মোমবাতি হাতে, গানে ঢাবিতে শাহরিয়ারকে স্মরণ
Published: 17th, May 2025 GMT
হাতে প্রজ্বলিত মোমবাতি। এক মিনিট নীরবতা শেষে সবাই সমস্বরে গাইলেন, ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/ কত প্রাণ হলো বলিদান,/ লেখা আছে অশ্রুজলে’। গান শেষে সবাই একে একে মোমবাতি রাখেন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। শনিবার রাত আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এভাবেই শাহরিয়ার আলম সাম্যকে স্মরণ করেন সহপাঠী ও বন্ধুরা।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন শাহরিয়ার। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্মরণসভায় অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস আল শায়েখ বন্ধু শাহরিয়ারের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমার মূল সাহস ও শক্তি ছিল সাম্য। প্রতিটা দিন আমরা যখন আন্দোলনে যেতাম, আমি এটাই ভাবতাম যে সাম্য আছে আমার সঙ্গে; আমার কিছু হবে না। সে এমন একটা মানুষ ছিল, কখনো তাঁর বন্ধুবান্ধব বা ভাইকে পেছনে ফেলে চলে যেত না।’
শাহরিয়ারের আরেক বন্ধু মশিউর আমিন বলেন, সাম্য হত্যার বিচারে কোনো তৎপরতা নেই। তিনি বলেন, বর্তমান বাংলা একাডেমির আশপাশের এলাকায় ক্লোজসার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা নেই। এটা যদি সাম্য হত্যার আগের থেকেই না থেকে থাকে, সেটার দায় তো কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
শাহরিয়ারের সহপাঠী সোহেল রানা বলেন, কয়েক দিন ধরে বিচারের দাবিতে এখানে–সেখানে দৌড়াচ্ছি; কিন্তু কোথাও সন্তোষজনক অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যায় গ্রেপ্তার তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে৬ ঘণ্টা আগেস্মরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন শাহরিয়ারের হলের শিক্ষার্থী মাহিদ্দুজ্জামান জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় এখন পর্যন্ত একটা ঈদ করেছি। ওই ঈদ আমি করেছি সাম্য ভাইয়ের সঙ্গে।’
রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে হলে শাহরিয়ারের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে বলে জানান তাঁর আরেক সহপাঠী আবিদুর রহমান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’