চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি, বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনাও
Published: 1st, July 2025 GMT
চট্টগ্রামে চার ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, কখনো ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর সেরে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জয়েন্টের ব্যথা থেকে যাচ্ছে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে নগরে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, সাধারণ ভাইরাস জ্বর (ফ্লু) ও করোনাভাইরাসজনিত জ্বর—এই চারটি জ্বরের প্রকোপ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে জ্বরের রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী সেবা নেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক হামিদুল্লাহ মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চিকুনগুনিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে জয়েন্টে ব্যথা, হাড় ফুলে যাওয়া, র্যাশ—এসব উপসর্গ থাকলে চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা বেশি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার জ্বরের রোগী আসছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের বেশির ভাগই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা রীতা চন্দ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে জ্বর ও গায়ে ব্যথা হয়েছিল। পরে জয়েন্ট ফুলে যায়। বাসায় চিকিৎসা নিয়েছি। এখন জ্বর নেই, তবে ব্যথা পুরোপুরি যায়নি।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ভেন্টিলেটর সচল কেবল একটিতে১২ জুন ২০২৫চিকিৎসকদের ভাষ্য, চিকুনগুনিয়ার জ্বর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কমে যায়। তবে জয়েন্টে ব্যথা দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় অনেক সময় রোগ শনাক্ত হয়।
চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। জুন মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১৭৬ জন, যা বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৫ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন।
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু উভয়ই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। তবে চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত প্লাটিলেট কমে না। অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘২০১৭ সালেও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল, তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কম ছিল। এবারে সেই চিত্রটাই দেখা যাচ্ছে। তবে ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।’
চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিনঅধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বিভাগীয় প্রধান, চমেক হাসপাতালসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ডেঙ্গুতে ভর্তি ছিলেন ১৩ জন রোগী।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণও ধীরে ধীরে বাড়ছে। জুন মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৩৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। ডেঙ্গুও তুলনামূলক কম। তবে বৃষ্টির কারণে যত্রতত্র পানি জমে থাকলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা হবে দুই হাসপাতালে, চমেকে আলাদা ওয়ার্ড১১ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র উপসর গ র জ বর জ বর র জয় ন ট
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় টেস্টে দলের সঙ্গে গুয়াহাটি যাবেন গিল
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিল খেলতে পারবেন কি না- এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। ২২ নভেম্বর গুয়াহাটির বারসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচকে সামনে রেখে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় ছিল গিলের চোটের অবস্থা।
কলকাতায় প্রথম টেস্ট চলাকালেই গিল ঘাড়ে আঘাত পান। দ্বিতীয় দিনের খেলাশেষে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। চোটের ধাক্কায় তৃতীয় দিনে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট করতে পারেননি। ১২৪ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করেও শেষ পর্যন্ত ৩০ রানে ম্যাচ হারে ভারত।
আরো পড়ুন:
‘একশটা টেস্টই যেন শেষ না হয়’
টি-টেন লিগে তাসকিন
চোট কাটিয়ে উঠছেন গিল:
সবচেয়ে আশার কথা- গিলের অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, তিনি এখন স্থিতিশীল, স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেন এবং ঘাড়ে আগের তুলনায় অনেক কম ব্যথা অনুভব করছেন। তার মাঠ ছাড়ার পর ভারতীয় দল যে বিপাকে পড়েছিল, এই উন্নতি তাদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গিল সম্ভবত দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের জন্য গুয়াহাটি সফরে যেতে পারেন। তিনি রাতভর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন, এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উন্নতির গতি বেশ ইতিবাচক।
প্রথম টেস্ট মাত্র তিন দিনেই শেষ হওয়ায় ভারতীয় দল আপাতত কলকাতাতেই অবস্থান করছে। মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেনে দলের একটি ঐচ্ছিক অনুশীলন সেশন থাকার কথা।
গুয়াহাটি যাত্রা নিয়ে সিদ্ধান্ত শিগগিরই:
আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বুধবার ভারতীয় দল উড়াল দেবে গুয়াহাটির উদ্দেশে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, সম্ভাবনা রয়েছে যে গিল তাদের সঙ্গেই ভ্রমণ করবেন। যদি ততটা প্রস্তুত না থাকেন, তবে একদিন পর বৃহস্পতিবার তিনি দলে যোগ দিতে পারেন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আরেক দফা মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে। আপাতত চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো- পূর্ণ বিশ্রাম। দ্বিতীয় টেস্টে তাকে পাওয়া যাবে কি না, তার সম্ভাবনা এখন “ফিফটি ফিফটি”।
প্রথম টেস্টে গিলের ব্যাটিং ছিল একদম ক্ষণিকের। ওয়াশিংটন সুন্দর আউট হওয়ার পর তিনি নামলেও মাত্র তিন বল খেলেই ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করেন এবং দ্রুত মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। তার অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে নেতৃত্ব দেন সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্ত।
ঢাকা/আমিনুল