পটুয়াখালীর বাউফলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম বয়াতিকে (১৮) কুপিয়ে হত্যা ও তাঁর বাবা জাকির হোসেনকে জখমের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দশমিনা থানায় এ মামলা করেন ফাহিমের মা রেকসোনা বেগম।

মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শাকিল মীর (২০), সোহাগ (২৪), সানু মীর (৪৫)। তাঁদের মধ্যে সানুকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তিনি বাউফল উপজেলার ভাংরা গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সানু মীর, জসিম মীর, কাশেম মীর ও রশিদ মীরের বাড়িতে গতকাল বিকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এতে অন্তত চারটি ঘর পুড়ে গেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে প্রতিপক্ষের হামলায় ছেলে নিহত, গুরুতর আহত বাবা হাসপাতালে০১ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে দশমিনা উপজেলার চিংগড়িয়া বেতাগি সানকিপুর ইউনিয়নের ধলুফকির বাজারে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। ফাহিম বাউফল উপজেলার ভাংরা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেনের ছেলে ও নওমালা আবদুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজটি থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফাহিম ছিলেন সবার বড়। ময়নাতদন্তের পর গতকাল বিকেলে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববিরোধ ও আধিপত্যের জেরে গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে বাউফল ও দশমিনা উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা দশমিনা উপজেলার বেতাগি সানকিপুর ওয়ার্ডের ধলুফকির বাজারের পাশে সোহাগ মীরসহ (২০) কয়েকজন তরুণের সঙ্গে ফাহিমের কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাহিমকে আঘাত করেন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ফাহিমের বাবা জাকির। তাঁকেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম করেন ওই তরুণেরা।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত বাবা-ছেলেকে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ফাহিম বয়াতিকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাকির হোসেনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়ে কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তবে এর আগেই ঘর চারটি পুড়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর ফাহিমের হত্যার ঘটনাস্থল পাশের দশমিনা উপজেলায়। এ কারণে মামলা হবে দশমিনা থানায়।

দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে বাউফল থানা-পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা হয়েছে।’

ওসি আরও বলেন, ফাহিম ও তাঁর বাবার ওপর হামলাকারী সানু মীর নামের একজনকে পিটুনি দিয়ে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ সানু মীরকে উদ্ধার করে দশমিনা হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা করান। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র দশম ন র ঘটন ব উফল

এছাড়াও পড়ুন:

৪৮ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাল্যবিবাহের শিকার সালেহা

সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় সালেহা খাতুনকে। পড়াশোনা ছেড়ে গৃহস্থালির কাজে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি। ইচ্ছা ছিল আবার পড়াশোনা করার। ধীরে ধীরে সেই ইচ্ছা পূরণ করছেন তিনি। এবার তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তক্তপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সালেহা খাতুন (৪৮) এবার ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহার আলীর স্ত্রী।

গতকাল সোমবার রাতে তক্তপাড়া গ্রামে শাহার–সালেহা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে বসে আছেন সালেহা। বড় ছেলে চাকরির প্রস্তুতির জন্য যে টেবিলে পড়তেন, এখন সেখানে ছেলের বইয়ের পাশে নিজের বই খুলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

সালেহা খাতুন বলেন, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই আবার পড়া শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা সহযোগিতা করায় ২০১৯ সালে নতুন করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন উপজেলার শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভোকেশনাল শাখায়। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন গত ২৬ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।’

নিজের জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে সালেহা বলেন, তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার অর্জুনপাড়া গ্রামে। বাবা আবদুস সাত্তার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়। সালেহা বলেন, ‘এই বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না। স্বামীর বাড়িতে এসে সংসার শুরু করি। সন্তানের মা হই।’

স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সালেহার পরিবার। বড় ছেলে শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে অনার্স শ্রেণিতে পড়ছেন।

লেখাপড়া আবার শুরু করার বিষয়ে সালেহা বলেন, ‘আমরা ছয় ভাইবোনের মধ্যে চারজনই শিক্ষিত। তাঁরা সবাই শিক্ষকতা পেশায়। আমি কেন পিছিয়ে থাকব? সুযোগ থাকলে স্নাতক শেষ করে এলএলবি পড়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা আছে।’ স্বামী ও সন্তানেরা সব সময় তাঁকে সহযোগিতা করেন ও উৎসাহ দেন।

তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহার আলী বলেন, ‘স্ত্রী সালেহা খাতুনের মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখেছি। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আছে। ছেলেদের সুশিক্ষিত করার পর এখন নিজে শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সংসার সামলেই সে লেখাপড়া করছে।’

সালেহার বড় ছেলে শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য মায়ের অবদান বেশি। এই বয়সে মায়ের লেখাপড়ার টান ও ধৈর্য দেখে আমি অবাক। মায়ের জন্য গর্ব হয়।’

ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সালেহা খাতুন তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছেন। এই বয়সেও তাঁর আগ্রহ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এইচএসসিতে নকল করার অপরাধে ১০ জনকে বহিষ্কার
  • এইচএসসি পরীক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে ভালো নম্বর কীভাবে পাবে
  • মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে দুই শিক্ষার্থী
  • মায়ের মরদেহ ঘরে রেখে পরীক্ষা দিচ্ছেন দুই শিক্ষার্থী
  • ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত
  • মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী খুন, বাবা গুরুতর আহত
  • মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম খুন, পিতা গুরুতর আহত
  • এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল, তিন জেলায় পাঁচজন বহিষ্কার
  • ৪৮ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাল্যবিবাহের শিকার সালেহা