কেন শিশুকে নিয়মিত মাটিতে খেলতে দেবেন
Published: 19th, May 2025 GMT
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কাজ হলো, কোনটি দেহের জন্য উপকারী আর কোনটি ক্ষতিকর, তা ঠিকভাবে বুঝে নেওয়া। এ জন্য শরীরকে ভালো ও খারাপ বস্তু চেনাতে হয়; আর পরিচয়টা হয় যখন শিশুরা মাটিতে খেলাধুলা করে। কারণ, তখন দেহ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস চিনতে পারে এবং চিনে নিতে পারে উপকারী জীবাণুকেও।
এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ‘গাট মাইক্রোবায়োম’। আমাদের পেটের ভেতরে বাস করে কোটি কোটি ক্ষুদ্র জীবাণু। এগুলোর বেশির ভাগই আমাদের জন্য উপকারী। এগুলো যেমন খাবার হজম করতে সাহায্য করে, দেহে ভিটামিন তৈরি করে এবং রোগ ঠেকাতে সাহায্য করে। আর এসব ভালো জীবাণু থেকেই রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনশিশুর হোমওয়ার্ক নিয়ে বিপত্তি?২২ এপ্রিল ২০২৫শিশুর জীবনের প্রথম বছরটা এই গাট মাইক্রোবায়োম গঠনের জন্য সবচেয়ে জরুরি। শিশুরা নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক উপায়ে জন্মালে মায়ের দেহ থেকে কিছু উপকারী জীবাণু পায়। আর মায়ের দুধ খেলে তো পায়ই। এরপর শিশুটি বড় হতে হতে আরও বেশি জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। যেমন মাটি, গাছপালা, পোষা প্রাণী বা খেলার মাঠ থেকে আসে জীবাণুর সংস্পর্শে।
এ ক্ষেত্রে ওল্ড ফ্রেন্ডস হাইপোথিসিস বা তত্ত্বের কথা বলতে হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ছোটবেলায় যত বেশি উপকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসা যাবে, ততই শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য ভালো। এখানে শৈশবের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে বলা হচ্ছে পুরোনো বন্ধু। এরা মানবদেহের কোনো ক্ষতি করে না।
হাইজিন হাইপোথিসিস নামের আরেক তত্ত্বের কথাও বলে রাখা ভালো। এই তত্ত্ব অনুসারে, শৈশবে যে যত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকে, বড় হতে হতে তার অ্যালার্জির ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু কৃষিনির্ভর পরিবেশ বা খামারে বড় হয় বা যাদের বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকে, তাদের অ্যালার্জি কম হয়। এ ছাড়া শৈশবে কোনো শিশুকে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে বা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে শিশু জন্মালে অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে।
আরও পড়ুনশিশুর আকস্মিক দুর্ঘটনায় কী করবেন০৪ মে ২০২৫ফিনল্যান্ডে এক গবেষণায় শহরটির কিছু শিশুকে বন থেকে আনা মাটি ও ঘাসে খেলতে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র এক মাসেই তাদের ত্বকে নিরীহ উপকারী জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে। তাদের রক্তে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষ কোষও বেড়ে গিয়েছিল। এর থেকেই বোঝা যায়, মাটির জীবাণু শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
আর সুইডেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খামারে বড় হয় বা যাদের পোষা প্রাণী আছে, তাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ভোগার হার কম এবং গাট মাইক্রোবায়োমে উপকারী জীবাণুর পরিমাণ বেশি। তবে মনে রাখতে হবে, অ্যালার্জি হওয়ার পেছনে জিনগত ব্যাপারও আছে। আর সবার শরীর একরকম নয়। তাই এটা হলফ করে বলা যাবে না যে বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়াল থাকলেই শিশুর অ্যালার্জি হবে না।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শহরের রাস্তার পাশে বা দূষিত জায়গার মাটি কিন্তু বিপজ্জনক হতে পারে। এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন সিসা থাকতে পারে। তাই শিশুরা যেন মাটি খেয়ে বা শুঁকে না ফেলে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
সব মিলিয়ে এটা নিশ্চিত, শিশুদের মাটিতে খেলতে দেওয়া উচিত নিয়মিত। প্রকৃতির মধ্যে থাকলে শিশুর শরীর ভালো থাকবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
আরও পড়ুনকোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শিশু যেসব রোগে ভুগতে পারে১১ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য তত ত ব উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
বর্তমানে নতুন স্বৈরাচারের আশঙ্কা রয়েছে: সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, বর্তমানে নতুন স্বৈরাচারের আশঙ্কা রয়েছে। এটি ইতিহাসের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। একটি স্বৈরাচারের পরে যে নির্যাতিত হয়, সে অপরকে নির্যাতন করে। এটি হলো প্রকৃতির নিয়ম। সেটি যেন না হয়, তার রক্ষার পথ জানতে হবে।
আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজের এক সেমিনারে বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। কলেজটির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এই সেমিনারের আয়োজন করেছিল। কলেজ মিলনায়তনে হওয়া এই সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘সংকটের তিন চেহারা: রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণ’।
মানবিক করিডর নিয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মানবিক করিডর বিষয়টি রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের মধ্যে জড়ালে আমাদের কী হবে, এটা বলা মুশকিল। তবে সমস্যাটা বাস্তব। রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়া দরকার।’
গত স্বৈরাচার আমল কীভাবে ১৫ থেকে ১৬ বছর স্থায়ী হলো, এই প্রশ্ন করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘স্বৈরাচার তো আগেই শুরু হয়েছে। র্যাবের কথা ধরুন, র্যাব তৈরি হয়েছে বিএনপির আমলে। ক্রসফায়ার তখন থেকেই শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা সে ধারা অব্যাহত রেখেছে। ন্যায়বিচারের পরিপন্থী শেখ হাসিনার বিচার চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিরও বিচার চাওয়া উচিত। সে বিচার চাইতে কি আপনারা প্রস্তুত আছেন? যদি না থাকেন, তাহলে আপনার কথা না বলাই ভালো।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করার সময় এখনই নয় বলে মনে করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করা এখন প্রিম্যাচিউর হবে। দৌড় শেষ হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করা উচিত হবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে ডক্টর ইউনূসের চেয়ে ভালো ব্যক্তি ছিল না। তিনি ব্যর্থ হলে দায় আমাদেরও।’