বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বারি উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতির অবদান’ শীর্ষক সেমিনার ও প্রদর্শনী মেলা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) আয়োজন বৃহস্প‌তিবার (২২ মে) সকা‌লে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল সম্মেলন কক্ষে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

একই সাথে সম্মেলন কক্ষের বাইরে বারি উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী চলতে থাকে।প্রদর্শনীতে বারির উদ্ভাবিত বীজ বপন ও ফসল সংগ্রহকারী বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতির সুবিধা-অসুবিধা আলোচনা করা হয়।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রবন্ধ উপস্থাপন ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।পরে প্রবন্ধ উপস্থাপনা থেকে ৩টি দল ও কুইজ প্রতিযোগিতায় ২ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।

সেমিনারে বারি উদ্ভাবিত ৭১ ধর‌নের যন্ত্রপা‌তির নাম, ব‌্যবহারের সু‌বিধাসহ নানান বিষয় নি‌য়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ক‌রেন বারির উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ‌্যাপক ড মো এরশাদুল হক। যার ম‌ধ্যে ৫৫ যন্ত্রপা‌তি আবিষ্কার শেষ হ‌য়ে‌ছে এবং ১৬‌টি যন্ত্রপা‌তির গ‌বেষণা চলমান র‌য়ে‌ছে।

বারির ফার্ম মে‌শিনা‌রি অ্যান্ড পোস্টহার‌ভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অর্থায়নে কৃ‌ষি যন্ত্রপা‌তি ও লাগসই প্রযু‌ক্তি উদ্ভাব‌নের মাধ‌্যমে ফসল উৎপাদন ব‌্যবস্থা‌কে অধিকতর লাভজনক করা প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি আ‌য়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বাকৃবির কৃ‌ষি প্রকৌশল ও প্রযু‌ক্তি অনুষ‌দের ডিন অধ‌্যাপক ড.

মো জয়নাল আবেদীনের সভাপ‌তি‌ত্ত্বে প্রধান অতিথি ছি‌লেন বাউরেস পরিচালক অধ‌্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান। বি‌শেষ অতিথি ছিলেন অধ‌্যাপক ড. মো‌. মোশাররফ হো‌সেন। এছাড়া কৃ‌ষি প্রকৌশল ও প্রযু‌ক্তি অনুষ‌দের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাউরেস পরিচালক অধ‌্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, “বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল অনুষদের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন, যা আমাদের গর্বের বিষয়। কিন্তু এই অগ্রযাত্রা টিকিয়ে রাখতে এবং জাতীয়ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে হলে সরকারিভাবে গবেষণা খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি গবেষণার সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিবেদিতভাবে কাজ করছেন, তাদের মেধা ও পরিশ্রম যেন সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়, সেটি এখন সময়ের দাবি।”

ঢাকা/লিখন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

তিনদিন ধরে বাড়িঘরে হামলা লুটপাট চলছে

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতা সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কাঁঠালকান্দি গ্রাম ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হয়েছে। পাল্টা হামলার মুখে গ্রাম ছেড়েছে শতাধিক পরিবার। ঘটনার তিনদিন পর আজ মঙ্গলবারও প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা–লুটপাট হয়েছে। 

চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে গত শনিবার মোল্লা গোষ্ঠী ও উল্টা গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব মিয়া (২৬)। তিনি ছিলেন মোল্লা গোষ্ঠীর। এরপর উল্টা গোষ্ঠীর লোকজন গ্রাম ছাড়লেও প্রতিদিনই তাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে।

সংঘর্ষের চারদিন পেরোলেও গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। চাতলপাড়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও এর সদস্য মাত্র ১০ জন। তারা বলছেন, কাঁঠালকান্দিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তারা সেখানে যেতে নিরাপদবোধ করছেন না। তাছাড়া হাওড়বেষ্টিত গ্রামটিতে যাতায়াতের মতো বাহনও তাদের নেই।

চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। হাওর এলাকা হওয়ায় যাতায়াতেও অসুবিধা। তাছাড়া নিহতের স্বজনরা টেঁটা-বল্লম নিয়ে পাহারা দেওয়ায় আমাদেরও নিরাপত্তা নেই।’ 

নাসিরনগর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার দোতলা বাড়ি সংঘর্ষের পর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়েছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। ফলে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোমবার কাঁঠালকান্দি গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পথে পথে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাচ, পোড়া টিন আর লণ্ডভণ্ড আসবাবপত্র। পোড়া, বিধবস্ত বাড়ি গ্রামজুড়ে। ২/৩টি পোড়া বাড়ি থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ৩৭টির বেশি বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আগুন দেওয়া হয় উল্টা গোষ্ঠীর লিলু মিয়ার বাড়িতে। গতকাল জয়নাল মিয়া ও মো. হাসানের বাড়িতে ভাংচুর করা হয়। নাজমুল মিয়ার বাড়ি থেকে ৬০ মণ ধান লুট হয়।

গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করিনি। তারপরও আমার বাড়িতে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন হামলা করে সব ভেঙে নিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে খাবারও নেই। হামলাকারীরা রান্নাঘরের চুলা, এমনকি টিউবওয়েলটিও তুলে নিয়ে গেছে।’ 

সাফিয়া বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমার এক ছেলে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছিল। কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন ঘরটা পুড়িয়ে দিল। আজ আমার সব শেষ।’

অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গলা থেকে স্বর্ণের চেইন পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এমনকি আমার ওষুধগুলোও নিয়ে গেছে। বারবার অনুরোধ করার পরও আমার হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যায়।’

কাঁঠালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সোমবার অন্তত ২১ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০০ জনের বেশিই অনুপস্থিত ছিল। আতঙ্কে একজন শিক্ষকও ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। 

প্রধান শিক্ষক তুহিনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও আতঙ্কে আছেন। অভিভাবকদের ফোন করেও সাড়া পাচ্ছি না।’ 

চাতলপাড় বাজারের ছয়টি দোকানেও ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে চালের আড়ত, মোবাইল ফোন এবং রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ