জাফর পানাহি প্রমাণ করলেন রাষ্ট্র শিল্পীর শরীরকে আটকাতে পারে চিন্তাকে নয়
Published: 25th, May 2025 GMT
সিনেমা তৈরির অপরাধে রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী তিনি। নিজের দেশেই গৃহবন্দী, নিষিদ্ধ, নিঃসঙ্গ। তবুও জাফর পানাহি থেমে যাননি। থামাননি ক্যামেরা। তার কাছে সিনেমা ছিল অস্ত্র, ছিল ভাষা, ছিল প্রতিরোধ। সেই সাহসী চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম জাফর পানাহি । যিনি এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘It Was Just an Accident’ ছবির জন্য জিতে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বর্ণপাম (Palme d’Or)।
২০১০ সালে “শাসকের বিরুদ্ধে প্রচারণা”র অভিযোগে ইরানি সরকার তাকে ২০ বছরের জন্য সিনেমা নির্মাণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাকে দেওয়া হয় গৃহবন্দীত্বের শাস্তি। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু পানাহি হার মানেননি। বরং নিজের ঘরকে বানিয়ে ফেলেন স্টুডিও, নিজের জীবনকে বানিয়ে ফেলেন কাহিনি।
২০১১ সালে তিনি গোপনে নির্মাণ করেন "This Is Not a Film", একটি অর্ধ-ডকুমেন্টারি যেখানে নিজের অবস্থান ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানান দেন বিশ্বকে। ছবিটি একটি পেনড্রাইভে করে একটি কেকের ভেতরে লুকিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হয়। সেখানেই এটি প্রদর্শিত হয় — একটি নীরব বিদ্রোহের জয়গান হয়ে।
সেই সাহসিকতা এবং অনমনীয়তা পানাহিকে করে তুলেছে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বারবার উঠে এসেছে ইরানি সমাজের কঠোর বাস্তবতা, নাগরিক স্বাধীনতা, নারীর অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ।
২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "It Was Just an Accident" — তার সর্বশেষ ছবিতে তিনি তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এক ভিন্নধর্মী চিত্র। পাঁচ বন্দি, যারা নিজেদের নির্যাতকের মুখ মনে রাখেন না — এ গল্পে ফুটে উঠেছে বাস্তবতার রূপক। ছবিটি যেমন তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক, তেমনি মানবিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সাহসী।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি বলেন, “ভিন্নমতের ইরানিদের প্রতি আমার অনুরোধ, চলুন আমাদের মতপার্থক্য ভুলে যাই, কারণ স্বাধীন ইরানই সবার আগে।” তার এ আহ্বান ছিল শুধু চলচ্চিত্রকারের না, ছিল একজন সংগ্রামী নাগরিকের কণ্ঠস্বর।
জাফর পানাহি প্রমাণ করে দিয়েছেন—একটি রাষ্ট্র হয়তো শরীরকে আটকে রাখতে পারে, কিন্তু একজন শিল্পীর চিন্তাকে নয়। সিনেমা যেমন তার প্রতিবাদ, তেমনি তার মুক্তির পথ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব জ ফর প ন হ চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই।
মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার।
যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।
সুচরিতা/শাহেদ