বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে তিস্তামুখ ঘাট হয়ে ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত রেলযোগাযোগ পুনরুদ্ধার এবং যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি বাংলাদেশের পরিবহন খাতের জন্য বিশাল সম্ভাবনারও বটে। মূলত উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জে বহমান যমুনার ওপর সেতু নির্মাণের ফলে এটি উপেক্ষিত হয়। 
এতে উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলার লাখ লাখ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। বোনারপাড়া-ভারতখালী-তিস্তামুখ ঘাটে যেমন রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি দুটি রেলস্টেশন এবং দুটি ফেরিঘাটে শত শত মানুষের রুটি-রুজির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সাম্প্রতিক সামাজিক-অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির আলোকে রেলপথটি পুনর্বিবেচনা করলে বাণিজ্য, পরিবহন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। গত ৩০ মার্চ একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ‘বন্ধ তিস্তামুখ ঘাট ট্রেন সার্ভিস: রেল বিভাগের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন’ শিরোনামে বিষয়টি উঠে আসে। প্রায় দুই যুগ ধরে দেশের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এ রুট বন্ধ হয়ে যায়। এতে পরিত্যক্ত থাকা রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হচ্ছে।

যমুনার ওপর বাহাদুরাবাদে একটি পৃথক রেলওয়ে সেতু নির্মাণসহ এ রেলপথ পুনরুদ্ধার হলে রংপুর এবং উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার সঙ্গে আরও দ্রুত ও সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি বিদ্যমান রেলপথে চাপ কমাবে এবং পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য একটি কৌশলগত বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

প্রকল্পটি আধুনিক রেলপ্রযুক্তি সংযোজন করবে, যার মধ্যে বৈদ্যুতিককরণ এবং উচ্চগতির রেলপথ থাকা উচিত। বৈদ্যুতিক রেলপথ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে দক্ষতা বাড়াবে। বাহাদুরাবাদে দ্বৈত রেল ট্র্যাকবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেতু নিশ্চিত করবে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচল। উন্নত সিগন্যালিং, কেন্দ্রীভূত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্বয়ংক্রিয় রেল ক্রসিং ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা বাড়াবে।
এর উচ্চগতির ডিজেল-ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ সরবরাহ করবে উন্নত যাত্রীসেবা। এই রেলপথ পুনরুজ্জীবনের ফলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা পাওয়া যাবে। রেলপথটি উত্তরাঞ্চলের প্রবেশাধিকার বাড়াবে, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। রংপুরসহ আশপাশের কৃষক দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য ঢাকাসহ অন্যান্য বাজারে পরিবহনের সুবিধা পাবেন। উত্তরাঞ্চলের শিল্প, বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতের জন্য উন্নত লজিস্টিক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।

রেল সেতু ও ট্র্যাক নির্মাণে হাজার হাজার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। উন্নত রেলযোগাযোগের ফলে পথের আশপাশে নতুন নগরায়ণ হবে– যা আবাসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। রেলযোগাযোগের উন্নতির ফলে রংপুর ও আশপাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর পর্যটন বাড়বে।
এ রেল সেতুর মাধ্যমে যানজট হ্রাস পাবে। রেলযোগাযোগ পুনরুদ্ধারের ফলে সড়ক পরিবহনের ওপর নির্ভরতা কমবে। এতে যানজট ও যানবাহন থেকে সৃষ্ট দূষণ কমবে। এটি বৈদ্যুতিক রেলপথ ও আধুনিক কোচ পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্রদান করবে।

প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অনুমোদন ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা– প্রকল্পের হালনাগাদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি)– দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে নির্মাণ ও পরিচালনার 
জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা; ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন– স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষতি কমিয়ে মসৃণ ভূমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ– নতুন রেলপথকে 
জাতীয় রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত করে যোগাযোগের সুবিধা বাড়ানো।

ঢাকা থেকে রংপুর রেলযোগাযোগ পুনরুদ্ধার এবং যমুনার ওপর বাহাদুরাবাদ-তিস্তামুখ ঘাট রেল সেতু নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সুবিধা এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে নতুনভাবে রূপদান করতে পারে। এ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংহতি, টেকসই পরিবহন এবং উন্নত আঞ্চলিক সংযোগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে।

ড.

মো. শহিদুল ইসলাম: প্রাক্তন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)
dmsislam12@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ন র ওপর প রকল প পর বহন র জন য র লপথ

এছাড়াও পড়ুন:

আলোনসো যেভাবে রিয়ালকে ভয়ংকর এক দল বানালেন

সব ম্যাচ এক রকম হয় না। কিছু ম্যাচ শুধু জয়-পরাজয়ের হিসাব দেয় না, একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সেই ম্যাচের পর মনে হয়, দলের ভেতরে কিছু একটা বদলে গেছে। লা লিগায় এই মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ছিল তেমনই এক ম্যাচ। রিয়াল মাদ্রিদ সে জয়টা উদ্‌যাপন করেছিল দারুণভাবে। যদিও সেটা কোনো শিরোপা জেতার ম্যাচ ছিল না। বড় ব্যাপার হলো, এমন জয়েও রিয়ালের মধ্যে আত্মতুষ্টি চলে আসেনি। বরং আরও লড়াই চালিয়ে যেতে উজ্জীবিত করেছে।

এল ক্লাসিকোর পর রিয়াল গতকাল রাতে মাঠে নেমেছিল ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচেও জাবি আলোনসোর দল দেখিয়েছে একই তীব্রতা, শৃঙ্খলা আর জয়ের ক্ষুধা। সব মিলিয়ে এটা সম্ভবত আলোনসোর অধীনে রিয়ালের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। কারণ, এই জয় শুধু ভালো খেলার নয়, দলের মানসিকতা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রতীকও।

চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচের ১৩টিতে জিতেছে রিয়াল। লিগে ১১ ম্যাচের মধ্যে জয় ১০টিতে, চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনের তিনটিতেই। এর মধ্যেই নিজেদের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করে ফেলেছে আলোনসোর রিয়াল।

আরও পড়ুনএমবাপ্পের আরেকটি গোল, নাম লেখালেন ডি স্টেফানো, রোনালদোদের পাশে ২০ অক্টোবর ২০২৫

শুধু কৌশলগত দিক থেকেই নয়, দার্শনিক ও মানসিক দিক থেকেও দলে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। খেলোয়াড়রা এখন মাঠে আরও স্বতঃস্ফূর্ত, গতিময় এবং আত্মবিশ্বাসী। খেলোয়াড়েরা পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ায়ও যেন আগের চেয়ে আরও পরিণত। ফলাফল, রিয়াল এখন এমন এক দল, যারা প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার পাশাপাশি নিজেদের পরিকল্পনাও নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।

এমবাপ্পে ও বেলিংহামের উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ