শরীয়তপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান
Published: 25th, May 2025 GMT
শরীয়তপুর জেলার দুটি প্রধান সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে পৌঁছেছে। ১০৬টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬১ জন শিক্ষক। ফলে একজন শিক্ষককে নিজের বিষয়ের পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
এতে শিক্ষার মান যেমন নিচে নেমে যাচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহও কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মর্নিং ও ডে শিফট মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১০০-এর বেশি। অথচ সেখানে ৫৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৩ জন শিক্ষক।
একই অবস্থা শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও। এই বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ১,০০০-এর বেশি হলেও, শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ২৮ জন। এখানে ৫৩টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ২৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে নিয়মিত ক্লাস নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা।
একাধিক বিষয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। এতে শিক্ষার মান যেমন নিচে নেমে যাচ্ছে, তেমনি পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।
পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম মাদবর বলেন, “আমাদের জীববিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেন একজন ইংরেজি শিক্ষক। উনি চেষ্টা করেন কিন্তু আমরা সব বুঝতে পারি না। পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী খাদিজা আফরোজ বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় এক বিষয়ের ক্লাস অন্য বিষয়ের শিক্ষক নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। আমরা নিয়মিত ও উপযুক্ত বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক পেতে চাই। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে কোনো বাধা না আসে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।”
শরীয়তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে দুই শিফটে পাঠদান চললেও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় তাদের লেখাপড়ার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদেরও অতিরিক্ত ক্লাস নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই দ্রুত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এই সংকট সমাধান করা জরুরি।”
পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ মাতুব্বর বলেন, “শিক্ষক সংকট আমাদের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে কিছুই শিখতে পারছে না।”
অতিরিক্ত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “অধিদপ্তর থেকে যখনই শিক্ষক সংকটের তালিকা চাওয়া হয়, আমরা তা পাঠাই। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না। এটিই সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ।”
ঢাকা/আকাশ/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জবিতে দুই শিক্ষক ও বাগছাসের নেতাদের উপর ছাত্রদলের হামলা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের ঘটনায় দুই শিক্ষক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রদলের নেতকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রফিক বিন সাদেক রেসাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিভাগে আটক রাখে। পরবর্তীতে তাকে মারধর শুরু করলে বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ড. একেএম রিফাত হাসান এবং সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম এগিয়ে আসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই শিক্ষককে গালিগালাজ ও হামলা করেন ছাত্রদলের নেতকর্মীরা।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ১ বছর পর তদন্ত শুরু
কুষ্টিয়ায় প্রসূতির মৃত্যু, ক্লিনিকের মালিকের বাড়িতে হামলা
এ সময় বাগছাসের দুই নেতা ফেরদৌস শেখ ও ফয়সাল মুরাদ এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মারধরে আহত ফয়সাল মুরাদ ও ফেরদৌস শেখকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভূয়া ভূয়া স্লোগান ও গালি দেন তারা। বর্তমানে আহতরা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে বাগছাসের জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “বাগছাসের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুককে শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ও শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে হামলার শিকার হচ্ছিলেন। আমি সামনে গিয়ে তাদের বলি, 'ভাই, ফারুক জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। তাকে ছাত্রলীগ হিসেবে ট্যাগ দিয়ে এভাবে মারধর করা ঠিক নয়।' কিন্তু আমার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা তাকে মারধর করে।”
তিনি বলেন, “আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যে ১২-১৩ জন ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, আমি তাদের একজন। গত ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে গুলি খেয়েছিলাম। সেই আমাকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে লাথি ও ঘুষি মারা হয়েছে। শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে তার কর্মীরা আমাকে কিলঘুষি মেরেছে। ছাত্রদলের যারা আমার এবং আমার জুলাইয়ের সহযোদ্ধাদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের বিচার করতে হবে। তারা প্রত্যেকে অছাত্র। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নামে অছাত্ররা সন্ত্রাস কায়েম করছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
তিনি আরো বলেন, “ট্যাগিং দিয়ে জুলাইয়ের আহত সহযোদ্ধাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। জুলাইয়ের গুলিবিদ্ধ ফেরদৌস হাসানকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে পিটিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের স্যাররা যখন আমাদের রক্ষার্থে এসেছে, তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, গালিগালাজ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এগুলো পাওয়া যাবে।”
হামলার শিকার হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ও জবি শাখার গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মূখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, “আমাদের এক জুলাই যোদ্ধাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে হামলা চালায়।”
তিনি বলেন, “তাকে শিক্ষকদের সহায়তায় বাঁচাতে এলে আমাদের উপর হামলা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে এ এস রিফাত হাসান ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম স্যারসহ বাগছাস জবি শাখার আহ্বায়ক আহত হন। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি এই হামলার বিচার চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আজ আমরা জানতে পারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেছে। এরা বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ঢুকবো এবং অরাজকতার সৃষ্টি করবে। এর আগে সাজিদ নামে একটি ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল এবং ক্যাম্পাসে এসেছিল। তারই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে এসে সংঘটিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের অরাজকতার পায়তারা চালাচ্ছে। আজ যারা এদের মাধ্যমে আহত হয়েছে আঘাতের শিকার হয়েছে, তারা এসে যখন এদের ধরতে যাই, তারাই উল্টো ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এ মুহুর্তে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সুরাহা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত সবার মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী