সিনেমা তৈরির অপরাধে রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী তিনি। নিজের দেশেই গৃহবন্দী, নিষিদ্ধ, নিঃসঙ্গ। তবুও জাফর পানাহি থেমে যাননি। থামাননি ক্যামেরা। তার কাছে সিনেমা ছিল অস্ত্র, ছিল ভাষা, ছিল প্রতিরোধ। সেই সাহসী চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম জাফর পানাহি ।  যিনি এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘It Was Just an Accident’ ছবির জন্য জিতে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বর্ণপাম (Palme d’Or)।

২০১০ সালে “শাসকের বিরুদ্ধে প্রচারণা”র অভিযোগে ইরানি সরকার তাকে ২০ বছরের জন্য সিনেমা নির্মাণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাকে দেওয়া হয় গৃহবন্দীত্বের শাস্তি। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু পানাহি হার মানেননি। বরং নিজের ঘরকে বানিয়ে ফেলেন স্টুডিও, নিজের জীবনকে বানিয়ে ফেলেন কাহিনি।

২০১১ সালে তিনি গোপনে নির্মাণ করেন "This Is Not a Film", একটি অর্ধ-ডকুমেন্টারি যেখানে নিজের অবস্থান ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানান দেন বিশ্বকে। ছবিটি একটি পেনড্রাইভে করে একটি কেকের ভেতরে লুকিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হয়। সেখানেই এটি প্রদর্শিত হয় — একটি নীরব বিদ্রোহের জয়গান হয়ে।

সেই সাহসিকতা এবং অনমনীয়তা পানাহিকে করে তুলেছে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বারবার উঠে এসেছে ইরানি সমাজের কঠোর বাস্তবতা, নাগরিক স্বাধীনতা, নারীর অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ।

২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "It Was Just an Accident" — তার সর্বশেষ ছবিতে তিনি তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এক ভিন্নধর্মী চিত্র। পাঁচ বন্দি, যারা নিজেদের নির্যাতকের মুখ মনে রাখেন না — এ গল্পে ফুটে উঠেছে বাস্তবতার রূপক। ছবিটি যেমন তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক, তেমনি মানবিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সাহসী।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি বলেন, “ভিন্নমতের ইরানিদের প্রতি আমার অনুরোধ, চলুন আমাদের মতপার্থক্য ভুলে যাই, কারণ স্বাধীন ইরানই সবার আগে।” তার এ আহ্বান ছিল শুধু চলচ্চিত্রকারের না, ছিল একজন সংগ্রামী নাগরিকের কণ্ঠস্বর।

জাফর পানাহি প্রমাণ করে দিয়েছেন—একটি রাষ্ট্র হয়তো শরীরকে আটকে রাখতে পারে, কিন্তু একজন শিল্পীর চিন্তাকে নয়। সিনেমা যেমন তার প্রতিবাদ, তেমনি তার মুক্তির পথ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব জ ফর প ন হ চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২৬ হাজারের মতো শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে শুধু গাজা নগরীতে এই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এসব শিশুর জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।

গত মঙ্গলবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকার মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম। মঙ্গলবারই ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীতে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করেছেন।

ইনগ্রাম বলেন, আগস্টে গাজায় প্রতি আট শিশুর একজন মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিল, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ হার। গাজা নগরীতে এই অনুপাত প্রতি পাঁচে একজন। তিনি বলেন, গাজা নগরী থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষকে জোরপূর্বক সরানো হচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের প্রাণনাশ হতে পারে। ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মুখে শহরের পুষ্টিকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলি সেনারা বলছেন, দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ খাদ্য, ওষুধ ও তাঁবু পাবেন। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে ঘোষিত ‘মানবিক আশ্রয়’ এলাকাগুলোতেও হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইনগ্রাম বলেন, ‘গাজায় সাত শতাধিক দিনের যুদ্ধ-ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুকে এক নরক থেকে আরেক নরকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে, যা অমানবিক।’

জাতিসংঘের হিসাবে, গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকাগুলোর ১০ লাখ মানুষের প্রায় ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫