানে প্রসূতিদের পরীক্ষা করার পর ভর্তি করা হয়। প্রসূতিদের অবস্থা দেখেই প্রসব করানোর জন্য শয্যা দেওয়া হয়।

সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই দুই প্রসূতি জরুরি অবস্থায় এসেছিলেন। সেখানে ভিড় থাকায় ভেতরে জরুরি অবস্থার বিষয়টি তাঁরা জানাতে পারেননি। এ ছাড়া যে কক্ষে পরীক্ষা করা হয়, সেটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বাইরের শব্দ ভেতরে যায়নি। চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দেননি কিংবা সেবা দেওয়ার মনোভাব নেই—এমনটি না। ৯০০ শয্যার হাসপাতালে তিন হাজারের কাছাকাছি রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি বুঝতে হবে।’ প্রসূতি দুই নারী সুস্থ আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক প্রসূতি সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এ জন্য শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। মা সুস্থ আছেন। অন্য শিশু ও মা ভালো আছেন। আজ-কালকের মধ্যে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ