মনোবিদ জানালেন নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তির ৭ উপায়
Published: 22nd, May 2025 GMT
১. লিখে ফেলুন
সত্যিকার অর্থে কোন বিষয়টি নিয়ে আপনি চিন্তিত বা এ রকম পরিস্থিতিতে আপনার কী করণীয়, লিখে ফেলুন। যেকোনো বিষয় ধাপে ধাপে লিখে ফেললে, সেটি বোঝা বা বিশ্লেষণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। ড. এমি ডারামুস বলেন, ‘নিজের ট্রিগারগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। চাপের মুখে আপনি কী ধরনের আচরণ করেন, সে সম্পর্কে জানুন। তাহলে আপনার চাপ সামাল দিতেও সুবিধা হবে।’
২.
বিরতি নিন
যখনই মাথায় ঝাঁকে ঝাঁকে নেতিবাচক চিন্তা আসছে, সেই মুহূর্তে আপনি যে কাজটি করছেন, সেখান থেকে বিরতি নিন। কী করলে আপনি একটু ভালো বোধ করবেন, সেটি খুঁজে বের করুন। হয়তো ধীরে ধীরে এক গ্লাস পানি খেতে পারেন। এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে পারেন। সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকাতে পারেন। জানালা বা বারান্দা থেকে বাইরে বা রাস্তায় কী হচ্ছে, দেখতে পারেন। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসুন। ডিপ ব্রিদিং করতে পারেন। ব্যায়ামও করতে পারেন। গবেষণা বলছে, কাজের ফাঁকে ছোট বিরতি নিলে কাজে মনোযোগ আর কাজের মান—দুটিই বাড়ে।
আরও পড়ুনপ্রকৃতির সবুজ কীভাবে আপনার মানসিক চাপ কমায়, জানেন?১৭ অক্টোবর ২০২৪৩. নেতিবাচক চিন্তার তালিকা করুন
সর্বোচ্চ কী কী খারাপ হতে পারে, সেসবের সম্ভাব্য তালিকা করুন। দেখবেন, ৫ থেকে ৬ নম্বর লিখতে লিখতেই আপনি সেসব ঘটার আশঙ্কা কাটিয়ে উঠে অনেকটা নির্ভার বোধ করছেন।
৪. নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন
সর্বোচ্চ খারাপ কী ঘটতে পারে, সেই দৃশ্যপট কল্পনা করুন। সেটি ঘটা কতটা যৌক্তিক বা বাস্তবসম্মত, তার সম্ভাবনা যাচাই করুন। এবার সেই পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করুন। নিজেকে বলুন, এ রকম পরিস্থিতি যদি আসেও আপনি সেটার মোকাবিলা করবেন। দেখবেন, অনেকটাই হালকা লাগছে।
আরও পড়ুনদুশ্চিন্তা ও অবসাদ কমাতে সাহায্য করে এই গুল্ম০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় বদলে ফেলুন
আপনি হয়তো চিন্তা করেন, ‘যদি এ রকম খারাপ কিছু হয়...’। এর বদলে আপনি ইতিবাচক চিন্তা করুন। মনের ভেতর ‘যদি’ দিয়ে শুরু হওয়া কোনো বাক্য যেন নেতিবাচক না হয়, সেই চর্চা করুন। নিজেকে একটা আশাবাদী, ইতিবাচক মানুষে বদলে ফেলুন। থেরাপিস্টের সঙ্গেও আলাপ করতে পারেন।
৬. নিজের যত্ন নিন
নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন। সময় নিয়ে নিজের যত্ন নিন। আপনি যখন নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, যখন একটা পরিস্থিতি বাস্তবসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম, তখন খুব কমই অবাস্তব নেতিবাচক কল্পনা আপনার ঘুমকে স্পর্শ করতে পারবে।
৭. সৃজনশীল কাজে মন দিন
প্রতিদিন খানিকটা সৃজনশীল কাজ করুন। সেটা হতে পারে বাগান করা, রান্না করা, ছবি তোলা, ইউটিউবিং বা অন্য কিছু।
সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড
আরও পড়ুনআপনিও কি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ভাবতেই থাকেন২০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবি, মানববন্ধনে নাগরিকদের সঙ্গে মেয়রও
চট্টগ্রাম নগরের সার্কিট হাউস মাঠকে মুক্তাঙ্গন ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় নগরের কাজীর দেউড়িতে সার্কিট হাউস মাঠের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে শিক্ষাবিদ, লেখক, নগর পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী ও পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। কর্মসূচিতে সবাই একটাই দাবি জানান, সার্কিট হাউস মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না। এটি নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মুখ চত্বরের জায়গার মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৩ বছর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই জায়গা ইজারা নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ১৯৯২ সালে শিশুপার্ক স্থাপনের জন্য ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে মাসিক মাত্র দেড় লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আবারও ১৫ বছরের চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। সেখানে শিশুপার্ক ছিল। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়।
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বারবার বলছি যে আমরা একটি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী চাই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) আছে, সেখানেও এটা একটা সবুজ মাঠ আছে। সম্পূর্ণভাবে সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
সার্কিট হাউস মাঠে হাসপাতালের মতো স্থাপনা না করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এর আগে সিআরবিতেও হাসপাতাল করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু এখানে যাঁরা আছেন, সবাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সিআরবিতে রেলওয়ের যে হাসপাতাল আছে, সেটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করা হোক। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সে উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী চিকিৎসা নিতে পারবেন। এখান থেকে (সার্কিট হাউস) রেলওয়ে হাসপাতাল মাত্র এক মিনিটের রাস্তা।
সার্কিট হাউসের পার্কটিকে সবুজ পার্ক করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপদেষ্টাকে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাননি বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন শুনছি, এখানে হাসপাতাল হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি, আমার কালুরঘাটে ৯ একর জায়গা আছে। ওই ৯ একর জায়গা নিয়ে ওখানে হাসপাতাল করুন, আমাকে এই জায়গা দিয়ে দেন, সবুজ পার্ক করব এখানে। আমি আপনাদের প্রস্তাব দিচ্ছি। এর থেকে ভালো প্রস্তাব হতে পারে না। আপনারা হাসপাতাল করলে সেখানে অবহেলিত মানুষ সেবা পাবেন। এখানে অনেক হাসপাতাল, কাছেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, আশপাশে এত প্রাইভেট হাসপাতাল, এখানে আর হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল করতে হলে কালুরঘাট এলাকায় একটা বড় হাসপাতাল করেন। সেখানে আমার জায়গা আমি ছেড়ে দিব। বিনিময়ে এটা আমাদের দেন।’
চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করেছে। এখন মাঠ সিজেকেএসের থাকবে। চট্টগ্রামের সব খেলোয়াড় এখানেই খেলবেন। এ শহরকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এই শহরকে যদি না বাঁচাই তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্বের একটি ব্যতিক্রম নগর। এই নগরকে রক্ষা করতে না পারলে উত্তর প্রজন্ম তাদের দায়ী করবে। একে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী কিন্তু এখানে একটিও উদ্যান নেই, মাঠ নেই। শহরে একসময় পাঁচ থেকে ছয়টা মাঠ ছিল। অথচ এখন শিশু-কিশোররা খেলার মাঠ পায় না। এই মাঠটি সবাই মিলে রক্ষা করব। এর পেছনে যে পুরোনো সার্কিট হাউস, সেটি একটি ব্রিটিশ স্থাপনা। এখানে এ রকম আর একটিও স্থাপনা নেই। সেটি এখন জাদুঘর আর সামনের মাঠটি এর ল্যান্ডস্কেপ হিসেবে আছে। এখানে কোনো স্থাপনা হতেই পারে না।’
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘একটাই কথা। এই উদ্যানকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখানে কোনো স্থাপনা হবে না। উদ্যান কোনো বিলাসিতা নয়। নগরজীবনে নগরবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বস্তিতে থাকার জন্য এবং তাঁদের জীবন আনন্দময় হওয়ার জন্য নগরে উদ্যান থাকতে হবে।’
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ শফিক হায়দার, মনজুরুল কিবরীয়া প্রমুখ।