চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে একদিনও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির ২৪তম জাতীয় সম্মেলন এবং বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ বারবারই বলা হচ্ছে, একটা সময়সীমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের তিনটা মোটা দাগের দায়িত্ব- সংস্কার, বিচার ও ইলেকশন। তিনটিই কঠিন দায়িত্ব। ‌শুধু ইলেকশন করার জন্য আমরা দায়িত্বটা নিইনি।

দায়িত্ব পালন করতে পারছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা অনেক দূর এসেছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। সে রিপোর্টের উপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করছে। আমরা একটা নির্বাচনের সময়সীমা বলে দিয়েছি। বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগে ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল, এখন দুইটি হয়েছে। আগামীকাল থেকে ট্রায়ালের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়ায় শেষ করতে চাই। এতে সবার সহযোগিতা চাই।

আপনারা কোন চাপে আছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা পারফর্ম করতে পারছি কিনা- আমাদের বিবেচনা ও বিবেকে ওইটাই একমাত্র চাপ। আপনি চাইলেই হঠাৎ করে সচিবালয় যেতে পারবেন না। অথচ এ রকম অনেক দাবি আছে, যেগুলো রাস্তা বন্ধ না করে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সমাধান করা যায়।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে, তা নিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছে। ঢাকা শহর অচল হয়ে যাচ্ছে। সেই অচল অবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। আমরা ক্ষমতা নিইনি, জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি। এই দায়িত্বটা তখনই পালন করতে পারব যখন সকলের সহযোগিতা পাব। আমরা চিন্তা করেছি, আসলেই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারছি কিনা। বড় দাগে তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য যে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, এই প্রতিবন্ধকতা আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, আদৌ মোকাবিলা করতে পারবো কিনা, যদি মোকাবিলা করতে পারি- কীভাবে করব, যদি মোকাবিলা করতে না পারি তাহলে আমাদের কী করণীয় হবে- আমরা সকলে মিলে এটা চিন্তা করছি। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি তাহলে দায়িত্বে থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আর যদি না পারি, আমাদের নিজস্ব অনেক কাজ আছে, আমরা সেই কাজে ফিরে যাব। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্বে থাকাটা আর প্রাসঙ্গিক থাকছে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড স ম বর থ ক উপদ ষ ট র র জন র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ