হাগাড়া উপজেলার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতাধীন হারবাং বিটের উত্তর হারবাং এলাকায় বনের জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিন-রাত সমানতালে করাতকলে কাঠ চেরাই চলছে। এ করাতকলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে গাছ।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আজিজনগর গজালিয়া সড়ক দিয়ে অর্ধকিলোমিটার গেলে হাতের ডান পাশে দেখা যায় করাতকল। এটি আজিজনগর ও হারবাং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী স্থানের হলেও হারবাং বিটের আওতাধীন এলাকা বলে স্থানীয়রা জানান। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি সংরক্ষিত বনের হারবাং বিটের আওতাধীন এ জায়গায় গড়ে উঠেছে ৪টি দালান, বেশ কয়েকটি কলোনি, একটি করাতকল ও একটি প্লাইউড কারখানা। নির্বিঘ্নে করাতকলে সংরক্ষিত বনের গাছ চেরাই করা হলেও কর্তৃপক্ষ চুপ। অথচ এ পথ দিয়েই বন কর্মকর্তারা প্রতিদিন চলাফেরা করেন। 
করাতকলের পরিচালক দাবি করা মনির আহমদ বলেন, ‘করাতকলটির কিছু জায়গা চুনতি বনের, কিছু জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রামের। পার্বত্য অংশের অনুমোদন আছে।’
জানা গেছে, বনের জায়গায় লাইসেন্স ছাড়াই এ করাতকল চলছে। করাতকলে প্রতিদিনই বনের গাছ চেরাই করে গোপনে কাঠ বাইরে পাচার হচ্ছে। ফলে বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ করাতকলটি পার্বত্য এলাকা সংলগ্ন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলেই। অবৈধ করাতকলের কারণে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারপরও এসব করাতকলের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান না থাকায় অনেক সংরক্ষিত বন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। 
জানা যায়, বন আইনের বিধানে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এই করাতকলটি বনের জায়গায় গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব করাতকল বনাঞ্চলসহ আবাসিক এলাকায় দেদার চালানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, আবাসিক এলাকার পাশে গড়ে ওঠা করাতকলের শব্দে অতিষ্ঠ তারা। এক প্রকার মানসিক রোগী হয়ে গেছেন বলে আক্ষেপের সুরে তারা বলেন, ‘সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারি না। প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা-হামলার ভয় দেখান করাতকলের মালিক। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।’
রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তার নাকের ডগায় দিন-রাত চোরাই গাছ চেরাই হচ্ছে ওই করাতকলে। তাছাড়া সন্ধ্যা নামলেই গজালিয়া সড়ক থেকে বের হয় কাঠভর্তি জিপ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ি থেকে বন কর্মকর্তারা পান মাসহারা। সূত্রে জানা যায়, রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা, স্পেশাল ও সহকারী বন সংরক্ষকের নামে কথিত পৃথক পৃথক ক্যাশিয়ার গাড়ির টোকেন দেন। সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বছরের পর বছর জুড়ে গাছ পাচারও হচ্ছে, অবৈধ করাতকলও চালু রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বনবিভাগ।
স্থানীয় সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘করাতকল অবৈধভাবে গড়ে উঠায় একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বন, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব। তাই অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ বনের জায়গায় অবৈধ করাতকল কীভাবে চলে? জানতে চাইলে চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবির হাসান বলেন, ‘অনুমোদন আছে কি না দেখতে হবে। করাতকলটি অবৈধ হলে অভিযান করে বন্ধ করে দেব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঞ জ কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

এখানে ৩০০ বছর ধরে দেবী আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাঁচগাঁও। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাধ্বনি, ধূপের গন্ধ আর আলোঝলমলে মণ্ডপ—সব মিলিয়ে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের উচ্ছ্বাস। তবে পাঁচগাঁওয়ের পূজা অন্যদের থেকে আলাদা। এখানে দেবী দুর্গা আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে। এখানে ৩০০ বছর ধরে চলছে পূজা।

রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, আলোয় ঝলমল করছে পাঁচগাঁও দুর্গামণ্ডপ। রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে মন্দিরমুখী পথজুড়ে বসেছে অস্থায়ী দোকান। তিলুয়া, বাতাসা, খাজা, জিলাপি, ফুচকা থেকে শুরু করে খেলনা, প্রসাধনী ও পূজার সামগ্রী—সবই পাওয়া যাচ্ছে। ষষ্ঠীর দিন হওয়ায় ভিড় তুলনামূলক কম হলেও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে হাজারো ভক্তের পদচারণে গ্রাম মুখর হয়ে উঠে—এমনটাই জানান স্থানীয় লোকজন।

পাঁচগাঁও দুর্গাপূজার পরিচালক সঞ্জয় দাস বলেন, তিনি পূজা পরিচালনাকারীদের ষষ্ঠ পুরুষ। প্রায় ৩০০ বছর ধরে তাদের পরিবারে এই লাল রঙের প্রতিমার পূজা হয়ে আসছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের বছরে পূজা হয়নি। এটি মূলত পারিবারিক পূজা হলেও দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির বিশ্বাসে প্রতিবছর হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই পূজার সূচনা করেন সর্বানন্দ দাস নামের এক সাধক। তিনি আসামের শিবসাগরে চাকরিরত অবস্থায় কামাক্ষ্যায় পূজা দিতে গিয়ে অলৌকিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পূজার সময় এক পাঁচ বছরের মেয়ের শরীর লাল হয়ে ওঠে। তখন সর্বানন্দ দাস বুঝতে পারেন, দেবী স্বয়ং অবতীর্ণ হয়েছেন। দেবী তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি প্রার্থনা করেন—প্রতিবছর তাঁর জন্মস্থান পাঁচগাঁওয়ে দেবী অধিষ্ঠান করবেন। দেবী নির্দেশ দেন, এখানকার প্রতিমা হবে লাল বর্ণের। সেই থেকে চলে আসছে লাল দুর্গার পূজা।

পূজার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, দেশে পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাবাড়িতেই দেবী দুর্গার রং লাল, আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী নেই। তবে ভারতের আসাম ও কামাখ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। পাঁচগাঁওয়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই লাল বর্ণের দেবী। পূজার এই সময়টি হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী তাঁদের নানা মানত নিয়ে এখানে ভিড় করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালান।

পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পাঁঠা, মহিষ, হাঁস ও কবুতর দেবীর নামে এখানে বলি দেন অনেকে। এখানকার দেবী জাগ্রত হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দেবী-দর্শনে সপরিবার আসেন অনেকেই। অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের কাছে শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচগাঁওয়ের দেবী-দর্শন অনেকটাই নিয়মিত। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও এই উৎসবস্থলে ছুটে আসেন, ঘুরে বেড়ান। মেলায় কেনাকাটা করেন। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চার-পাঁচ দিন পাঁচগাঁও যেন ঘুমায় না। গ্রামের বাতাসে বাজে একটাই সুর—‘দুর্গা এল, দুর্গা এল’।

সঞ্জয় দাস প্রথম আলোকে বলেন, পূজা উদ্‌যাপনে শতভাগ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহযোগিতা আছে। কোনো সমস্যা নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখানে ৩০০ বছর ধরে দেবী আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে