মানিকগঞ্জে পাসপোর্ট পেতে গুনতে হয় বাড়তি টাকা, অন্যথায় হয়রানি
Published: 3rd, July 2025 GMT
মানিকগঞ্জের শিবালয়ের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া (২২)। সম্প্রতি তিনি পাসপোর্ট করতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন করেন। তবে আবেদনে ভুল ধরে তাঁকে বাইরের কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে সংশোধন করতে বলেন পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা। পরে ওই দোকানে থাকা এক দালালকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে আবেদনপত্রটি পাসপোর্ট কার্যালয়ে জমা দেন তিনি।
রাসেল মিয়ার বাড়ি শিবালয়ের নবগ্রাম এলাকায়। গত সোমবার কথা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আরিচায় একটি ব্যাংকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা জমা দেওয়ার পর পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল আছে বলে এক কর্মকর্তা বাইরে থেকে যাচাই–বাছাই করে আনতে বলেন। পাসপোর্ট অফিসের সামনে এক কম্পিউটার দোকানে গিয়ে বিষয়টি জানালে এক ব্যক্তি (দালাল) সব ঠিক করে দেবেন বলে জানান। এরপর ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিলে আবেদনপত্রে কী যেন একটা দাগ দিয়ে দেন। পরে কার্যালয়ে গেলে ওই আবেদনপত্রই জমা নেওয়া হয় এবং ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্য ও কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনৈতিক তৎপরতার কারণে পাসপোর্ট করতে গিয়ে রাসেলের মতো সেবাপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিতে তাঁদের সরকারের নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত এক থেকে তিন হাজার টাকা লাগছে।
সেবাগ্রহীতাদের দাবি, নিজেরা পাসপোর্টের আবেদন করলে কোনো না কোনো ভুল ধরে তাঁদের হয়রানি করা হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে করলে সহজেই আবেদন জমা নেওয়া হয়। এর জন্য দালালদের এক থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। অতিরিক্ত এই টাকার কিছু দালালেরা পান এবং অধিকাংশ টাকা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনদালালদের টাকা দিলে কাজ দ্রুত হয়, অন্যথায় ভোগান্তি ১৩ মে ২০২৫২০২০ সালের ১৮ মার্চ জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকায় নতুন ভবনে কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে এই ভবনেই কার্যক্রম চলে আসছে। এর আগে শহরের বেউথা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম চলত। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়।
পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৮ পাতার ৫ বছর মেয়াদি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য ৪ হাজার ২৫০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদের জন্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং অতীব জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৮ হাজার ৬২৫ টাকা লাগে। আর ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা এবং অতীব জরুরির জন্য লাগবে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের জন্য ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি পাসপোর্টের জন্য ১০ হাজার ৩৫০ টাকা গুনতে হবে। আর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের জন্য ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং অতীব জরুরি পাসপোর্টের জন্য ১২ হাজার ৬৫০ টাকা লাগে।
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে গড়ে উঠেছে ২৫ থেকে ৩০টি কম্পিউটারের দোকান। দোকানগুলোতে দালালের আনাগোনা থাকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ বছর ম য় দ কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও হেনস্তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবিতে উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষক ড. আজিজুল ইসলামে ইবির বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে এ আবেদন করেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য
জবিতে রাত ১০টার পর অবস্থান নিষেধ
আবেদনপত্রে তারা বলেন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষক ড. আজিজুল ইসলাম তার পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনাকাঙ্খিত, অশ্লীল আচরণ করেছেন। এছাড়া নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রলোভনে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীদের মানসিকভাবে হেনস্তা ও হুমকি দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: তুমি কি জাদু জানো, ছাত্রীকে ইবি শিক্ষক
ক্লাস চলাকালে ও ক্লাসের বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেকে যেসব হেনস্তা করেছে তা আবেদনপত্রে উল্লেখ করে তারা বলেন, আজিজুল ইসলাম ক্লাসরুমে মেয়েদের দাঁড় করিয়ে তাদের পোশাক, চেহারা, শারীরিক গঠন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করেন। ক্লাসে বিভিন্ন কোর্স পড়ানোর সময় মেয়েদের শারীরিক গঠন ও মেয়েদের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোকে ইঙ্গিত করে অশালীন ও বিব্রতকর কথা বলতেন। বিবাহিত ও অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত ও বিবাহিত জীবন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন করতেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা লেখেন, হোয়াটসঅ্যাপ/ম্যাসেঞ্জার/ইমোর মাধ্যমে ভিডিও কলে আসার জন্য ছাত্রীদের জোর করতেন। পাশাপাশি তিনি ছাত্রীদেরকে প্রেমের প্রস্তাব ও প্রেমমূলক বার্তা পাঠান। এভাবে বারবার দিনে ও রাতে ফোনকলের মাধ্যমে ছাত্রীদেব বিরক্ত করতেন এবং রিসিভ না করলে ক্লাসে এসে অপমানজনক কথা বলতেন। কার্যদিবসে (বেশিরভাগ লাঞ্চের পরবর্তী সময়ে) এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সান্ধ্যকালীন ক্লাস চলাকালে নিজের চেম্বারে ছাত্রীদের ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত ও কুপ্রস্তাব দিতেন।
এমনকি, ছুটির দিনে বিভিন্ন ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা করে সময় কাটানোর কুপ্রস্তাব দিতেন। এই কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ছাত্রীদের কম নাম্বার দিতেন।
আরো পড়ুন: ইবিতে ফের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ
এছাড়া ছাত্রীদেরকে অর্থের প্রলোভন, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করার প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য জোর করা, মিটিং এর নামে মিথ্যা বলে চেম্বারে ডেকে নেওয়াসহ কুকর্মগুলো যেন ফাঁস না করে সেজন্য রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি দিতেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। পদ্ধতিগতভাবে আমরা তদন্ত কমিটি করবো। তদন্তের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী