এক্সচেঞ্জকরি: যেখানে ১০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ পাওয়া যায়
Published: 3rd, July 2025 GMT
দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়েছে বা হচ্ছে। সামান্য কিছু ত্রুটির কারণে এই বিপুলসংখ্যক যন্ত্রের একটি বড় অংশ দিনের পর দিন অবহেলায় পড়ে থাকছে। এই অব্যবহৃত যন্ত্রগুলো শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণই নয়, প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে তুলছে ই-বর্জ্যের ভয়াল স্তূপ। বিশ্বজুড়ে এখন প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে, যেখানে নতুন পণ্য তৈরির চেয়ে অনেকেই ঝুঁকছে পুরোনো পণ্য পুনর্ব্যবহারের দিকে। এটি শুধু খরচই কমায় না, উৎপাদন খরচ কমায় এবং আমাদের সুন্দর পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে। এ উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে এক্সচেঞ্জকরি লিমিটেড।
এক্সচেঞ্জকরির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এম আহসান হাবিব এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল আহমেদ। দুজন মিলেই শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দিচ্ছেন স্বল্পমূল্যোর ল্যাপটপ কম্পিউটার। ন্যূনতম ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ কম্পিউটার দিতে পারেন তাঁরা। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের কাছে ল্যাপটপ পৌঁছে দিয়েছে এক্সচেঞ্জকরি প্রতিষ্ঠানটি। এখন তাদের ঢাকার মিরপুর ও তেঁজগাওয়ে দুটি শাখা রয়েছে।
একটি স্বপ্নযাত্রাএক্সচেঞ্জকরি নিছকই একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়। একটি মানবিক স্বপ্নের বাস্তবায়ন এটি। যেখানে প্রযুক্তিকে সবার জন্য সহজলভ্য করার এক অসাধারণ প্রচেষ্টা চলছে। এ উদ্যোগের পেছনে রয়েছে এক আবেগপ্রবণ গল্প। আমাদের শহরগুলোতে যখন অজস্র অচল ল্যাপটপ অবহেলায় পড়ে থাকে, তখন দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের একজন শিক্ষার্থী, একজন ফ্রিল্যান্সার বা একজন স্বল্প আয়ের মানুষ সে যন্ত্রটি দিয়েই হয়তো গড়ে তুলতে পারেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এ সমস্যাটিকে সমাধানের দায়িত্ব হিসেবে নিজেদের কাঁধে তুলে নেন রাসেল আহমেদ, যিনি প্রযুক্তি খাতে দীর্ঘ ১৭ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন পেশাজীবী।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ও করপোরেট জগতে অভিজ্ঞ এম আহসান হাবিব তাঁর প্রবাসজীবন শেষে দেশের টানে ফিরে আসেন, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে। এই একই স্বপ্ন দেখা দুজন মানুষ মিলে শুরু করেন এক্সচেঞ্জকরি। ২০১৬ সালে সিস্টেমআই টেকনোলজিস লিমিটেডের ‘স্বাধীন অফার’ প্রচারণার একটি মাইলফলক ছিল, যা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ বিনিময়ের সুযোগ করে দিয়ে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। সেই সাফল্যের হাত ধরেই রাসেল আহমেদ ও আহসান হাবিবের যৌথ উদ্যোগে এক্সচেঞ্জকরি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিকস বাজারে এক নতুন পেশাদারত্ব ও সুসংগঠিত কাঠামো নিয়ে আসেন।
এক্সচেঞ্জকরির সেবা ও সার্কুলার মডেলএক্সচেঞ্জকরি একটি পূর্ণাঙ্গ সার্কুলার সিস্টেম তৈরি করেছে, যেখানে পুরোনো ল্যাপটপ সংগ্রহ, রিফারবিশমেন্ট ও বিক্রির মাধ্যমে প্রযুক্তির জীবনচক্রকে দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি একটি টেকসই মডেল তৈরি করা হয়। তাদের মূল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সেবা হলো পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রয়। গ্রাহকেরা সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁদের পুরোনো ল্যাপটপের ছবি ও বিস্তারিত তথ্য অনলাইনে দিয়ে একটি আনুমানিক মূল্য জানাতে পারেন।
আরেকটি এক্সচেঞ্জ সুবিধা। অর্থাৎ গ্রাহকেরা তাঁদের ব্যবহৃত ল্যাপটপের বদলে নতুন বা আরও হালনাগাদ মডেলের ল্যাপটপ নিতে পারেন। এর বাইরে এক্সচেঞ্জকরি বিভিন্ন বাজেটের উপযোগী চমৎকার রিফারবিশড ল্যাপটপ সরবরাহ করে। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে উঠছে।
অনুমোদিত পরিবেশকদের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জকরি নতুন ল্যাপটপও সরবরাহ করে। এ ছাড়া ভাঙা যন্ত্র থেকে সংগৃহীত ডিসপ্লে, হার্ডড্রাইভসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারা বিক্রি করে, যা মেরামতের খরচ কমানোর পাশাপাশি বর্জ্য কমাতে সাহায্য করে। পুরোনো যন্ত্র পুনর্ব্যবহারের (রিসাইক্লিং) সুবিধাও আছে এক্সচেঞ্জকরিতে। ব্যবহারের অনুপযোগী ল্যাপটপ খুলে যন্ত্রাংশগুলো রিসাইকেল করে বাকি বর্জ্য পৃথকভাবে সংরক্ষণ এবং পরে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে নিঃশেষ করা হয়।
এক্সচেঞ্জকরির সার্কুলার মডেল একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। গ্রাহকেরা এক্সচেঞ্জকরির অনলাইন পোর্টালে তাঁদের ল্যাপটপের তথ্য দিয়ে মূল্য জানাতে পারেন। একটি অভিজ্ঞ দল প্রতিটি ল্যাপটপ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে তার সঠিক অবস্থা যাচাই করে। একবার ল্যাপটপ সংগৃহীত হলে এটি ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়, যেখানে এটি নতুন রূপ পায়। হার্ডড্রাইভ, ব্যাটারি, কি–বোর্ড পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ করা হয়। এ ছাড়া রিফারবিশড ল্যাপটপগুলো তাদের অনলাইন বিক্রয় মাধ্যম ‘ডিভাইস মামা’র মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এই সুবিধা ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয়।
এক্সচেঞ্জকরির একটি শাখা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল য পটপ ব যবহ ত র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল একজনের
শরীয়তপুর সদরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আক্তার সরদার (৩৪) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে পৌরসভার স্বর্ণঘোষ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আক্তার সরদার ওই এলাকার নূর হোসেন সরদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজে জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হন আক্তার। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/আকাশ/রাজীব