ব্রজেন–মোশাররফদের পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যাচ্ছেন দুই বাংলাদেশি
Published: 20th, May 2025 GMT
ব্রজেন দাস, আবদুল মালেক ও সাঁতারু মোশাররফ হোসেনের পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আরও দুই সাঁতারু নাজমুল হক ও মাহফিজুর রহমান।
আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতার সংবাদ সম্মলনে এই তথ্য জানিয়েছেন সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
এরপর একই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাবেক সাঁতারু নাজমুল হক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানান।
আগামী ৭ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন নাজমুল ও মাহফিজুর। ১৭ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো দিন চ্যানেলে নামতে পারেন তাঁরা। এই দুজনের সঙ্গে কলকাতা থেকে আরও দুজন সাঁতারুও অংশ নেবেন।
এ নিয়ে নাজমুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কলকাতা থেকে দুজন অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে আমরা চারজন ইংলিশ চ্যানলে পাড়ি দেব। এখনো দিন–তারিখ ঠিক হয়নি। তবে ১৭ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে চ্যানেলে নামতে হবে।’
আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরকে যেমন এক করেছে জিব্রাল্টার প্রণালি, একইভাবে উত্তর সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরকে এক করেছে ইংলিশ চ্যানেল। এটি মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অংশ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার এবং অবস্থানভেদে প্রস্থ সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ৩৪ কিলোমিটার।
ইংলিশ চ্যানেল যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ অংশকে ফ্রান্সের উত্তর অংশ থেকে আলাদা করেছে। সেখানে সাঁতার কাটা ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদার ম্যারাথন হিসেবে বিবেচিত। এমন ইতিহাসের অংশই হতে চাইছেন দুই বাংলাদেশি।
সাগরে সাঁতারনো এমনিতেই কঠিন। তার ওপর ইংলিশ চ্যানলে সাঁতার কাটা! নাজমুল অবশ্য আশার কথাই শুনিয়েছেন, ‘দেখুন, সাগরে সাঁতরানোটা খুবই কঠিন। মাঝেমধ্যে জেলি ফিশ আক্রমণ করে, এর বাইরে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তারপরও আমরা আশাবাদী। যেহেতু এটা রিলে পদ্ধতির সাঁতার। একজনের পর আরেকজন সাঁতরাবেন। চিন্তার বিষয় হলো, চারজনের মধ্যে একজনও যদি অযোগ্য হন, তাহলে পুরো সাঁতারই বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।’
নাজমুল কিশোরগঞ্জের ছেলে। তাঁর বাবা আবুল হাসেম ছিলেন আশির দশকের জাতীয় সাঁতারু। জাতীয় পর্যায়ে একাধিক পদকে জিতেছেন নাজমুল। যার মধ্যে আছে জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে ২০টি সোনা, ১৫টি রুপা। এ ছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে জাতীয় সাঁতারে জেতেন পাঁচ সোনা ও চার রুপা।
বিকেএসপির সাবেক ছাত্র নাজমুল উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান চীনে। বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তার ডিগ্রি নেন। ২০১২ সালে চীনে অল বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল ফরেন স্টুডেন্টস সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন।
আরেক সাঁতারু মাহফিজুর ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেছেন। ২০১৬ সালে রিও ডি জেনিরোর পুলে নেমেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০টির মতো সোনা জিতেছেন। ২০১০ এসএ দুটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ, ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসে সাতটি ব্রোঞ্জ, ২০১৯ নেপাল এসএ গেমসে একটি ব্রোঞ্জ জেতেন। ২০১৬ থাই ওপেনে সোনা জেতেন মাহফিজুর।
১৯৫৮ সালে প্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন ব্রজেন দাস। আরও পাঁচবার একই ইংলিশ চ্যানেল পেরোন তিনি। ১৯৬৫ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন আবদুল মালেক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম সাঁতারু হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল পেরোন মোশাররফ হোসেন। ১৯৮৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন মুন্সিগঞ্জের এই সাঁতারু।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইতিহাস গড়লো ক্রিস্টাল, ম্যানসিটিকে জিতলো প্রথম বড় শিরোপা
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো বড় কোনো শিরোপা জিতে নিল ক্রিস্টাল প্যালেস। শনিবার (১৭ মে) রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিত এফএ কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় কোনো ট্রফি জয়ের আনন্দে মাতল দক্ষিণ লন্ডনের ক্লাবটি।
ম্যাচের জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন ইবেরেচি এজে। ম্যাচের ১৬ মিনিটে অসাধারণ এক ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড। এরপর পুরো ম্যাচজুড়ে সিটির একের পর এক আক্রমণ সামলে দুর্দান্ত গোলকিপিং করেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডিন হেন্ডারসন।
ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচে একাধিক সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। পেনাল্টিও পেয়েছিল তারা। কিন্তু ওমর মারমুশের নেয়া দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন।
ম্যাচ শেষে গোলদাতা এজে বলেন, ‘‘এটা আমাদের স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত। কেউই বিশ্বাস করেনি আমরা পারব। কিন্তু আমরা ইতিহাস গড়েছি।’’ উল্লেখ্য, ক্যারিয়ারের শুরুতে আর্সেনালসহ অনেক ক্লাব এজেকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো এফএ কাপের ফাইনালে হেরে হতাশার মৌসুমে শেষ করল ম্যানচেস্টার সিটি। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর এই প্রথমবার তারা কোনো ঘরোয়া শিরোপা ছাড়াই মৌসুম শেষ করল।
এর আগে ১৯৯০ ও ২০১৬ সালের ফাইনালে হেরে গিয়েছিল প্যালেস। তবে তৃতীয় চেষ্টায় সফল হলো তারা। আর দলের অস্ট্রিয়ান কোচ অলিভার গ্লাসনার হয়ে গেলেন ইতিহাসে প্রথম অস্ট্রিয়ান কোচ যিনি এফএ কাপ জিতলেন।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য সিটি আক্রমণে ঝড় তোলে। কেভিন ডি ব্রুইনার শেষ ওয়েম্বলি ম্যাচে দারুণ একটি পাস থেকে হালান্ডের শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন। এরপর গভার্দিওলের হেডও ঠেকিয়ে দেন তিনি।
তবে ১৫ মিনিটের মাথায় একমাত্র আক্রমণেই গোল আদায় করে নেয় প্যালেস। মাতেতার পাসে মুনোজের ক্রস থেকে দারুণ এক ভলিতে গোল করেন এজে। এরপর সিটির চাপ আরও বাড়লেও হেন্ডারসনের নেতৃত্বে রক্ষণভাগ ছিল দুর্ভেদ্য।
একবার মনে হয়েছিল, হেন্ডারসন হয়তো বল হাতে নিয়ে গোলবারের বাইরে চলে গিয়েছেন, তবে ভিএআরের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, লাল কার্ডের প্রয়োজন নেই। পেনাল্টিতে সিটি ভরসা রাখে মারমুশের ওপর। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন।
ম্যাচ শেষে হেন্ডারসন বলেন, ‘‘আমরা আগেই বুঝেছিলাম, আজ আমাদের দিন। আমরা এই জয়ের যোগ্য। আমি জানতাম ও কোন দিকে শট নেবে। আর আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমি তা ঠেকাতে পারব।’’
শেষদিকে একাধিকবার গোলের কাছাকাছি গেলেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় সিটি। ১০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়েও গোল হয়নি তাদের। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে প্যালেস সমর্থকেরা। স্টেডিয়ামে তখন গর্জে ওঠে ক্লাবের অ্যান্থেম ‘গ্ল্যাড অল ওভার’। এক ঐতিহাসিক দিনে আনন্দে ভাসে ক্রিস্টাল প্যালেস ও তাদের সমর্থকেরা।
ঢাকা/আমিনুল