ব্রজেন দাস, আবদুল মালেক ও সাঁতারু মোশাররফ হোসেনের পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আরও দুই সাঁতারু নাজমুল হক ও মাহফিজুর রহমান।

আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতার সংবাদ সম্মলনে এই তথ্য জানিয়েছেন সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

এরপর একই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাবেক সাঁতারু নাজমুল হক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানান।

আগামী ৭ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন নাজমুল ও মাহফিজুর। ১৭ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো দিন চ্যানেলে নামতে পারেন তাঁরা। এই দুজনের সঙ্গে কলকাতা থেকে আরও দুজন সাঁতারুও অংশ নেবেন।

এ নিয়ে নাজমুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কলকাতা থেকে দুজন অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে আমরা চারজন ইংলিশ চ্যানলে পাড়ি দেব। এখনো দিন–তারিখ ঠিক হয়নি। তবে ১৭ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে চ্যানেলে নামতে হবে।’

আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরকে যেমন এক করেছে জিব্রাল্টার প্রণালি, একইভাবে উত্তর সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরকে এক করেছে ইংলিশ চ্যানেল। এটি মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অংশ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার এবং অবস্থানভেদে প্রস্থ সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ৩৪ কিলোমিটার।

ইংলিশ চ্যানেল যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ অংশকে ফ্রান্সের উত্তর অংশ থেকে আলাদা করেছে। সেখানে সাঁতার কাটা ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদার ম্যারাথন হিসেবে বিবেচিত। এমন ইতিহাসের অংশই হতে চাইছেন দুই বাংলাদেশি।

সাগরে সাঁতারনো এমনিতেই কঠিন। তার ওপর ইংলিশ চ্যানলে সাঁতার কাটা! নাজমুল অবশ্য আশার কথাই শুনিয়েছেন, ‘দেখুন, সাগরে সাঁতরানোটা খুবই কঠিন। মাঝেমধ্যে জেলি ফিশ আক্রমণ করে, এর বাইরে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তারপরও আমরা আশাবাদী। যেহেতু এটা রিলে পদ্ধতির সাঁতার। একজনের পর আরেকজন সাঁতরাবেন। চিন্তার বিষয় হলো, চারজনের মধ্যে একজনও যদি অযোগ্য হন, তাহলে পুরো সাঁতারই বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।’

নাজমুল কিশোরগঞ্জের ছেলে। তাঁর বাবা আবুল হাসেম ছিলেন আশির দশকের জাতীয় সাঁতারু। জাতীয় পর্যায়ে একাধিক পদকে জিতেছেন নাজমুল। যার মধ্যে আছে জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে ২০টি সোনা, ১৫টি রুপা। এ ছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে জাতীয় সাঁতারে জেতেন পাঁচ সোনা ও চার রুপা।

বিকেএসপির সাবেক ছাত্র নাজমুল উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান চীনে। বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তার ডিগ্রি নেন। ২০১২ সালে চীনে অল বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল ফরেন স্টুডেন্টস সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন।
আরেক সাঁতারু মাহফিজুর ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেছেন। ২০১৬ সালে রিও ডি জেনিরোর পুলে নেমেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০টির মতো সোনা জিতেছেন। ২০১০ এসএ দুটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ, ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসে সাতটি ব্রোঞ্জ, ২০১৯ নেপাল এসএ গেমসে একটি ব্রোঞ্জ জেতেন। ২০১৬ থাই ওপেনে সোনা জেতেন মাহফিজুর।
১৯৫৮ সালে প্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন ব্রজেন দাস। আরও পাঁচবার একই ইংলিশ চ্যানেল পেরোন তিনি। ১৯৬৫ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন আবদুল মালেক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম সাঁতারু হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল পেরোন মোশাররফ হোসেন। ১৯৮৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন মুন্সিগঞ্জের এই সাঁতারু।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এদের কোনো দিন শিক্ষা হবে না

আগের পর্বআরও পড়ুন‘বাংলাদেশের কি সুপারফোরে ওঠার চান্স আছে?’১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ