মানবসেবাই জলীল হাওলাদারের ধ্যান-জ্ঞান। ২০২৪ সালে ৪০০ ব্যাগের ও বেশি রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। নিজে রক্ত দিয়েছেন ১৩ বার। রাত-দিন নেই। যে কারও রক্তের প্রয়োজনে ছুটে যান। রক্তদাতার জন্য হাসপাতালে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে টের পাননি। কখনও বা বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়েছেন রাত। টগবগে এই তরুণ বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাশাপাশি রক্ত সংগ্রহে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
১৩ অক্টোবর ২০২১। পরিচিত এক লোক ফোন করে বলেন তাঁর মায়ের জন্য রক্ত প্রয়োজন। রোগীর অবস্থা ভালো ছিল না। রক্তের খুবই প্রয়োজন ছিল। জলীল দ্রুত গিয়ে রক্ত দেন। যদিও রক্তদান বলতে তিনি নারাজ। তাঁর ভাষায়, এটি হলো লাল ভালোবাসা। এভাবে রক্তদানের শুরু। একই বছর বরিশালে এক রোগীর ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। জলীল খবর পেয়ে পটুয়াখালী থেকে রক্তদাতা এনে রক্তের ব্যবস্থা করেন। এটি হলো তাঁর রক্তদাতা সংগ্রহের প্রথম কাজ। তবে বেশ গোছালোভাবে তাঁর রক্তদাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বরিশাল ব্লাড ডোনার্স ক্লাবে যোগ দেওয়ার পরে। এই সংগঠনে যুক্ত হয়ে রক্তদাতা সংগ্রহে ও যোগাযোগ দক্ষতায় অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ বিবিডিসির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন। ওই দিন জলীলকে সর্বোচ্চ রক্তদাতা সংগ্রহকারীর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পান সেরা স্বেচ্ছাসেবক অ্যাওয়ার্ডও। 
মানুষের উপকার করার চিন্তা জলীলের ছোটবেলা থেকে। ছোটবেলায় কঠিন রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন অন্যের সহযোগিতায় তাঁর চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। জলীলের ভাষায়, ‘অন্যের উপকারে যদি আমি বেঁচে যেতে পারি তাহলে আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অন্য মানুষদের কেন উপকার করব না? আর রক্তদান এবং রক্তদাতা সংগ্রহে তো কোনো ক্ষতি নেই। অন্য দশটা কাজের পাশাপাশি এসব করা যায়।’
জলীলের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার ৬নম্বর জাগুয়া ইউনিয়নের আস্তাকাঠী গ্রামে। তিনি নিজে এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ১৩ বার। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর রক্ত সংগ্রহ ১০০০ ব্যাগ ছাড়িয়েছে। রক্তদাতা সংগ্রহে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জলীল। তবে নিজেকে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে মনে করেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তর ণ রক ত র বর শ ল র রক ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

গত ৪৮ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর।

শনিবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে তারা এই তথ্য জানায়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরও একটি ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। শুধু উত্তর গাজা গভর্নরেটেই গত দুই দিনে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টতই গণহত্যারই অংশ।”

গাজার মিডিয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ওই অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গাজা শহরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোই নেই।

বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে প্রায় ১৪০ জনের লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়ার তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও আশপাশের এলাকায় শরণার্থীদের জন্য স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো। গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, এই ঘটনার সময় আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও নির্লজ্জ সহযোগিতা গভীর উদ্বেগজনক।

গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া অফিস। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র বা তাঁবুর ঘাটতির কারণে হাজার হাজার পরিবারকে রাস্তায় বসবাস করতে হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালাআ স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং টানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে রয়েছেন।

এমন অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে গণহত্যা বন্ধ করতে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠাতে, অবরোধ খুলে মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে এই সংখ্যা ছিল ১০০ জনের কাছাকাছি, অর্থাৎ ট্রাম্পের সফরকালীন নিহতের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়েছে — গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে আনাদোলু এই হিসাব পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। এরপর গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ