পটুয়াখালীতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড মামলা, অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন
Published: 3rd, July 2025 GMT
পটুয়াখালীর বাউফলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম বয়াতিকে (১৮) কুপিয়ে হত্যা ও তাঁর বাবা জাকির হোসেনকে জখমের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দশমিনা থানায় এ মামলা করেন ফাহিমের মা রেকসোনা বেগম।
মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শাকিল মীর (২০), সোহাগ (২৪), সানু মীর (৪৫)। তাঁদের মধ্যে সানুকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তিনি বাউফল উপজেলার ভাংরা গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সানু মীর, জসিম মীর, কাশেম মীর ও রশিদ মীরের বাড়িতে গতকাল বিকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এতে অন্তত চারটি ঘর পুড়ে গেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে প্রতিপক্ষের হামলায় ছেলে নিহত, গুরুতর আহত বাবা হাসপাতালে০১ জুলাই ২০২৫এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে দশমিনা উপজেলার চিংগড়িয়া বেতাগি সানকিপুর ইউনিয়নের ধলুফকির বাজারে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। ফাহিম বাউফল উপজেলার ভাংরা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেনের ছেলে ও নওমালা আবদুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজটি থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফাহিম ছিলেন সবার বড়। ময়নাতদন্তের পর গতকাল বিকেলে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববিরোধ ও আধিপত্যের জেরে গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে বাউফল ও দশমিনা উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা দশমিনা উপজেলার বেতাগি সানকিপুর ওয়ার্ডের ধলুফকির বাজারের পাশে সোহাগ মীরসহ (২০) কয়েকজন তরুণের সঙ্গে ফাহিমের কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাহিমকে আঘাত করেন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ফাহিমের বাবা জাকির। তাঁকেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম করেন ওই তরুণেরা।
স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত বাবা-ছেলেকে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ফাহিম বয়াতিকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাকির হোসেনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়ে কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তবে এর আগেই ঘর চারটি পুড়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর ফাহিমের হত্যার ঘটনাস্থল পাশের দশমিনা উপজেলায়। এ কারণে মামলা হবে দশমিনা থানায়।
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে বাউফল থানা-পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ফাহিম ও তাঁর বাবার ওপর হামলাকারী সানু মীর নামের একজনকে পিটুনি দিয়ে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ সানু মীরকে উদ্ধার করে দশমিনা হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা করান। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র দশম ন র ঘটন ব উফল
এছাড়াও পড়ুন:
কালীগঞ্জে এইচএসসি ফলাফলে পাসের চেয়ে ফেল বেশি
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল যেন শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৫৪ জন, আর অকৃতকার্য হয়েছে ৬৭৪ জন। অর্থাৎ পাসের চেয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি!
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, শতভাগ ফেল
এইচএসসিতে শতভাগ জিপিএ-৫ পেল মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
এই পরিসংখ্যান কালীগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের হতাশার জন্ম দিয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মতে, ফলাফলের এ চিত্র শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ, পাঠদানের মানহীনতা এবং শিক্ষা প্রশাসনের দুর্বল তদারকির স্পষ্ট প্রতিফলন।
তবে হতাশার মাঝেও সামান্য আশার আলো জ্বেলেছে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থী। মোট ১৯ জন পরীক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ–৫ অর্জন করেছে।
কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৫ ও ফেল ১৭০, মানবিকে পাস ৯০ ও ফেল ২১৯, বিজ্ঞানে পাস ৫৬ জন। এ কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ শিক্ষার্থী। মোট পাস ২২১ ও অকৃতকার্য ৪৩৬ জন।
জামালপুর কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ২৩ জন ও ফেল ৫৮ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪ জন ও ফেল ৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ৩৪ ও অকৃতকার্য ৮২ জন।
আজমতপুর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৮ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১৬ জন ও ফেল ৩৩ জন । জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ২৪ জন ও অকৃতকার্য ৩৯ জন।
কালীগঞ্জ মহিলা কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ১২ জন ও ফেল ১ জন, মানবিকে পাস ৩০ জন ও ফেল ২৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ৪২ জন ও অকৃতকার্য ২৭ জন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৫ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১ জন ও ফেল ১৪ জন। মোট পাস ৬ জন ও অকৃতকার্য ২০ জন।
সেন্ট মেরিস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৮ জন ও ফেল ১৩ জন, মানবিকে পাস ৬৫ জন ও ফেল ২৩ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪৭ জন ও ফেল ৯ জন । এখানে জিপিএ–৫ পেয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ১৯০ জন ও অকৃতকার্য ৪৫ জন।
সেন্ট নিকোলাস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৩৩ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ৪ জন ও ফেল ৬ জন। মোট পাস ৩৭ জন ও অকৃতকার্য ২৫ জন।
সব হতাশার মধ্যেও জিপিএ–৫ পাওয়া ১৯ জন শিক্ষার্থী দেখিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সাফল্য অসম্ভব নয়। তবে এই ক্ষীণ সাফল্য কালীগঞ্জের সামগ্রিক শিক্ষা সংকট ঢাকতে পারছে না।
শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, মানসম্মত ক্লাসের অভাব, পর্যাপ্ত একাডেমিক পরিবেশের সংকট এবং প্রশাসনিক তদারকির দুর্বলতা—এসবই এ ফলাফলের পেছনে প্রধান কারণ।
ঢাকা/রফিক/মেহেদী