হান্নান মাসউদকে এনসিপির কারণ দর্শানোর নোটিশ
Published: 21st, May 2025 GMT
ধানমন্ডি থানার একটি ঘটনায় আটক তিনজনকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তার দল। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার সকালে তাকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিকের বাসায় ঢোকার চেষ্টায় আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজনকে হান্নান মাসউদের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে হান্নান মাসউদকে।
নোটিশে বলা হয়, ‘গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানার আওতাভুক্ত একটি আবাসিক এলাকায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে তিনজন ব্যক্তিকে আটক করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক উক্ত তিনজনের অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে নৈতিকতা স্খলনজনিত কারণে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এতৎসত্ত্বেও আপনি সংশ্লিষ্ট থানায় উপস্থিত হয়ে আটক তিনজনের মুচলেকা প্রদান করে থানা থেকে তাদের জামিন করিয়েছেন।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার ব্যাখ্যা এবং আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত বিবরণ আগামী তিন দিনের মধ্য শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৯ মে) রাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারে চাপ ও পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনজন। পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি থানার ওসিকে উদ্দেশ্য করে এক তরুণ বলেন— ‘আপনি কেন এইখানে কথা বলতেছেন এইভাবে। আপনি ওসি আপনি গ্রেপ্তার করলেন না কেন। আমি বলছি, আমি বলছি.
এরপরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনজনকে হেফাজতে নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ন ন ন ম সউদ এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট ধ নমন ড এনস প ত নজন
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা
কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তারও তাঁর মা, ভাই ও বোনকে হত্যার জন্য বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৩৫) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকিকে (২৯)
কুপিয়ে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া সেখানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল (৫৫) ও দুলাল (৪৫) ছাড়াও আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী ও কুমিল্লায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকের্যাব–১১–এর অধিনায়কের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, গত ১ জুন রবিউল আওয়ালের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর জন্য বোরহান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করেন বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে বোরহানের বাবা জসীম উদ্দিন স্থানীয় মাতবরদের কাছে যান। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি রোকসানা বেগমের কাছে যান। পরে বোরহানের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেন।
র্যাব–১১–এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তখন বাচ্চু মিয়াসহ অন্যদের ধারণা হয়, রোকসানা বেগমের পরামর্শে জসীম উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। তখন মব সৃষ্টি করে বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা সেদিন রোকসানার বাড়িতে হামলা করে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মামলার এজাহারে রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় রোকসানাদের পরিবারকে ঘেরাও করেন বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা। বাড়ির সামনে এসে তাঁরা রোকসানার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। রোকসানা ঘর থেকে বের হয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর মাথায় একটি কোপ দেন। বাচ্চু মিয়ার পূর্বপরিচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাছির মিয়াও রোকসানার মাথায় কোপ দেন। এ সময় মাকে বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে আসেন তাঁর ছোট মেয়ে জোনাকী। তখন জোনাকীর মাথায় কোপাতে থাকেন শিমুল বিল্লাহ, রফিকসহ কয়েকজন। জোনাকি ও রোকসানাকে কোপানোর খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে করে তখন বাড়িতে আসেন রোকসানার ছেলে রাসেল। তখন শিমুল বিল্লাহসহ অন্যরা রাসেলকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলে হত্যা করেন। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা
এগিয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর হাতে থাকা রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেন। তখন রুমা পড়ে যান। এ সময় অন্যরাও তাঁর মাথায় কোপাতে থাকেন। পরে মামলার বাদী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর
৯৯৯–এ ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষেণ তিনজন খুন হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।